বিল্লাল হোসেন (৩৫) গজারিয়া উপজেলার ভিটিকান্দি গ্রামের দরিদ্র আচার বিক্রেতা আলী মিয়ার ছেলে। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছোটবেলা থেকে মাকে নিয়ে আলাদা থাকত বিল্লাল। বাবা মারা যাওয়ার পরে অভাবের তাড়নায় বাসের হেলপারি চাকরি নেয়। এরপরই তার জীবন নতুন মোড় নেয় হেলপারি ছেড়ে দিয়ে স্থানীয় একটি কারখানায় মুরগির ডিম সাপ্লাইয়ের কাজ নেয় সে। এরপর মাদক ব্যবসা, তৈরি পোশাকশিল্পের মালামাল চুরি, টাকার বিনিময়ে অন্যের জমি দখল, ছিনতাই, ইভটিজিং এর মত নানান অভিযোগ আসতে থাকে বিল্লাল এর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তৈরি পোশাকশিল্পের মালামাল চুরির মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জের হাতে বিলাল আটক হওয়ার পরে তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা এলাকায়। বিল্লালে ভয়ে চুপ করে থাকা এলাকাবাসী এখন আস্তে আস্তে মুখ খুলতে শুরু করেছে। অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে বিল্লালের উপার্জিত সকল টাকা বাজেয়াপ্ত করার দাবী এলাকাবাসীর।
তৈরি পোশাকশিল্পের মালামাল চুরি ঘটনায় আটক হওয়া আসামি বিল্লাল এর ব্যাপারে পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ঢাকা থেকে মালামাল সড়কপথে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের নেওয়ার পথে অতি অল্প সময়ে দ্রুততার সঙ্গে পূর্ব থেকে ঠিক করে রাখা লেবার দ্বারা কাভার্ডভ্যানের সিল ট্যাগ অক্ষত রেখে কাভার্ডভ্যানের দরজার সিটকানির নাট খুলে গার্মেন্টেস পণ্যের এক তৃতীয়াংশ মালামাল নামিয়ে রাখতো বিল্লাল। প্রতিটি ট্রাক গোডাউনে প্রবেশ করিয়ে মালামাল সরানো বাবদ আসামি বিল্লাল ৫-১০হাজার টাকার বিনিময়ে চোরাই কাজে সহযোগিতা করতো। আসামি বিল্লাল গ্রেফতারের আগে তার ভাড়াকৃত গোডাউনে গড়ে প্রতি মাসে এমন ৫-৬ টি চোরাই কাজ সম্পন্ন করতো। সোনারগাঁয়ে আসামি বিল্লালের ভাড়াকৃত গোডাউনে কাভার্ডভ্যান থেকে নামিয়ে রাখা মালামাল পরবর্তীতে আসামি রায়হানের মাধ্যমে চক্রের মধ্যস্ততাকারী আসামি কাউসারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হতো। রাজধানীর মাতুয়াইল, মিরপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং সোনারগাঁয়ে আসামিদের গোপন গোডাউন ছিল। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কৌশলে এ কাজ করে আসছে।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার এসআই শামীম বলেন, বিল্লাল অতি ধুরন্ধর একজন অপরাধী। তাকে ধরার জন্য গত নভেম্বর মাস থেকে বেশ কয়েক বার চেষ্টা করেছেন তারা। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হলেও তাকে আটক করা যায়নি প্রত্যেকবারই বিল্লাল তার অবস্থান বদল করে ফেলেছে। মাদক মামলায় আটক হওয়া বেশ কয়েকজন আসামি বিল্লালের নাম বলেছে তাদের ধারনা বিল্লাল একজন বড় মাপের মাদক ব্যবসায়ী। সেজন্য তাকে আটকে মরিয়া চেষ্টা চালায় ফতুল্লা থানা পুলিশ যদিও তাকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
বিল্লাল আটক হওয়ার খবরে স্বস্তি বিরাজ করছে তার নিজের এলাকায়। তার কৃতকর্মের জন্য দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি এবং অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত পূর্বক তার পেছনে যারা রয়েছেন তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভিটিকান্দি গ্রামের বিল্লালের প্রতিবেশী এক ভাড়াটিয়া নারী জানান, স্থানীয় একটি কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন তিনি। বিল্লাল তাকে নানাভাবে কুপ্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করতো তার প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে শীলতাহানি করার হুমকি দেয় সে। বিষয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিকে জানালে তারা স্থানীয়ভাবে তা সমাধান করে দেন।
আরেক ভুক্তভোগী ভবেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহিদ মোহাম্মদ লিটন বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিল্লালের নেতৃত্বে তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। শুধু গাড়ি ভাঙচুর নয় তার কর্মী সমর্থক মারধর তাদের বাড়ি ঘরের সামনে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে বিল্লাল। এর আগের ইউপি নির্বাচনেও ৫৬নং ভিটিকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করতে সাধারণ ভোটারদের উপর ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে বিল্লাল ও তার লোকজন। সে ঘটনায় সে ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।
এলাকাবাসী জানায়, এরকম কোন অপকর্ম নেই যা বিল্লাল করতো না। কেউ ড্রেজার দিয়ে তার বাড়িতে বালি ভরাট করতে চাইলেও বিল্লালকে আগে টাকা দিয়ে তারপর কাজ শুরু করতে হতো। বসুন্ধরা টিস্যু পেপার ইন্ডাস্ট্রি, জে এম আই ভ্যাকসিন ইন্ডাস্ট্রি সহ বেশ কয়েকটি কারখানার অসংখ্য শ্রমিকের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বিল্লালের বিরুদ্ধে।
অবৈধ এসব কর্মকা-ের মাধ্যমে পরিমাণ অর্থের মালিক হয়ে গেছে বিল্লাল বলে ধারণা এলাকাবাসীর। তারা বলেন, আটক বিল্লাল ভবেরচর ইউনিয়ন পরিষদের ০২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা ইলিয়াস মেম্বারের আত্মীয়। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইলিয়াস মেম্বারের নির্বাচনের যাবতীয় ব্যয় বিল্লাল বহন করেছে। ইলিয়াস মেম্বারের জামাতা জুয়েল মিয়ার কাছে তার অনেক টাকা রক্ষিত আছে। পোশাক চুরির টাকায় দিয়ে কয়েকদিন আগে একটি জমি কিনতে চেষ্টা করেছিল। ঢাকা-কুমিল্লা রুটে তার একটি বাস রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানায়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশি তদন্তের দাবি করেছে তারা।
বিষয়টি সম্পর্কে গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রইছ উদ্দিন জানান, গজারিয়া থানা তার বিরুদ্ধে যে কটা মামলা রয়েছে সবগুলি তিনি জামিনে রয়েছেন বিধায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।