ত্বীন ফল এক জাতীয় পুষ্টি সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল। দেশীয় ডুমুরের মত দেখতে এই ফলটি মুলত মরু অঞ্চলের ফল। মরু অঞ্চলে সাধারণত এই জাতীয় ফলের চাষবাদ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এই ত্বীন ফলের চাষাবাদের কথা কোন সময় কেউ চিন্তা করেনি। এই ফলের বাজার মূল্য অনেক বেশি। প্রতি কেজি ত্বীন ফলের মূল্য ৮ শ থেকে এক হাজার টাকা। দেশের অপেক্ষাকৃত বিত্তশালীরা এই ফলের সাথে পরিচিত। বিশেষ করে যারা মধ্য প্রাচ্য, মরু দেশ কিংবা উন্নত দেশে বসবাস করেন অথবা এসব দেশ ভ্রমন করন। দেশের কিছু প্রতিষ্ঠিত আমদানিকারক উল্লিখিত উৎপাদনকারী দেশ থেকে ত্বীন ফল আমদানি করেন। নামকরা হোটেলে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ এই ফল সৌখিন বিত্তশালীদের খাবার উপাদান হিসাবে পরিবেশন করা হয়। চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায় প্রথম ব্যতিক্রমী এই ফলের চাষাবাদ শুরু হয়েছে।
হাটহাজারী পৌরসভার আলমপুর গ্রামে ফতেয়াবাদ নন্দীরহাট এলাকার মঈনুল ইসলাম রিমন নামে এক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শে ত্বীন ফলের চাষাবাদ শুরু করেছে। তিনি এই জাতীয় ফলের নতুন চমক লাগানো কৃষি উদ্যোক্তা। বার্ষিক ভাড়ায় জমি মালিক থেকে জমি নিয়ে পলি মালচিং পদ্ধতিতে গত জানুয়ারি মাসে জমিতে বীজ বপন করেছেন। ত্বীন ফলের চাষাবাদের সাধারণত কলম চারা রোপন করা হয়ে থাকে। তিনি ২২ শতক জমিতে ৪শ চারা বপন করেছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানান জমিকে মালচিং পদ্ধতি অবলম্বন করে আড়াই / তিন ফুট দূরত্বে এই ফলের চারা রোপন করার নিয়ম। এই ফলের গাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ বছর ফল উত্তোলন করা যায। একবার মাত্র গাছ রোপন করে দীর্ঘদিন ফল আহরণ করার সুযোগ রয়েছে। গাছ গুলো বড় হওয়ার সুযোগ থাকলেও অধিক ফল উৎপাদন ও আহরনের স্বার্থে গাছ গুলো দুই ফুটের বেশি লম্বা হতে দেওয়া যাবে না। লম্বা হওয়া শুরু করলে গাছের মাথা কেটে দিতে হবে। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে গাছে ফল আসা শুরু করে মে মাসে ফল উত্তোলন করা যায। থিন ফলের চাষাবাদে জমিকে সার্বক্ষণিক সেচ সুবিধা থাকতে হবে। এমনকি প্রতিটি গাছের সাথে সেচের পানির লাইন রাখতে হবে। এজন্য চাষাবাদকৃত জমির পাশে সেচের সংযোগ সুবিধা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে কারণে যেখানে ৩শ লিটার সেচের জন্য পানি প্রয়োজন সেখানে মাত্র ৪০ লিটার পানিতে সেচ হয়ে যায়। অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে এই ফলের চাষাবাদ করতে হবে। এই জাতীয় ফলের গাছ অধিক পানি সহ্য করতে পারেনা। তাই বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি নিস্কাষনের জন্য গাছের দুই সারির মাঝ খানে নালা রাখতে হবে। আবার এই নালায় শুস্ক মৌসুমে সাথী ফসল হিসাবে বিভিন্ন জাতের সব্জীর চাষাবাদ করা যায়। এতে করে দেশে সব্জীর চাহিদা ও পুরন হবে। নতুন জাতের এই ফলের বাগান দেখতে প্রতিনিয়ত লোকজন সেখানে যাচ্ছে। ত্বীন ফল তরকারি ও সব্জি হিসাবে কাঁচা খাওয়া যায়। অবশ্য কাঁচা বিক্রি করলে দাম বেশী পাওয়া যাবেনা। তাই পরিপুষ্ট ও পাকা হলে খেকে খুবই মজা ও সুস্বাদু।
হাটহাজারী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আল মামুন সিকদার জানান, হাটহাজারী উপজেলায় কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। ত্বীন ফল মুলত মরু অঞ্চলের ফসল। এই ফসলের অনন্ত ২ শ ৭০ প্রকারের জাত রয়েছে। এখানে মাত্র এক প্রকারে জাতের চাষাবাদ করা হয়েছে। লাভ জনক ফলন হলে তিনি আশা করেন অনেকেই ত্বীন ফলের চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠবে। মেধাবী জাঁতি গঠনে প্রতিনিয়ত প্রত্যকজনকে নিদিষ্ট পরিমান ফল খেতে হবে। আর এই ফল আমদানি করে দেশের লোকজন খাওয়ানো বিরাট চ্যালেঞ্জ। ফল আমদানি করকে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে চলে যাবে। তাছাড়া আমদানি করা ফল সহজ লভ্য হবে না। আর বাড়তি দাম দিয়ে অনেকের পক্ষে ফল খাওয়া সম্ভব হয়ে উঠবে না। তাই দেশে কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে যদি ফল বাগান করার ব্যাপারে লোকজনকে উদ্যোগী ও আগ্রহী করা যায়, তাহলে দেশ ফল সহজলভ্য হবে। দেশের মানুষ স্বস্তা দামে ফল কিনে খেতে পারবে। পুষ্টির চাহিদা ও পুরন হবে।
সহজে ফল পাওয়া গেলে যে কোন মানুষে নিত্য দিনের পুষ্টির চাহিদা পুরন হবে। এইজন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ এই হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন স্হানে ফলের বাগান সৃষ্টির জন্য কাজ করছে। এজন্য কৃষি বিভাগ উদ্যোক্তদের প্রয়োজনীয় সহযোগী ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। তিনি প্রতিনিয়ত উদ্যোক্তাদের বাগান পরিদর্শন করে কোথাও কোন সমস্যা হলে তিনি নিজে সরোজমিন গিয়ে বাগান তদারকি করছে। মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদে সেচের খরচ অভাবনীয় ভাবে কমে যাবে। তাছাড়া বিষ মুক্তভাবে জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদে আগ্রহী করতে উপজেলা কৃষি বিভাগ উপজেলার আওতাধীন বিভিন্ন কৃষি ব্লকে কাজ করছে। কৃষকদের নানাভাবে উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে উপজেলা প্রত্যক এলাকায় মাঠ দিবসের আয়োজন করে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। সরকারের লক্ষ্য কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে তালিকা সংগ্রহ করে কৃষি প্রনোদনা বিতরন করা হচ্ছে। তিনি সরকারের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে বলে গন মাধ্যমকে জানান। সম্প্রতি হাটহাজারী পৌরসভার আলমপুরে ব্যতিক্রমী ত্বীন ফলের বাগান পরিদর্শনের জন্য চট্টগ্রাম জেলার কৃষি বিভাগ উপ- পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আক্তারুজ্জামান নিয়ে গেলে এই বাগান দেখে তিনি উপ- পরিচালক সন্তোষ প্রকাশ করেন। এই সময় ত্বীন ফলের বাগানের কৃষি উদ্যোক্তা ধন্যবাদ জানান।