পরিবেশ রক্ষা করো’ প্রতিপাদ্য নিয়ে গত ৩ মে, পালিত হলো বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস। ধূমপান বিষপান কথাটা সবাই বললেও ধূমপানের আসক্তি থেকে অনেকেই বেরুতে পারছেন না। বরং সিগারেট বিড়ির সহজ প্রাপ্যতা ও সঙ্গদোষে নতুন ধূমপায়ী সৃষ্টি হচ্ছে। শুধু সিগারেটের ধোয়া স্বস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, ধূমপান করে ফেলে দেওয়া অবশিষ্টাংশ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
এ ছাড়া সিগারেট বিড়ি উৎপাদনের প্রক্রিয়ায়ও ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয়। পরিবেশগত এ ক্ষতির আর্থিক মূল্য কত, তার কোনও পরিসংখ্যান সরকারের দপ্তরে নেই। এ-সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় তামাক কোম্পানি গুলোর দায়বদ্ধতার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের প্রকৃতিতে প্রতিদিন ছড়িয়ে পড়ছে কমপক্ষে ১৯ কোটি ৫০ লাখ সিগারেট ও বিড়ির অবশিষ্টাংশ। সিগারেটের ফিল্টার সেলুলোজ অ্যাসিটেট ধরনের প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। দীর্ঘ সময় লাগলেও এটি পচনশীল। ফিল্টারের সাথে থাকে নিকোটিন, বেনজিন এবং ক্যাডসিয়াম ও আর্সেনিকের মতো ভারী ধাতু। সিগারেট ও বিড়ির অবশিষ্টাংশ মাটি ও পানিতে মিশে গুরুত্বপূর্ণ অণুজীব গুলো ধ্বংস করেও মাটি ও পানির ক্ষতি করে।
অন্যদিকে তামাক শুকাতে (কিউরিং) অনেক গাছ কাটা হয়। যা তামাক পাতা শুকাতে চুলায় (তন্দুর) দিতে হয়। উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারনী গবেষনার (উবেনীগ) হিসাব অনুযায়ী এক মৌসুমে প্রতি তন্দুরের জন্য ২৪০ মন কাঠ প্রয়োজন হয়। তামাক সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক তথ্য ভান্ডার টোব্যাকো অ্যাটলাসের হিসেবে বাংলাদেশের ৩১ শতাংশ বন ধ্বংশের কারণ তামাক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টোব্যাকো: থ্রেট টু আত্তয়ার এনভায়ারমেন্ট’ প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে দেড় কোটি পাপ্ত বয়স্ক মানুষ সিগারেট পান করেন। বিড়ি পান করেন ৫৩ লাখ মানুষ। আর ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ ধোয়াবিহীন তামাক সেবন করেন। বিশ্ব স্বস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১২ কোটি ৩০ লাখ সিগারেট পান করা হয়। সমপরিমান সিগারেটের ফিল্টার আবর্জনা হিসেবে সৃষ্টি হয়। আর ৭ কোটি ২০ লাখ বিড়ি প্রতিদিন পান করে অবশিষ্টাংশ যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়া হয়।
অর্থাৎ এ হিসেবে প্রতিদিন সিগারেট বিড়ির সাড়ে ১৯ কোটি অবশিষ্টাংশ প্রকৃতিতে মিশে পরিবেশ দূষিত করছে। সামগ্রিক আলোচনায় এটা স্পষ্ট যে অন্তত: দু’টি ক্ষেএে সিগারেট বিড়ি কোম্পানি গুলোর দায় রয়েছে। সিগারেট বিড়ির অবশিষ্টাংশ পরিবেশগত ক্ষতি করছে আর তামাকের জন্য কাঠ পোড়ানোর ফলে বন উজাড় হচ্ছে। অথচ কোম্পানি গুলো কৃষকদের আগাম অর্থ দিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। সরকার সিগারেট ও বিড়ির ওপর শুল্ক বসিয়ে সিগারেট বিড়ির দাম বাড়ালেও ধুমপায়ীর সংখ্যা কমাতে পারে নি। তাই পরিবেশ বিধিমালা তৈরি করে সিগারেট বিড়ির অবশিষ্টাংশ নিয়ন্ত্রণে দায় নিরূপণের ব্যবস্থা করতে হবে যদিও দেশে একটি পরিবেশ আইন রয়েছে। তাই সময়ের চাহিদা মিটাতে পরিবেশ দূষণ করার দায় যেন কোম্পানি গুলোর পড়ে। আর বায়ু বিধিমালা তৈরির মাধ্যমে তামাকের জন্য দূষণের দায় মেটাতে দায়বদ্ধ করতে হবে কোম্পানি গুলোকে। আর তা যত দ্রুত সম্ভব ততোই মঙ্গল পরিবেশের জন্য। এ ছাড়া মানুষকে সচেতন হতে হবে, ছাড়তে হবে ধূমপান। উপভোগ করতে হবে সুস্থ্য জীবন।