রাজশাহীর তানোরে উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মরত কর্মচারীদের গ্র্রেড ১৪-১৬তম পদ পদবী পরিবর্তন ও বেতন গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সারাদেশের ন্যায় পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছে ভূমি মন্ত্রণায়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ের বাংলাদেশ ভূমি প্রশাসন সহকারী সমিতির তানোর শাখার নেতৃবৃন্দ। একই সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীরা প্রতিদিন ঘন্টাখানেক কর্মসূচি পালন শেষে তাদেরকে কাজে যোগদান করতে দেখা গেছে।
তবে, ভূমি অফিসে লোক দেখানো কর্মবিরতি ব্যানার ফটোসিয়েশন পর কর্মস্থলে বসে আড্ডা দিচ্ছেন খোঁদ সার্টিফিকেট সহকারী কাম নাজির শাহিনূর রহমান ও জমাসহকারী ইসমাত আরা। কিন্তু তাদের নিযুক্ত দালালরা কোন তদবিরে মোটা অঙ্কের উৎকোচ দেখালে গোপনে তাদের ফাইল এসিল্যান্ড থেকে পাশ করানো হচ্ছে বলে দাবি করেন বিশিষ্ট সমাজসেবক তানোর পৌর এলাকার আমশো মহল্লার বাসিন্দা আবদুল মালেক মন্ডল। সম্প্রতি গেলো মঙ্গলবার (১ মার্চ) থেকে আজ (৮ মার্চ)মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্ত লোক দেখানো কর্মবিরতি চলমান থাকার কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত সেবা প্রত্যাশীদের হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
এবিষয়ে তানোর পৌর এলাকার জিওল মহল্লার বাসিন্দা আবদুল জলিল ওরফে ম্যাজ্যা জানান, তাঁর ছেলে সানোয়ার হোসেন নামে ৪৪৮৩/২১-২২ নম্বর নামজারি কেসের চলতি বছরের ২০ জানুুয়ারী ডিসিআর পায়। সেইমতে জমাসহকারী ইসমাত আরা’র নিকট নোটিশ ও প্রস্তাবিত খতিয়ান চান। তখন ইসমাত আরা খরচের নামে ৫০০ টাকা দাবি করেন। তাঁর দাবীর প্রেক্ষিতে ৩০০ টাকা দেন জলিল। এতে তিনি খুশি না হয়ে খসড়া খতিয়ান বের করে লিখে দেন অনলাইনে ডিসিআর ফি পরিশোধ হয়নি। পরে নাজিরের দায়িত্বরত সার্টিফিকেট সহকারী শাহিনূর রহমানকে বিষষয়টি অবগত করা হয়। শাহিনূর রহমান ডিসিআর ও প্রস্তাবিত খসড়ার ফটোকপি নিয়ে জানান, এটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার দু’য়েক সপ্তা পরে ঠিক করা হবে। এরই মাঝে তিনি অফিসে গেলে কর্মবিরতি চলছে বলে শাহিন ও ইসমাত আরা এড়িয়ে চলছেন। কিন্তু আজও তাঁকে প্রস্তাবিত খতিয়ার দেয়া হয়নি।
তবে, অফিসের লোক মাধ্যমে আবদুল জলিল জানতে পারেন, জমাসহকারী ইসমাত আরা’র চাহিদা মত ঘুষ না দেবার কারণে ডিসিআর কপি স্ক্যালিং করে সংশ্লিষ্ট নামজারি কেসে এ্যাডজাস্ট করা হয়নি। একারণে অনলাইনে ডিসিআর ফি পরিশোধ হয়নি বলে দেখানো হচ্ছে। তবে, এসব বিষয়ে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কোন কথা বলতে রাজি হননি শাহিনূর রহমান ও ইসমাত আরা। পরে এসিল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
উপজেলা ভূমি অফিসে কলমা ইউনিয়ন থেকে আসা জুম্মুন করিম জানান, অফিস সহকারীদের কর্মবিরতির কারণে খুবই বিপাকে পড়েছি আমরা। একটা জরুরি কাজে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি অফিসের কর্মচারীরা বসে আড্ডা দিচ্ছেন। এতে সেবা প্রত্যাশীদের ভোগান্তি এখন চরমে। দ্রুত এই সমস্যা সমাধান না করলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে।
কর্মবিরতি পালনকারীরা জানান, গত বছরের ২৪ জানুয়ারি পদোন্নতি দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এক বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলে আছে সেই পদোন্নতি প্রক্রিয়া। অর্থ মন্ত্রণালয়ে আটকে যায় মাঠ প্রশাসনের সংস্কার। এবাপারে তানোর সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্বীকৃতি প্রামনিকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি।
পরে রাজশাহী অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ শরিফুল হকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভূমি প্রশাসন সহকারী সমিতির কর্মবিরতি শুধু তানোরে নয়, সারাদেশে হচ্ছে। তবে, লোক দেখানো কর্মবিরতির নামে অফিসে বসে আড্ডা ও নামজারি বা ডিসিআর এবং মিস কেসের নামে সরকারি ফি’র বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা সম্পূর্ণ বে-আইনি। এটা ঘুষ-বাণিজ্যের অপরাধ। কোন সেবাপ্রার্থী তানোর ভূমি অফিসে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হয়ে লিখিত অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানান এই কর্মকর্তা।