নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে উদ্বোধন হলেও শুরু করা যায়নি সাসটেইনেবল কোস্টাল এ- মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় খুলনার পাইকগাছায় তালতলা খাল পূণ:খনন প্রকল্পের। কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত কাজ শুরু করতে পারেনি। স্থানীয় মৎস্য অধিদপ্তর এর জন্য দখলদারদের বাঁধার বিষয়টি বড় করে দেখলেও খালের ইজারাদার উত্তর সলুয়া আদর্শ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লি.মি. এর সভাপতি বলছেন ভিন্ন কথা। এমন পরিস্থিতিতে খালটির পূণ:খননে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, সাসটেইনেবল কোস্টাল এ- মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কপিলমুনি ও হরিঢালী ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত নাছিরপুর-তালতলা খালের ৯ কিলোমিটার পূণ:খনন ও পোদা নদী খনন প্রকল্পে প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। প্রকল্পের কার্যাদেশ অনুযায়ী গত ৬/৪/২২ইং থেকে শুরু করে চলতি মাসের ৩০/৫/২২ তারিখের মধ্যে তালতলা খাল পুণ:খননের কাজ শেষ করার কথা। এ লক্ষে স্থানীয় এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু গত ২১ এপ্রিল খনন প্রকল্পের উদ্বোধন করলেও এখন কাজ শুরু করতে না পারায় এর বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ার শহীদুল ইসলামের মালিকানাধীন ইউনুচ এ- ব্রাদার্স টেন্ডারটি প্রাপ্ত হয়ে কাজ করতে আসলেও খালের কতিপয় দখলদারদের পক্ষে বাঁধা প্রদানের ঘটনায় তারা সেখানে কাজ করতে চাচ্ছেন না। সরেজমিনে তালতলা-নাছিরপুর খাল এলাকায় গেলে ফুঁটে ওঠে ভিন্ন চিত্র। সালতা নদী থেকে সৃষ্ট খালটিতে দীর্ঘ দিন ধরে নাব্যতা হ্রাস পেয়ে পরিণত হয়েছে মরা খালে। এর দু’পাশে মাটি দিয়ে বেঁধে ছোট ছোট খন্ড খন্ড করে বাৎসরিক চুক্তিভিত্তিক ইজারা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া পাইকগাছা-খুলনা প্রধান সড়কের নির্মাণাধীন কাজে রাস্তার দু’পাশের মাটির প্রয়োজনে খালটি থেকে স্কেভেটর দিয়ে খালটি থেকে লক্ষ লক্ষ ঘণ মিটার মাটি কেটে রাস্তার পাশের মাটি ভরাট করা হয়েছে। তালতলা খাল খননের অগ্রগতির ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাশ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, খালের স্থানীয় দখলদাররা পানি কমাতে বাঁধা দেওয়ায় মূলত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেখানে আর কাজ করতে চাইছেন না। যদিও সরকার খাল খননে মৎস্য অধিদপ্তরকে নওসি অনাপত্তিপত্র দিলেও দখদাররা খননকাজে বাঁধা প্রদানে বন্ধ রয়েছে খনন কাজ। দখল উচ্ছেদের ব্যাপারে কোন প্রকার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানোর পর তিনিও নাকি বলেছেন স্থানীয়রা কাজ করতে দিতে না চাইলে তিনি কি করতে পারেন। এ সময় তিনি মৎস্য অধিদপ্তরকে কাজ করার নির্দেশনা দিলেও পানির মধ্যে কাজ করা সম্ভব না বলেও দাবি তার। খালের ইজারাদার উত্তর সলুয়া আদর্শ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি লুৎফর রহমান জানান, এখন অসময়ে তারা পানি কমাতে পারবেন না। সম্ভব হলে আগামী পৌষ-মাঘ মাসে সেখানে খনন কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে। স্থানীয় কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার বলেন, খাল খননের স্বার্থে তিনি উদ্যোগী হয়ে দু’দিনের মধ্যে খালের পানি শুকিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। প্রসঙ্গত, সরকার সামুদ্রিক একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলে মৎস্য জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে চিংড়ি, তলদেশীয় এবং ভাসমান প্রজাতির মৎস্যের মজুদ নিরূপন কর্মসূচি জোরদারকরণ, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং গবেষণা সংস্থার সামর্থ্য বৃদ্ধিপূর্বক বিজ্ঞানভিত্তিক টেঁকসই মৎস্য মজুদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, বাণিজ্যিক ও ক্ষুদ্রায়তন মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে অধিকতর কার্যকর পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারী (এমসিএস) পদ্ধতির বাস্তবায়ন, উপকূলীয় অঞ্চলের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, সার্ভিস সেন্টার, মৎস্যবাজর উন্নয়নকরতঃ আহৃত ও উৎপাদিত মৎস্যের ভ্যালু চেইন উৎকর্ষ ও গুণগতমান উন্নয়ন ও অপচয় হ্রাস করা, উপকূলীয় জেলা সমূহে ক্লাস্টার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির সম্প্রসারণ ঘটিয়ে বাগদা চিংড়ির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও চিংড়ি রপ্তানী বৃদ্ধি করা, দরিদ্র মৎস্যজীবী জনগোষ্ঠি কর্তৃক চালিত তাঁদের নেতৃত্বে উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ-এর টেঁকসই সহ-ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠা এবং বিকল্প জীবিকায়নে সহায়তা করা, উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ এর টেঁকসই আহরণ ব্যবস্থাপনায় ‘সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ প্রণয়ন, উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংক্রাস্ত বিভিন্ন ক্রসকাটিং ইস্যুর ওপর সমীক্ষা পরিচালনার জন্য সারাদেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। স্থানীয়রা জানান, সালতা নদী থেকে সৃষ্ট তালতলা নাছিরপুর খালটি স্লুইচ গেটের মাধ্যমে পানি ওঠা-নামা করানো হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে এর নিয়ন্ত্রণ খাল ইজারাদারদের হাতে চলে যাওয়ায় অতিদ্রুত খালের নব্যতা হ্রাস পেয়ে এর মত্যু শুরু হয়। একদিকে খালটির অপমৃত্যু অন্যদিকে চরভরাটি বিস্তীর্ণ জমিতে শুরু হয় দখল প্রতিযোগীতার। সর্বশেষ ইজারা গ্রহীতার পক্ষে খালের দু’ধারে বেড়িবাঁধ দিয়ে ছোট ছোট প্লট আকারে আলাদা আলাদাভাবে ইজারা দেওয়ায় খালের অপমৃত্যুর পাশাপাশি অতিদ্রুত দখল হয়ে যাচ্ছে মূল খালটি। এলাকাবাসী জানান, বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনে তালতলা-নাছিরপুর খালই একমাত্র ভরসা। খালের বর্তমান অবস্থায় বর্ষা মৌসুমে সুষ্ঠু পানি সরবরাহের অভাবে অঞ্চলজুড়ে পানি বন্দিতার সৃষ্টি হয়। এ সময় ফসলহানির পাশাপাশি বহু পুকুর, জলাশয় ও মাছের ঘের তলিয়ে খালের সাথে একাকার হয়ে যায়। সর্বশেষ সাসটেইনেবল কোস্টাল এ- মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় খালধারের অধিবাসীসহ বিস্তির্ণ জনপদের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে গেলেও দখল প্রতিবন্ধকতায় খননে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে নানা আশঙ্কা জেঁকে বসেছে।