খুলনার পাইকগাছা পৌর সভায় আবারো শাপলা ক্লিনিকে (বর্তমান অনিমা ক্লিনিক) শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ। ডেলিভারী করতে গিয়ে গর্ভজাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। প্রসূতী মা এখন খুলনায় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন। উপজেলার পৌর সদর, রাড়-লীসহ বাণিজ্যিক শহর কপিলমুনি ব্যাঙ্গে ছাতার ন্যায় গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রতিনিয়ত ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হচ্ছে। এসব ক্লিনিকে নেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকও ডায়াগনস্টিক। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ঘটনা ইতঃপূর্বে একাধিবার শাপলা ক্লিনিকের সার্বিক কার্যক্রম বন্দ করে দেওয়া হলেও কিছু দিন পর আবারো ক্লিনিক নাম পরিবর্তন করে চালু করা হয়েছে। গত বছর অপচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুতে পৌরসদরে ‘শাপলা ক্লিনিক’ সার্বিক কার্যক্রম বন্ধসহ সিলগালা দিয়েছিলো কর্তৃপক্ষ। বেশ কয়েকমাস সিলগালা অবস্থায় থাকার পর নাম পরিবর্তন করে ‘অনিমা ক্লিনিক’ নাম দিয়ে আবারো তাদের কার্যক্রম চালু করে। সর্বশেষ তাদের অপচিকিৎসার শিকার হয়েছে উপজেলার চাঁদখালী ইউনিয়নের গজালিয়-কালুয়া গ্রামের গৃহবধূ দু’সন্তানের মা ফাতেমা খাতুন (৩০)। তার স্বামী এয়াকুব আলী সরদার জানান, ১৯ এপ্রিল আল্টাসনো রিপোর্ট অনুযায়ী স্ত্রীর গর্ভের সন্তান সুস্থ ছিলো। ২০ এপ্রিল স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক আ. সালামের মাধ্যমে ক্লিনিকের মালিক অনিমা ও তার স্বামী তাপস মিস্ত্রী এয়াকুব আলীর বাড়িতে যান। প্রথমে অনিমা ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করেন। পরে তার স্বামী ডেলীভারী করানোর নামে ফাতেমার জরায়ুর মধ্যে হাত ডুকিয়ে বিভিন্নভাবে চাপ দিতে থাকেন। এতে ফাতেমা খাতুনের মূত্রনালী ছিড়ে যায় এবং গর্ভের সন্তান মারা যায়। পরে তাকে অপারেশন করাতে হবে জানিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৭ হাজার টাকায় চুক্তিতে শুরু হয় অপারেশন। মৃত্যু সন্তান ডেলিভারী করানো হয়। চুক্তি অনুযায়ী ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সমুদয় টাকা নিয়ে নেয় এয়াকুব সরদারের কাছ থেকে। প্রসূতীর অবস্থা পরপর খারাপ হতে থাকলে রাত আড়াটার দিকে ৩৫০০টাকা ভাড়ায় রহিমের প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স করে তাদের খুলনায় পাঠানো হয়। ক্লিনিক মালিক তাপস মিস্ত্রী বলেন, গ্রাম্য চিকিৎসক আ. সালাম মোবাইলে তাদের ডাকেন। তারা সেখানে নরমল ডেলিভারী করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে তাদেরকে পাইকগাছা যেতে বলেন। রোগীর লোকেরা তাদের ক্লিনিকে নিয়ে আসেন। রাতে ওই ক্লিনিকে অপারেশন করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (গাইনী) ডা. সুজন কুমার সরকার ও উপজেলা স্বাস্থ্য প. প. কর্মকর্তা ডা. নিতিশ চন্দ্র গোলদার। ডা. সুজন কুমার সরকার বলেন, অপারেশনের আগেই প্রসূতীর জরায়ু ফেটে গিয়েছিলো এবং বাচ্চাও মারা যায়। খুব কষ্ট হয়েছে মাকে বাঁচিয়ে রাখতে। উপজেলা স্বাস্থ্য প.প. কর্মকর্তা ডা. নিতিশ চন্দ্র গোলদার বলেন, পেটের ভিতরেই বাঁচ্চা মারা গিয়েছিলো। প্রসূতীর জরায়ু ফেটে যাওয়া এবং মূত্রনালী ছিড়ে যাওয়ার কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে খুলনায় রেফার্ড করা হয়েছে। খুলনা সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।