পদ্মা ও বড়াল নদী কেন্দ্রীক অসংখ্য খাল ঘেরা সীমান্তবর্তী কৃষিনির্ভর উপজেলা রাজশাহীর চারঘাট। কিন্তু অযতœ, অবহেলা আর দখলদারদের দৌরাত্ম্যে অস্তিত্ব হারাচ্ছে এসব খালগুলো। এজন্য বর্ষাকালে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে সেচ খালের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রভাব খাটিয়ে খালের জায়গা দখল করে গড়ে তুলছেন একের পর এক অবৈধ স্থাপনা।
সংস্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কাগজে-কলমে উপজেলায় ছোট-বড় ২১টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে গঙ্গামতী খাল, ঝিনি খাল, ত্রিমহনী খাল, কাটা বড়াল খাল, শ্যামা সুন্দরী খাল শলুয়ার দহ খাল, ভাটপাড়া খাল বেশ উল্লেখ্যযোগ্য। তবে বাস্তবে এসব খালের অধিকাংশের অস্তিত্ব নেই। যে কয়টা খাল আছে সেগুলোও দখল-দূষণে এখন পানিসংকটে পড়েছে। এ উপজেলার কৃষকেরা ধান, আখ, আলু, পেঁয়াজ, রসুনসহ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তবে বছরের বেশির ভাগ সময় খালগুলোতে পানি না থাকায় ফসল ফলাতে নলকূপ থেকে সেচ দিতে হচ্ছে। তাই খালগুলো দখলমুক্ত ও পুনর্খননের দাবি কৃষকদের।
সরেজমিন দেখা যায়, চারঘাট-বানেশ্বর সড়কের পাশের পদ্মা ও নারদ নদীর খালটি একবারে শুকিয়ে গেছে। সেই খালের বেশিরভাগ অংশ ভরাট করে রাস্তা প্রশস্তকরণের কারজ করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। উপজেলার অন্য খাল গুলোতেও পানির কোনো অস্তিত্ব নেই।
এদিকে বড়াল নদী থেকে শলুয়ার দহ পর্যন্ত প্রশস্ত খালটিতে চলছে স্থানীয়দের দখল উৎসব। জানা যায়, অনেকে বাড়ি ও দোকানে যাতায়াতের পথ তৈরি করতে গিয়ে খালের অংশ ভরাট করছেন। অনেকে মাছের চাষ করছেন। এদিকে খালের বামুনদিঘী অংশে খাল ভরাট করে পিলার দিয়ে মোয়াজ্জেম, বানী, বাদশা, বুজ্জ, মোমিনসহ একাধিক ব্যক্তি বহুতল মার্কেট, দোকান ও রাজনৈতিক কার্যালয় গড়ে তুলছেন।
শলুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, এক সময়ের প্রশস্ত খালটি বছরের বেশির ভাগ সময় শুকিয়ে থাকে। খাল দখল করে ভবন নির্মাণ করায় পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যে যেভাবে পারছে খাল দখল করছে। পানি থাকলে কৃষকদের অনেক সুবিধা হতো। প্রশাসনের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।
স্থানীয় বাসিন্দা মাজেদা বেওয়া বলেন, আমি নৌকা দিয়ে আমার বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে আসতাম। এখন আর সম্ভব না। এখন খালটি শুকিয়ে গেছে। এই খালটিতে এখন পানি থাকে না। পানি থাকলে মানুষজন মাছ ধরে খেতে পারত এবং কৃষকরাও জমিতে পানি দিতে পারতেন। এখন খাল শুকিয়ে মরে গেছে।
খাল দখল করে দোকানঘর নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে বামনদিঘী এলাকার মোয়াজ্জেম আলী বলেন, আমরা একটা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলাম কিন্তু আপাতত সেটা বন্ধ রয়েছে। তবে আমাদের জন্য খালে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে এমনটা না। অনেকেই খাল দখল করে আছে।
উপজেলা নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের উপজেলায় ছোট-বড় ২০টির অধিক খাল কাগজে রয়েছে, বাস্তবে নেই। এই খালগুলো এখন দখল-দূষণ হয়ে গেছে। খালগুলো সচল থাকলে কৃষকেরা উপকৃত হতেন। এই খালগুলো সিএস নকশায় রয়েছে। নকশা ধরে এসব খাল উদ্ধার করে খনন করলে কৃষকেরা উপকৃত হবেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়তি রানী কৈরী বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা খাল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে কিছু জায়গায় তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। যদি কোথাও কোনো খাল দখল হয়, তাহলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’