কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে যার এখনও স্কুলে যাবার কথা ছিল; অথচ এমনই দুভার্গ্য যে, সংসারের মর্ম বোঝার আগেই স্বামীর ঘরে গিয়ে তার জীবন প্রদ্বীপটাই নিভে গেল। কুমিল্লার হোমনায় হাতের মেহেদীর রং মোছার আগেই লাশ হলো অষ্টম শ্রেণি পড়-য়া ছাত্রী সাদিয়া আক্তার। ঘরের দরজা ভেঙ্গে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। রোববার উপজেলার মাথাভাঙা ইউনিয়নের ভংগারচর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
মাত্র তিন মাস আগে বিয়ে হওয়া সাদিয়াকে স্বামীর বাড়ির লোকজন যৌতুকের দাবিতে হত্যা করে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ মেয়ের পরিবারের। ময়না তদন্ত শেষে রাতে তাকে দাফন করা হয়। থানায় লিখিত কোনো অভিযোগ নেই। সে ওই গ্রামের মো. ফারুক মিয়ার স্ত্রী ও উপজেলার চরের গাঁও গ্রামের মো. শাহাবুদ্দিনের মেয়ে। এই ঘটনায় স্বামী, শ^শুর-শাশুরী ও ননদরা লাশ ফেলে পালিয়ে গেছে।
নিহত সাদিয়ার পিতা মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমার মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। গত তিন মাস আগে ভংগারচর গ্রামের মোবারক হোসেন তার প্রবাসী ছেলে ফারুক মিয়ার (৩৩) জন্য আমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। এত ছোট মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি ছিলাম না আমরা। পরে মোবারক হোসেন লোকজন নিয়ে আমাদেরকে অনেক বুঝিয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি করান। তখন তারা কোনো যৌতুক দাবি করেনি। শুধু দেড়শ’ মানুষ খাওয়াতে হবে। সে মোতাবেক আমি অনেক কষ্ট করে দেড়শ’ জন বরযাত্রীকে খাইয়ে সামাজিকভাবে মেয়েকে বিয়ে দেই, এবং ৫০/৬০ হাজার টাকার বিভিন্ন মালামাল কিনে দেই। এরপরও বিয়ের পর থেকেই মেয়ের শাশুড়ি রিনা ও তার বড় মেয়েসহ তিন ননদ বাপের বাড়ি থেকে ফার্নিচার নিয়ে দেওয়ার জন্য আমার মেয়েকে চাপ দেওয়াসহ শারিরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে দেয়। এ সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মো. শাহাবুদ্দিন। কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার মেয়েকে দিয়ে শাশুড়ি সারাদিনই কাজকর্ম করাতো। আবার বাবার বাড়ি থেকে দামি দামি ফার্নিচার এনে দেওয়ার জন্য তাকে মারধর করতো। মেয়ের কাছে ফোন দিলেই দেখতাম, মেয়েটা সব সময় কান্নাকাটি করতো। রোববার সকাল আটটার দিকে শশুড় বাড়ির লোকজন আমাদেরকে ফোন করে জানায়, আমার মেয়ে ফাঁসি দিয়ে মারা গেছে। তিনি দাবি করেন- তার মেয়ে ফাঁসি দিতে পারে না, আত্মহত্যা করতে পারে না। তাকে শাশুড়ি ননদরা মিলে খুন করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছে। তিনি এর সঠিক বিচার চান।
এ ব্যাপারে হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ময়না তদন্ত শেষে লাশ মেয়ের পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলেই মনে হচ্ছে। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের কারণেই সংসারে বনিবনা না হওয়ায় মান অভিমান থেকেও আত্মহত্যা করতে পারে। ঘরের ভেতর থেকে দরজা আটকানো ছিল। পুলিশ দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত করানো হয়েছে। রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।