বাংলাদেশ পুলিশের রচনা, নির্দেশনা ও অভিনয়ে বাগেরহাটে “অভিশপ্ত আগস্ট” নামের এক নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। বুধবার (০৯ মার্চ) সন্ধ্যায় বাগেরহাট সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বেদনার্ত ঘটনা প্রবাহকে উপজীব্য করে নির্মিত নাটকটির ৫৯তম মঞ্চায়ন করা হয়। বেদনাবিদুর ঘটনার নাটকটি দেখতে দর্শকদের উপচে পড়া ভীড় ছিল ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে। পুলিশ সদস্যরা অভিনয়ের মাধ্যমে ১৫ আগস্টের সেই কালো রাতের করুণ কাহিনি ফুটিয়ে তুলেছেন। নিখুত অভিনয়ে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি দর্শকরা। সাধারণ দর্শকদের পাশাপাশি বাগেরহাট ২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, পুলিশ সুপার, কেএম আরিফুল হকসহ রাজনৈতিক দলীয় নেতৃবৃন্দ নাটকটি উপভোগ করেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট রাতে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেই কালরাতে বিপথগামী সামরিক অফিসারদের নারকীয় তান্ডব মর্মস্পর্শীভাবে তুলে ধরা হয়েছে নাটকটিতে। ঘটনাপ্রবাহে উঠে এসেছে খলনায়ক খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে ঘাতক চক্রের মিত্রতা। উপস্থাপিত হয়েছে মেজর ফারুক, রশীদসহ পর্দার আড়ালে থাকা মাস্টারমাইন্ডদের দেশ দখলের নীলনক্সা তৈরি এবং সে ষড়যন্ত্রে সা¤্রাজ্যবাদী পরিকল্পকদের ষড়যন্ত্রের বীজ বুনন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করণসহ নানা বিষয়।
ঘটনাপ্রবাহে দেখা মেলে আর দশটা সাধারণ দিনের মতোই হত্যাকান্ডের আগ পর্যন্ত ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের কর্মব্যস্ততার চিত্র। বাদ যায়নি শিশু শেখ রাসেলের করুণ আর্তনাদ ও তাকে বাঁচাতে পরীবানুর আকুতি। নাটকের দৃশ্যপটে উঠে এসেছে ৩২ নম্বর বাড়ির প্রতিটি মানুষ। সেই সূত্র ধরে উঠে এসেছে কর্মচারী রমা, পরীবানু, আবদুল থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তা সিদ্দিকুরের। নাটকে অসীম মমত্ববোধ। তুলে ধরা হয়েছে বাড়ির মানুষদের সাধারণ জীবনযাপনের চিত্রও।
বাগেরহাট ২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় বলেন, নাটকটিতে সেই দিনের ঘটনাটি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বুঝতে হলে জানতে হবে। সেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কাকডাকা ভোরে নৃশংসতার ঘটনাটি নতুন প্রজম্ম এই নাটকটির মাধ্যমে জানতে পারবে।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, পুলিশ ভাইয়েরা যে হৃদয় বিদারক মঞ্চস্থ করলেন, আসলে মন ছুয়ে গেছে। তারা চমৎকার ভাবে অনেক বিষয়গুলো নিয়ে আসছেন। নাটকটিতে অভিনয় শিল্পিদের ধন্যবাদ জানান।
বাগেরহাটে পুলিশ সুপার কেএম আরিফুল হক বলেন, নাটকটির মাধ্যমে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তি প্রজম্মকে বার্তাটি দেওয়া। তারা জানে না পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের ভয়াবহতা। অনেকে বইপুস্তক পড়ে জেনেছে। বাংলাদেশ পুলিশ নাটকের মাধ্যমে বার্তা দেশব্যাপী নতুন প্রজম্মকে জানাতে এই আয়োজন করেছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ সাদারণত অপরাধীদের নিয়ে কাজ করে।কিন্তু পুলিশেরও অনেক সৃজনশীল কাজ রয়েছে। দেশ প্রেম রয়েছে, রয়েছে সাধারণ মানুষের প্রতি মমত্ববোধ। যে নাটকটি প্রদর্শিত হয়েছে এর রচনা, নির্দেশনা, আলোকসজ্জা ও অভিনয় সবই করেছে আমাদের পুলিশ সদস্যরা।ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ পুলিশ দেশ ও জাতির কল্যাণেবাংলাদেশ পুলিশ সৃজনশীল কাজসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গবেষণালব্ধ প্রযোজনাটির পরিকল্পনা গবেষণা ও তথ্য সঙ্কলন করেছেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ পরিদর্শক মোঃ জাহিদুর রহমানের নির্দেশনায় এই নাটকে ৩০ জন পুলিশ সদস্য অভিনয় করেছেন।