শিশুকালে মা মারা গেছে আয়শার। কিছুদিন পরে বাবাও বিয়ে করে অন্য জায়গায় সংসার করছে। ফলে বৃদ্ধা দাদি নুরজাহানই তার এখন শেষ ঠিকানা। তবে সেখানেও ভাগ্য সাথে নেই তার। কারণ দাদীর স্বামীর কুলে আপন বলে আর কেউ নেই। ফলে অসহায় বৃদ্ধা দাদি আর নাতির মহা কষ্টের জীবন। দাদি অন্যের বাড়ি কাজ করে যে খাবার পায় তা ভাগাভাগি করে খেয়ে বেঁচে থাকে। চারপাশে তাদের মত ছিন্নমুল মানুষের অভাব নেই। তবে দাদি আর নাতির অসহায়ত্ব সকলকে হার মানিয়েছে। কেননা তাদের মাথা গোজার ঝুঁপড়ি ঘরও নেই। জরিনা নামের এক মহীয়সী নারী তাদেরকে জায়গা দিয়েছে নিজ ঝুঁপড়ি ঘরের বারান্দায়। এমনই মানবেতর জীবন যাপন তাদের। তারা থাকে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের রাখালগাছি ইউনিয়নের নরদহী গ্রামে।
দাদি নুরজাহান বেগম জানান,আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগে তার ভূমিহীন স্বামী মারা যায়। সে সময়ে মিন্টু নামের ছোট্র একটি ছেলে ছিল তার। তখনও তারা পরের জমিতে ঝুঁপড়ি ঘরবেধে বসবাস করতেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন,অন্যের বাড়িতে কাজ করে মিন্টুকে বড় করেছিলেন। আশা ছিল ভবিষ্যতে সে তাদের দেখবে। এমন আশায় ছেলেকে বিয়েও করিয়ে ছিলেন। কিছুদিন পরে নাতি আয়েশা জন্ম গ্রহন করে। কিন্তু ভাগ্য তার সাথে ছিল না। কেননা শিশুকালেই মা হারিয়েছে আয়েশা। কিছুদিন পরে তার বাবা মিন্টুও ফেলে চলে গেছে। এখন নিজের মত আয়শারও দেখার মত কেউ নেই। দাদি আর নাতি দুই অসহার কষ্ঠের জীবন তাদের। চাল চুলা কিছুই নেই তাদের। রাতে নিজেদের ঘুমানোর ঘরও নেই। অন্যের মহত্বে পরের ঝুঁপড়ি ঘরের বারান্দায় তারা থাকে। সকালে অন্যের বাড়িতে কাজে বেরিয়ে পড়ে সারাদিন পর সন্ধ্যায় ফিরে আসে। তারা যে খাবার দেয় তা নিয়ে এসে নাতির সঙ্গে ভাগাভাগি করে খায়।নুরজাহান বেগম আরও জানান,বর্তমানে তার বয়স ৫৭ বছর। এ বয়সে অসুস্থ শরীরে তেমন কাজ করতে পারিনে। সে কারণে গ্রামের মানুষও এখন আর কাজে নিতে চায় না। তবে গ্রামের একজন বাড়িতে কাজ দিয়ে মানবতা দেখিয়েছেন। তারা খাবার ও হাত খরচ বাবদ ২’শ করে টাকা দেয়। এমন অবস্থায় আয়শাকে গ্রামের মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিয়েছেন। যেখানে ঠিক মত খাবারই জোটেনা। সেখানে বই কিনে দেয়া সম্ভব হয় না। সে আশপাশের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বই এনে পড়ে।তিনি দুঃখ করে বলেন,বর্তমান হতদরিদ্রদের জন্য সরকার বিভিন্ন ভাতা দিচ্ছে। এজন্য ইউনিয়নে দফায় দফায় অসহায়দের তালিকা হয়েছে। চেষ্টা করার পরও সেই তালিকায় তার নাম ওঠেনি। আমরা দাদি -নাতি অসহায়র চরমসীমায় থাকলেও একটি বিধবা ভাতার কার্ডটিও জোটেনি। এখন ভাবনা আসে এগুলো তার মত মানুষের জন্য হয়তো নয়।
দাদি নাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নুরজাহান বেগম বলেন, বাবার ভিটেই ৮ শতক জমি পেয়েছি। আর কতদিন পরের বারান্দায় থাকবো। তাছাড়াও নাতি আয়শাও বড় হচ্ছে। ওই ভিটেই আমি মরার আগে আয়শার জন্য একটি ঝুঁপড়ি ঘর করে যেতে চাই। সে জন্য জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করছি। প্রতিদিন কাজ থেকে ফিরে একদলা করে মাটি এনে জমা করছি। তিল তিল করে গত তিন মাসে বেশ কিছু মাটি জমা করেছি। তা ছাড়াও গ্রামের অনেকে কাঠ বাঁশ দিয়ে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। সেখানেই মরার আগে নাতিকে নিয়ে একটু মাথা গুজতে চাই।
এ ব্যপারে রাখালগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মন্টু জানান, তার ইউনিয়নের মানুষ অত্যান্ত গরীব। নুরজাহান ও তার নাতি তাদের মধ্যে অন্যতম। শুনেছি তারা পরের ঘরের বারান্দায় থাকে। নরদহি গ্রামে নুরজাহানের বাবার ভিটেই ৮ শতক জমি আছে শুনছি। কিন্তু ঘর করার সামথ্য নেই। আবার বিধবা ভাতা পাননা ফলে তিনি সুযোগ পেলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কৌশিক খান জানান, দাদি আর নাতি এতোটা অসহায় পূর্বে কেউ জানায়নি। এ বছরের বিধবা ভাতার কর্মকা- আগামী জুনে আসবে। তখন বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন জানান, যার জমি আছে তিনি আর সরকারী খরচের ঘর পাবেন না। জমি আছে ঘর আছে প্রকল্প শেষ হয়ে গেছে। এখন যে প্রকল্প আছে সেটি হলো যার জমি নেই তিনি ঘরের সুযোগ পাবেন। তারপরও সুযোগ পেলেই দাদি নাতির বিষয়ে অগ্রাধিকার দিবেন।