নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য সরকার ব্যাপক হারে ওএমএস কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী বোরো ফসল না ওঠা পর্যন্ত দেশব্যাপী এই কার্যক্রম চলবে। পাশাপাশি ওএমএস কার্যক্রম নির্বিঘেœ করার লক্ষ্যে জোরালো তদারকির ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রতি ট্রাকের সঙ্গে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কোন অনিয়ম ধরা পড়লে ডিলারশিপ বাতিলসহ প্রয়োজনে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণও করা হবে। মূলত চালের মূল্যের লাগাম টানতেই ১৭ মার্চ থেকে ওই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, এবার ওএমএস কার্যক্রমের প্রতি ট্রাকে একজন করে কর্মকর্তা তদারকির দায়িত্বে থাকবেন। আর ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রতি ৫টি ট্রাক তদারকি করবেন খাদ্য মন্ত্রণালয় অথবা খাদ্য অধিদফতরের একজন গেজেটেড কর্মকর্তা। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও গোপনে তদারিক করবেন। তারপরও কোন প্রকার অনিয়ম প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। চুরি বা ওজনে কারচুপিসহ যে কোন অপরাধে ডিলারশীপ বাতিলসহ ফৌজদারি মামলাও হতে পারে। আর তদারকিতে কোন রকমের ঘাটতি পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি বিভাগীয় ব্যবস্থাও হতে পারে। তাছাড়া প্রতি ট্রাক তদারকিতে এবার পুলিশকে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সারাদেশে প্রতিদিন ৫৪টি ট্রাকে করে চাল-আটা মিলে ২১৬ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তার মধ্যে ১৮৯ মেট্রিক টন চাল ও ২৭ মেট্রিক টন আটা রয়েছে। দেশের ৫৪টি ট্রাকের মধ্যে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকায় ৩০টি ট্রাকে প্রতিদিন ১২০ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। তার মধ্যে শুধু ঢাকা মহানগরিতে প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ মেট্রিক টন চাল এবং ১৫ মেট্রিক টন আটা। দাছাড়া গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা ও চট্টগ্রামে প্রতিদিন ৪টি করে ট্রাকে চাল-আটা মিলে মোট ৯৬ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য খোলা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। তার মধ্যে ৮৪ মেট্রিক টন চাল এবং ১২ মেট্রিক টন আটা রয়েছে। ওই কর্মসূচীর আওতায় প্রতিদিন জনপ্রতি ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য কিনতে পারবেন। আর বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে আরো ৬৫টি ট্রাকে করে খোলা বাজারে খাদ্য শস্য বিক্রি শুরু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট ১১৯ ট্রাকে করে প্রতিদিন ৪৭৬ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য খোলা বাজারে বিক্রি করা হবে। তার মাধ্যমে প্রতিদিন ৪১৬ দশমিক ৫ মেট্রিক টন চাল এবং ৫৯ দশমিক ৫ মেট্রিক আটা বিক্রি হবে।
সূত্র আরো জানায়, রাজধানী ঢাকা মহনগরিতে আরো ২০টি ট্রাক সেল বাড়ছে। তাছাড়া গাজীপুরে ৪টি, নারায়ণগঞ্জে ৪টি, বরিশালে ৩টি, রাজশাহীতে ৪টি, খুলনায় ৬টি এবং চট্টগ্রামে ৭টি ট্রাকে ওএমএস পণ্য বিক্রি করা হবে। পাশাপাশি নতুন করে শুরু হচ্ছে ময়মনসিংহতে ৪টি, সিলেটে ৪টি, রংপুরে ৫টি এবং কুমিল্লায় ৪টি করে ট্রাক পণ্য বিক্রি করবে। নতুন ওই ২১টি ট্রাকে করে প্রতিদিন মোট ৮৪ মেট্রি টন খাদ্যশস্য খোলা বাজারে বিক্রি হবে। তার মধ্যে চাল বিক্রি হবে ৭৩ দশমিক ৫ মেট্রিক টন এবং আটা ১০ দশমিক ৫ মেট্রিক টন।
এদিকে বিশেষজ্ঞরদের মতে, প্রতিদিন ৪৭৬ মেট্রিক টন চাল খোলা বাজারে বিক্রির ঘটনা নতুন। ওই বিশাল পরিমাণ চাল বাজারে এলে আশা করা যায় বাজার নিম্নমুখী হবে। তাছাড়া খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী, ফেয়ার প্রাইস কার্ডসহ সরকারের নানাবিধ কর্মসূচীতে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, নিম্ন আয়ের মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার ব্যাপক হারে ওএমএস কার্যক্রম শুরু করেছে। তাতে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল এবং ১৮ টাকা কেজি দরে আটা বিক্রি করা হবে। নতুন ধান না ওঠা পর্যন্ত ওই কার্যক্রম চলবে। তাতে দেশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে।