মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে কর্মশালায় জানানো হয়েছে, দেশে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করে নতুন ধরনের মাদক পাচার ও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখনো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। দেশে কি পরিমাণ মাদকাসক্ত রয়েছেন তারও হিসাব নেই। স্বাস্থ্য বিভাগ এক হিসেবে জানিয়েছিলো এ সংখ্যা ৩৫ লাখ। আবার একটি এনজিও জরিপ করে জানিয়েছিলো ৭০ লাখ। এখন ঘরে ঘরে এই মাদকাসক্তের সমস্যা ছড়িয়ে পড়ছে। এজন্য মাদক থেকে মুক্তির জন্য সচেতনতা তৈরির কোন বিকল্প নেই। পরিবার থেকেই এ সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তৃনমূল থেকে এ ব্যাপারে সুপারিশ আসতে হবে। সেটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বুধবার সকাল ১০টায় শহরের অম্বিকা হলে এ কর্মশালা শুরু হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাধ্যতামুলক ডোপটেস্টের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মাদক কখনো নির্মূল হতে পারেনা। পর্যটন স্পটে সীমিত পরিসরে সফট ড্রিংক থাকতে পারে তবে সবার জন্য মাদক উন্মুক্ত হতে পারেনা। কর্মশালায় মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলনের সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক জাফরুল্লাহ কাজল। স্বাগত বক্তব্য দেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ফরিদপুরের উপপরিচালক শামীম হোসেন।
কর্মশালায় মাদকদ্রব্যের বিস্তারে আইনি দুর্বলতার বিষয়টি তুলে ধরেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান। তিনি বলেন, মাদক মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর আসামীদের ছাড়িয়ে নিতে আগে থেকেই উকিল ঠিক করা থাকে। এমনও রয়েছে পুরো পরিবারের সকলেই একাধিক মাদক মামলার আসামী। প্রতিদিনই তাদের কোর্টে কারো না কারো হাজিরা থাকে। মাদকাসক্তদের ডোপটেস্টের জায়গাটা সহজ করা দরকার। অনেকসময় প্যাথলজিস্ট পাওয়া যায়না। সময় সংক্ষেপের কারণে তাই অনেক সময় থার্টি ফোরে চালান করতে হয়। যারা মাদকের পেট্রনাইজ করছে তাদের বিরুদ্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে পুলিশ সুপারের বক্তব্যের সাথে দ্বীমত পোষণ করে প্রবীণ আইনজীবী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, আইনের বাঁধা ধরা নিয়মের মধ্যেই আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসে। আইনজীবীদের দোষ দিয়ে লাভ হবে না। এজন্য স্কুল-কলেজে, পাড়া-মহল্লায় সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপক কুমার রায়ের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরো বক্তব্য দেন ফরিদপুর পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ অসীম কুমার সাহা, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ প্রমুখ। ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন রায় সহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাগণ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।
পৌর মেয়র অমিতাভ বোস তার বক্তৃতায় বলেন, আমার নামে একটি মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলা হলে জামিন পাইনা অথচ মাদকস¤্রাজ্ঞী শাহেদা ১৭ মামলা নিয়েও আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে গ্রেফতারের পরেরদিনই আসামিরা মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সিভিল সার্জন, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা দরকার। আমাদের সন্তানেরা কি করছে সেটি দেখা দরকার। তখনই মাদক নির্মূল সম্ভব। এজন্য সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।
কর্মশালায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তাগণ বলেন, দেশে প্রতিবছরই মাদকের উত্থান হচ্ছে। মাদকাসক্তদের সংখ্যাও বাড়ছে। কি পরিমাণ আসক্ত, কত পরিমাণ এর সাথে জড়িত, কত পরিমাণ এর পেট্রনাইজ করে তার কোন পরিসংখ্যান জানা নেই।
কর্মশালায় মাদকের চাহিদা, সরবরাহ ও অপব্যবহারজনিত ক্ষতি হৃাসকল্পে গৃহিত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা ও গ্রুপভিত্তিক প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়ার্ডকে সর্বনিম্ন একক স্তর ধরে মাঠ পর্যায় থেকে মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে কর্মপরিকল্পনা নেয়া হবে। বছর জুড়ে প্রতিটি ওয়ার্ডে কোন না কোন মাদকবিরোধী কার্যক্রম চলবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে।