সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্বদিচ্ছা, মেলার জায়গা বেদখলসহ বিভিন্ন কারণে ৪শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস কপিলমুনি বারুণীমেলা বিলুপ্তির পথে। কপোতাক্ষ নদ খননে জীবন ফিরে পেলেও ফেরেনি ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি বারণীমেলার। বিগত কয়েক বছর সহ এবারও কোনো আনুষ্ঠিকতা ছাড়া পূণ্যার্থীরা খুলনার পাইকগাছায় কপিলমুনি কপোতাক্ষ নদের স্নানঘাটে ঐতিহ্যবাহী মহাবারুণীর স্নানোৎসব পালন করছে। প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কপিলমুনি কপিলেশ্বরী কালী মন্দির স্নানঘাটে পালন করবে বারুণীর স্নানোৎসব। নানাবিধ সংকটে এবারো কোনো প্রকার মেলার আয়োজন ছাড়াই শুধুমাত্র স্নানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে বারুণী স্নানোৎসব। কপিলমুনি বারুণী স্নান ইতিহাস থেকে জানাযায়, প্রায় ৪শ’ বছরেরও বেশি সময় আগে কপিল দেব নামে এক মুনি সুন্দরবন উপকূলীয় কপিলমুনি কালী মন্দির সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের তীরে তপধ্যানে মত্ত থেকে সিদ্ধিলাভ করেন। তার সিদ্ধিলাভের দিনই সেই স্মরণাতীত কাল থেকে জনপদের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কপিলেশ্বরী কালী মন্দির স্নানঘাটে বারুণী স্নান করে আসছেন। কথিত আছে, কপিল দেবের এক ভাই জরাসন্ধ ১শ’ নৃপতিকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে নরমেধ যজ্ঞ শুরু করেন। এলক্ষ্যে তিনি হত্যাকান্ড শুরু করলে তার বৈমাত্রেয় ভাই কপিল তাকে প্রশমনে ঈশ্বরের সাহায্য প্রার্থনায় সিদ্ধিলাভের আশায় বিভিন্ন স্থানে তপধ্যান শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি কপিলেশ্বরী কালীবাড়ী স্নানঘাট সংলগ্ন বটবৃক্ষের মূলে বসে তপধ্যান শুরু করেন এবং সিদ্ধি লাভ করেন। ঐসময় তিনি যে সকল স্থানে তপধ্যান করে ছিলেন, সেই সকল স্থানে প্রতি বছর মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বারুণী স্নানোৎসব পালন করে আসছেন। তাদের বিশ্বাস মতে, এই তিথিতে গঙ্গার জল এই স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়, গঙ্গার জলে স্নান করলে সারা বছরের পাপ মোচন হয়। আর সেই লক্ষ্যে জনপদের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা স্মরণাতীত কাল থেকে স্নানোৎসব পালন করেন। তবে অনেকে মনে করেন, বরুণ জলের দেবতা, আর বারুণী তার স্ত্রী। তাকে তুষ্ট করতেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বারুণী স্নান করে থাকেন। তবে মতান্তর থাকলেও স্মরণাতীতকাল থেকে কপিলেশ্বরী স্নানঘাটে পালিত হয়ে আসছে বারুণী স্নানোৎসব। এ ছাড়া স্নানোৎসবকে ঘিরে কপিলমুনিতে অনুষ্ঠিত হতো বারুণী মেলা। মেলা উপলক্ষে একসময় যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ, নাগর দোলা, মৃত্যুকূপসহ চিত্ত বিনোদনের নানা পসরার সাথে বসত বিভিন্ন খেলনা, কাঠের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় নানা পসরায় সাজানো হতো মেলা। আসতো দূর-দুরন্ত থেকে মানুষ। তবে কয়েক বছর আগে থেকে স্থানীয়দের সমন্বয়হীনতা ও রাজনৈতিক অস্থীরতা, জায়গার অভাবসহ নানা সংকটে দীর্ঘ দিন বন্ধ রয়েছে বারুণী মেলা। মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী অথাৎ ৩০ মার্চ স্নানোৎসব। বারুণী মেলা চলত এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে পক্ষ কাল কিংবা ১ মাস পর্যন্ত। বারুণীস্নান সনাতনীরা করলেও বাঙালি সংস্কৃতির সাথে মিলে-মিশে মেলা উদযাপন করতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদের সকল ধর্ম বর্ণের মানুষরা। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে মেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে ৪শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বারুণী মেলা। স্থানীয় কয়েকজন দ্বায়িত্বশীল রাজনীতি ও ধর্মীয় নেতা ঐতিহ্যবাহী মেলাটিকে আগের ন্যায় ফিরিয়ে আনতে সনাতন ধর্মাবলম্বী থেকে শুরু করে সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।