ইদানিং বিশ^বিদ্যালয়গুলোর ছাত্রাবাস ও মিনি গেস্টরুমে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠর ছাত্রলীগের নির্যাতন বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কথায় কথায় ছাত্রলীগ কর্মীরা সাধারন ছাত্রদের নির্যাতন করে ছাত্রাবাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে চলেছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের মিনি গেস্ট রুমে নির্যাতনের শিকার হন শিক্ষার্থী আবু তালিব। তাকে ডেকে নিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী শেখ শান্তি আলম ও ইমদাদুল হক ওরফে বাঁধনের বিরুদ্ধে। ঘটনার খবর গনমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর গত ১১ মার্চ চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হল প্রশাসন। তবে তদন্ত শেষ হবার আগেই তদন্ত কমিটিতে থাকা একজন শিক্ষক আবু তালিবকে প্রতিপক্ষের সাথে মিমাংশা করার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে গনমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। অর্থাৎ ছাত্রলীগ কর্মীরা এতটাই শক্তিশালী যে তারা হল প্রশাসনকেও তোয়াক্কা করেন না।
অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে কবি নজরুল বিশ^বিদ্যালয়ে আশংকাজনক ভাবে বেড়েছে নির্যাতনের ঘটনা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ না করায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান হলের ৩২৪ নম্বর কক্ষে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের নির্যাতনের শিকার হন লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ নিহাদ। গত ১২ মার্চ অগ্নিবীনা হলের ২০৪নম্বর কক্ষে নির্যাতনের শিকার হন সংগীত বিভাগের শিক্ষর্থী সাগর চন্দ্র দে। তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বলে ঘটনা দু’টি জানাজানি হয়ে যায়। এর বাইরে অনেক নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও তা প্রকাশ হয়না। গত তিন বছরে ছাত্রলীগ কর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বিশ^বিদ্যালয়ের অন্তত: ৫০ জন শিক্ষার্থী। নির্যাতনের
পর অনেকেই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ লেখা-পড়া ছেড়ে দিতে উদ্যোত হন।
ওয়ালিদ নিহাদকে নির্যতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের চার কর্মীকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। কিন্তু বহিস্কার হওয়া এক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক রফিকূল হাসানের সুপারিশে ১১ মার্চ বিশ^বিদ্যালয়ের বনভোজনে অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া ওই চার ছাত্রলীগ কর্মীসহ মোট আটজনের হলের আসন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তারা হলেই থাকছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা এখনো নির্যাতনের আতংঙ্কে ভূগছেন।
বিশ^বিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কউন্সিলের সিদ্ধান্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের নির্যাতনের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারছেনা। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারছেন না। কাজেই এখন বিশ^বিদ্যালয় কতৃপক্ষের উচিত হল নির্যাতন বন্ধে আইন প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন করা। তা না হলে নির্যাতনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। লাঞ্চিত হতে থাকবে শিক্ষার্থীরা। এটা করো প্রত্যাশিত না। অন্যদিকে দলীয় সিদ্ধান্তেও নির্যাতন বন্ধের পথ সুগম হতে পারে। তবে তা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।