শৈলকুপার একটি হত্যা মামলায় ঝিনাইদহের বিজ্ঞ আদালত হত্যা মামলার আসামীদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ এই রিমান্ডের আসামীদের পুলিশ কারাগার থেকে প্রাইভেট কারে শৈলকুপা থানায় নিয়ে আসে। থানা গেইটের ভেতরে পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দিলেন বক্তব্য, নিজেকে দাবি করলেন নির্দোষ। আসামীর হাতে কোন হ্যান্ডকাফও ছিল না।
আসামী হলেন শফিকুল ইসলাম শিমুল, তিনি সদ্য শেষ হওয়া ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১০ নং বগুড়া ইউনিয়নের ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক। তার গ্রামের বাড়ি শৈলকুপার বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামে, পিতার নাম কুবাদ আলী। তার সাথে ছিল আরো ৪ রিমান্ডের আসামী।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ১০ নং বগুড়া ইউনিয়নে ৫ম ধাপে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ৪বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বিশ^াস, ঝিনাইদহ জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম শিমুল সহ অনেকে। তবে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হন শফিকুল ইসলাম শিমুল।
নির্বাচনের পর থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগে নানা বিরোধ আর দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এসবের জেরে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারী প্রকাশ্য দিবালোকে পেয়াজের ক্ষেতে হাতুড়িপেটা ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় কল্লোল খন্দকার নামের এক যুবক কে। সে বড়বাড়ি বগুড়া গ্রামের মৃত আকবর খন্দকারের ছেলে। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার বাদী হয়ে জানুয়ারী মাসের ১২ তারিখে ৮২ জন কে আসামি করে হত্যা মামলা( মামলা নং ৩) দায়ের করেন।
মামলায় নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুল কে করা হয় হুকুমের আসামী। হত্যাকান্ডের ঘটনায় প্রথম থেকেই মামলার আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অনিহা সহ বাদীর পরিবার নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে থানা পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেন লিখিত অভিযোগ। করা হয় সংবাদ সম্মেলনও। তবে আফান ও সজিব নামে এই মামলার মাত্র ২জন আসামি কে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আর শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাসির বিশ^াস, ফরিদ মুন্সি, আতিয়ার মিয়া, আখির মুন্সি নামে মামলার ৫জন আসামি চলতি মাসের ২তারিখ বুধবার আত্মসমর্পণ করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক তৌফিক আসামীদের ৫দিনের রিমান্ড চায় তবে বিজ্ঞ আদালত তাদের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। মামলার হুকুমের আসামি শফিকুল ইসলাম শিমুল সহ এই ৫জন কে ৮মার্চ মঙ্গলবার সন্ধায় পুলিশ রিমান্ডে আনা হয়।
স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সন্ধার পরপরই রিমান্ডের আসামীদের পুলিশের গাড়িতে নয় রাজকীয় স্টাইলে ব্যাক্তিগত গাড়ি বহরে ৩টি প্রাইভেট কারে চেপে আসামীদের আনা হয় শৈলকুপা থানাতে। সংবর্ধনার স্টাইলে এসব আসামীদের সমর্থক-কর্মীরা আগ থেকে থানার ভেতরে বাহিরে ভিড় জমায়। তারা থানার ভেতরেও শ্লোগান দিতে থাকে, মুক্তি দাবি করে। এ সময় শৈলকুপা থানার ওসি(তদন্ত) মহসীন হোসেন সহ পুলিশের অন্যান্য সদস্যদের আনাগোনা দেখা যায়। তবে বহিরাগতদের হঠাতে কোন তৎপরতা ছিল না। একপর্যায়ে ওসি(তদন্ত)মহসীন হোসেন তার হ্যান্ডমাইক তুলে দেন রিমান্ডের আসামি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শিমুলের হাতে। তিনি পুলিশ বক্সে দাঁড়িয়ে কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান, তার হাতে ছিল না কোন হ্যান্ডকাফও। তিনি হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য রাখেন, নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
এদিকে রিমান্ডের আসামীদের নিয়ে পুলিশের এমন কর্মকা-ে হতাশা আর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হত্যা মামলার বাদি নিহতের ছোট ভাই মিল্টন খন্দকার। তিনি বলেন, এমন ঘটনা নজিরবিহীন আমরা ন্যায় বিচার পাবো বলে মনে করছি না, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থাহীনতার কথাও জানিয়েছেন।
হত্যা মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তৌফিক জানান, আসামীদের কারো ব্যাক্তিগত গাড়িতে আনা হয়নি, গাড়িগুলো ভাড়া করা। আর আসামীদের হাতে হ্যান্ডকাফ না থাকা ও পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে বক্তব্য দেয়া প্রসঙ্গে বলছেন, বিষয়টি নিয়ে ওসি তদন্ত এবং থানা পুলিশ বলতে পারে বলে তিনি জানান।
শৈলকুপা থানার ওসি(তদন্ত) মহসীন হোসেন জানান, ভাড়া করা গাড়িতে আসামীদের আনা হয়েছে, আর হ্যান্ডকাফ না লাগিয়ে থানার পুলিশ বক্সে দাঁড়িয়ে পুলিশের হ্যান্ডমাইক ব্যবহার করে বক্তব্য দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে আসামীর হাতে হ্যান্ডমাইক তুলে দেয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর এড. ইসমাইল হোসেন বলেন, রিমান্ডের কোন আসামীর সাথে কখনো কখনো স্বজনরা দেখা করতে পারে, তবে অন্য কেও দেখা করার বিধান নেই।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, রিমান্ডের কোন আসামি এভাবে বক্তব্য দিতে পারে না। তিনি থানায় ছিলেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।