দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তন্ময় গুপ্ত মিমো’র হত্যাকারিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
ফুলবাড়ীবাসীর ব্যানারে ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের সম্মুখ সড়কে সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন কর্মসূচি চলাকালে তন্ময়ের খুনিদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন নিহত তন্ময় গুপ্ত মিমো’র মা শেফালী গুপ্তা, ফুলবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি, দৈনিক ইত্তেফাক সংবাদদাতা ও দৈনিক দেশ মা সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক অমর চাঁদ গুপ্ত অপু, সিনিয়র সহ-সভাপতি ভোরের কাগজ প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ, সহ-সভাপতি দৈনিক সমকাল প্রতিনিধি সহকারী অধ্যাপক আজিজুল হক সরকার, নিহত তন্ময় গুপ্ত মিমো’র মাসী (খালা) প্রভাষক রীতা রানী গুপ্তা, মামা রাজু কুমার গুপ্ত, মামা আনন্দ কুমার গুপ্ত, তন্ময় গুপ্ত মিমো’র খালাতো বোন হাবিপ্রবি শিক্ষার্থী অলংকার গুপ্তা প্রমুখ।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে তন্ময় গুপ্ত মিমো’র পরিবার, আত্মীয়স্বজনসহ ফুলবাড়ীর বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার নারী ও পুরুষ সুধিজন অংশ নেন।
নিহত তন্ময় গুপ্ত মিমো’র মা শেফালী গুপ্তা বলেন, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের পঞ্চগড় হাঁড়িভাসা শাখায় ২০১৭ সালের ১৯ মার্চে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে যোগদান করে তন্ময় গুপ্ত মিমো। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে চাকরিরত অবস্থায় প্রতি বৃহস্পতিবার বাড়ী চলে আসতো এবং রোববার ভোরে চলে যেতো। একই বছরের ২৪ মে ব্যাংকের বিশেষ কাজের অজুহাতে ব্যাংক ম্যানেজার আবু জাফর মো. সালাম তন্ময়কে বাড়ীতে আসতে না দিয়ে ব্যাংকে থাকার নির্দেশ দেন। ম্যানেজারের নির্দেশনা অনুযায়ী তন্ময় ২৫ মে ব্যাংকে অবস্থান করে এবং রাত সাড়ে ৯ টার দিকে আমার সাথে ভিডিও কলে কথা হয়। ওই সময় তাকে খুব আতঙ্কিত ও ভীতসন্তস্ত লাগছিল। পরদিন ২৬ মে সকাল ৭ টায় একাধিকবার ফোন করলে তন্ময় ফোন রিসিভ না করায় বাধ্য হয়ে ম্যানেজার আবু জাফর মো. সালামকে ফোন করলে তিনি জানান, তন্ময়কে ব্যাংকের দরজা ভেঙে তাকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এরই একপর্যায়ে ম্যানেজার জানান, তন্ময় গুপ্ত মিমো বেঁচে নেই। পরে ময়নাতদন্তের ভিসেরা রিপোর্ট আসলে জানা যায়, তন্ময় গুপ্ত মিমোকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নিহতের মা শেফালী গুপ্তা বাদী হয়ে ব্যাংকের ম্যানেজার আবু জাফর মো. সালাম, সিকিউরিটি বুলবুল আলম বিপ্লব ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নাজমুল ইসলামকে আসামি করে পঞ্চগড় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-২৬২/২০১৭ (পঞ্চগড়), তারিখ-১৮/০৮/২০১৭ইং।
তিনি জানান, মামলাটি পর্যায়ক্রমে পুলিশ, সিআইডি, পিবিআই পর্যায়ক্রমে তদন্ত করে মামলা থেকে রহস্যজনকভাবে ব্যাংক ম্যানেজারের নাম বাদ দিয়ে চার্জসীট আদালতে দাখিল করায় সেটি নারাজি দেওয়া হয়েছে আদালতে। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে নারাজি গ্রহণ করেছেন। মজার ব্যাপার হলো, পিবিআই যখন মামলাটি তদন্ত করে তখন তারা ম্যানেজারের নাম বাদ দিয়ে আদালতে চার্জশীট দাখিলের চারদিন পর আমার বাড়ীতে তদন্তে আসে। এটা কেমন তামাশা। অথচ ওই ব্যাংক ম্যানেজার সালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু বক্কর নামের এক শিক্ষার্থীর হত্যা মামলার চার্জসিটভুক্ত আসামী।
এতো কিছুর পরও আজ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে আমার কিংবা আমার পরিবারের কোন খোঁজখবর না নিলেও পঞ্চগড় থেকে একদল ব্যাংক কর্মকর্তা ও কর্মচারী বাড়ীতে এসেছিলেন ব্যাংক ম্যানেজার সালামের নাম মামলা থেকে বাদ দেওয়ার তদবির নিয়ে।
তিনি সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে তার ছেলে তন্ময় গুপ্ত মিমোর হত্যাকারিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ মে রাতে পঞ্চগড়ের হাঁড়িভাসা শাখা রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কক্ষে তন্ময় গুপ্ত মিমোকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।