প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৬৮ রানের লিডটা খুব বেশি নয়। তার পরেও চতুর্থ দিনের শেষ বিকালে বল যেভাবে টার্ন করেছে। পাশাপাশি দ্বিতীয় ইনিংসে লঙ্কানদের দুই উইকেট তুলে নিতে পারায় পঞ্চম দিনটা আশান্বিত করে তুলেছে মুমিনুলদের। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭.১ ওভারে ৩৯ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সফরকারীরা এখনও পিছিয়ে ২৯ রানে। সপ্তম ওভারেই নাঈমের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন করুনারতেœ। বাংলাদেশের আবেদনে সফট সিগন্যালে আম্পায়ার আউটও দিয়েছিলেন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা গেছে নাঈমের হাতে বল জমা পড়ার আগে ড্রপ খেয়েছে মাটিতে। ১২তম ওভারে অবশ্য রান নেওয়ার তাড়া দেখাতে গিয়ে কপাল পুড়ে শ্রীলঙ্কার। রানআউট হন ওপেনার ওশাডা ফার্নান্ডো। সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। তার পর পরিস্থিতি সামলাতে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামানো হয় স্পিনার লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে। কিন্তু তাইজুল-নাঈমের ঘূর্ণিতে খুব বেশি স্বস্তিতে ছিলেন না। বেশ কয়েক বার আউটের কাছেও চলে গিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত দিনের শেষ বলে তাইজুলের ঘূর্ণিতে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন। দারুণ টার্ন করা বল বুঝে ওঠার আগেই তা আঘাত করে এম্বুলদেনিয়ার স্টাম্পে। এই ডেলিভারিতে বোঝাই যাচ্ছে, পঞ্চম দিনটা কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলবে সফরকারীদের। লঙ্কানরা সেই পরিস্থিতি কতটুকু সামাল দিতে পারে, এখন সেটাই দেখার। করুনারতেœ ১৮ রানে ক্রিজে রয়েছেন। রানআউট ছাড়া ১.১ ওভারে কোনও রান না দিয়ে একটি উইকেট নিয়েছেন তাইজুল। চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে কর্তৃত্ব করতে পারলেও দ্বিতীয় সেশনে ম্যাচে ফেরে শ্রীলঙ্কা। জোড়া আঘাতে বাংলাদেশের বড় লিডের পথে কাঁটা বিছিয়ে দেন কনকাশন সাব কাসুন রাজিথা। মুশফিকুর রহিম একার লড়াইয়ে লিড কিছুটা বাড়িয়ে নিলেও বেশি দূর যেতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত টেলএন্ডারদের অবদানে প্রথম টেস্টের লিড দাঁড়ায় ৬৮ রান। শেষ উইকেটে শরিফুল ইসলাম রিটায়ার্ড আউট হওয়ায় ৪৬৫ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ৩ উইকেটে ৩১৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছেন মুশফিক-লিটন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই জুটির শাসন চলে চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেও। অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে চতুর্থ দিনটাও সম্ভাবনাময় করে তোলেন তারা। তাতে মধ্যাহ্নভোজের আগেই শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে করা ৩৯৭ রান ধরতে স্বাগতিকদের প্রয়োজন পড়ে আর ১২ রান। কিন্তু লাঞ্চ বিরতির পর খেলায় ফিরে বাংলাদেশকে দ্রুত শেষ করে দেওয়ার পণ দেখা যায় লঙ্কানদের। বিরতির পর প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাতে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দেন কনকাশন সাব কাসুন রাজিথা। লিটন দাসকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত তো করেছেনই, রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে পরে নামা সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবালকেও আর ইনিংস বড় করতে দিলেন না। লাঞ্চের পর ফিরেই প্রথম বলে ভুল করে বসেন লিটন। অযথা রাজিথার অফস্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে গ্লাভসবন্দি হয়েছেন। তাতে ১৮৯ বলে ৮৮ রানে শেষ হয় লিটনের ইনিংস। লিটনের ফেরায় ভেঙে যায় ১৬৪ রানের অসাধারণ জুটিও। তারপর তামিমের মাঠে নামাটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু বাঁহাতি ওপেনারকে টিকতেই দেননি রাজিথা। দ্বিতীয় বলে পায়ের কাছে ভেতরে ঢুকে পড়া এক ডেলিভারি দিলে পুরোপুরি পরাস্ত হন তামিম। ফলাফল বল উপড়ে ফেলে স্টাম্প। তাতে ২১৮ বলে ১৩৩ রানে বিদায় নিতে হয়েছে তাকে। তার পরেও লিড নেওয়ার পথে বড় অবদান রেখেছেন মুশফিক। ৫৩ রান নিয়ে চতুর্থ দিন খেলতে নামা মুশফিক সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন দুই বছর পর। একই দিন টেস্ট মেজাজের দারুণ প্রদর্শনীতে ছুঁয়েছেন মাইলফলকও। প্রথম সেশনে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে পূরণ করেছেন ৫ হাজার রান। এই সময়ে তার সঙ্গী হওয়া সাকিব কিছুক্ষণ প্রতিরোধ গড়লেও ধৈর্য ধরে থাকতে পারেননি। আসিথার শর্ট বলের ফাঁদে পড়ে এই অলরাউন্ডার ৪৪ বলে ফেরেন ২৫ রানে। সঙ্গীহীন মুশফিক একপ্রান্ত আগলে একার লড়াই চালিয়ে নেন এরপরেও। অবশ্য সেঞ্চুরির পর বেশি দূর যায়নি তার ইনিংস। চা বিরতির পর মাত্র দুই ওভার স্থায়ী ছিল লড়াই। বাঁহাতি স্পিনার লাসিথ এম্বুলদেনিয়ার ঘূর্ণিতে সুইপ করতে গিয়েছিলেন। দারুণ টার্ন করা বল শেষ পর্যন্ত আঘাত করে স্টাম্পে। তাতে ২৮২ বল খেলা মুশফিকের ইনিংস শেষ হয় ১০৫ রানে। মুশফিকের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে লিড সমৃদ্ধ হওয়া নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছিল। কিন্তু নাঈম-তাইজুল মিলে লিডটাকে পঞ্চাশ ছাড়িয়েছেন শেষ পর্যন্ত। নাঈমকে ফিরিয়ে প্রতিরোধ ভাঙেন ধনাঞ্জয়া। তার ঘূর্ণিতে নাঈম শর্ট লেগে ক্যাচে পরিণত হন ৯ রানে। তার পরেও উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার মানসিকতা ছিল না লেজের দিকে। রান তোলার দিকে মনোযোগী ছিলেন তাইজুল। শেষ পর্যন্ত ২০ রান করা বাঁহাতি স্পিনারকে শর্ট বলে তালুবন্দি করেছেন আসিথা ফার্নান্ডো। পরের ওভারে রাজিথার বলে হাতে আঘাত পেলে রিটায়ার্ড আউট হন শরিফুল। এর সঙ্গে সঙ্গে ১৭০.১ ওভারে ৪৬৫ রানে শেষ হয় স্বাগতিকদের ইনিংস। কনকাশান সাব পেসার কাসুন রাজিথা ছিলেন সফল বোলার। ২৪.১ ওভারে ৬০ রানে নেন ৪ উইকেট। ৭২ রানে তিনটি নেন আরেক পেসার আসিথা ফার্নান্ডো। একটি করে নিয়েছেন দুই স্পিনার এম্বুলদেনিয়া ও ধনাঞ্জয়া।
সংক্ষিপ্ত স্কোর চতুর্থ দিন শেষে:
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে: ১৫৩ ওভারে ৩৯৭ (ম্যাথুজ ১৯৯, চান্ডিমাল ৬৬, মেন্ডিস ৫৪; নাঈম ৬/১০৫, সাকিব ৩/৬০, তাইজুল ১/১০৭)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৭০.১ ওভার শেষে ৪৬৫ (তামিম ১৩৩, মুশফিক ১০৫, লিটন ৮৮, জয় ৫৮; রাজিথা ৪/৬০, আসিথা ৩/৭২)
শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংসে: ১৭.১ ওভার শেষে ৩৯/২ (করুনারতেœ ১৮; তাইজুল ১/০)