ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস অঞ্চলের সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক শহরের ‘প্রতি মিটারের’ জন্য ইউক্রেইনীয় প্রতিরোধকারীরা লড়াই করে চলছে বলে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন। রাশিয়ার বাহিনীগুলো সিভারস্কি দোনেছ নদীর আরেকটি সেতু ধ্বংস করে দেওয়ায় সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক থেকে বেসামরিকদের বের হওয়ার আর মাত্র একটি সেতু অবশিষ্ট আছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে। দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য চলা বিস্তৃত যুদ্ধের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক। শহরটির বেশিরভাগ অংশের নিয়ন্ত্রণ এখন রাশিয়ার বাহিনীগুলোর হাতে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেইনে আক্রমণ শুরু করার পর এখানে অন্যতম রক্তক্ষয়ী একটি লড়াই চলছে। গত রোববার নিজের রাত্রিকালীন ভিডিও বক্তৃতায় ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, দখলদারদের মূল কৌশলগত লক্ষ্য পাল্টায়নি: তারা সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্কতে চাপ সৃষ্টি করছে, সেখানে তীব্র লড়াই হচ্ছে- আক্ষরিকভাবে প্রতি মিটারের জন্য। দনবাসে রাশিয়ার সেনাবাহিনী রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের চেষ্টা করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। জেলেনস্কি বলেছেন, রুশ বাহিনীর হামলায় আহত ১২ বছর বয়সীর ছবি এখন বিশ্বব্যাপী রাশিয়ার স্থায়ী চেহারা। রাশিয়াকে বিশ্ব যেভাবে দেখছে এই ঘটনাগুলোই তা জোরালো করবে। মস্কোর সামরিক অভিযানকে গত সপ্তাহে রুশ স¤্রাট পিটার দ্য গ্রেটের ১৮ শতকের সুইডেনের দখলে থাকা ভূমি জয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। পুতিনের ওই মন্তব্যের জের ধরে জেলেনস্কি বলেন, পিটার দ্য গ্রেটও না, লেভ তলস্তয়ও না, রাশিয়ার হামলায় শিশুরা আহত ও নিহত হচ্ছে। দনবাসের লুহানস্ক প্রদেশের গভর্নর সেরহি হাইদাই জানিয়েছেন, গত রোববার সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্কর রাস্তায় রাস্তায় রাশিয়ার বাহিনীগুলোর সঙ্গে ইউক্রেইনীয়দের লড়াই চলছিল। রাশিয়ার বাহিনীগুলো শহরটির অধিকাংশ দখল করে নিলেও ইউক্রেইনীয় সেনারা একটি শিল্প এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে এবং সেখানকার আজত রাসায়নিক কারখানায় কয়েশ বেসামরিক আশ্রয় নিয়ে আছে। সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্কর আজত কারখানা এলাকায় প্রায় ৫০০ বেসামরিক রয়ে গেছে, তাদের মধ্যে ৪০ জন শিশু আছে। কখনো কখনো সামরিক বাহিনী কাউকে কাউকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছে, বলেছেন হাইদাই। কিন্তু রুশরা সিভারস্কি দোনেছ নদীর ওপর সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক ও এর যমজ শহর লিসিচ্যাংস্ককে সংযোগকারী আরেকটি সেতু ধ্বংস করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। এতে এই নদীর ওপর থাকা তিনটি সেতুর মধ্যে মাত্র একটি অক্ষত আছে। যদি নতুন গোলাবর্ষণের পর এ সেতুটিও ধসে যায় তাহলে শহরটি (সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক) পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তখন গাড়িতে করে সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্ক ছাড়ার আর কোনো রাস্তা থাকবে না, বলেন হাইদাই। দুই পক্ষের মধ্যে অস্ত্রবিরতির বা বেসামরিকদের শহর ছাড়ার জন্য করিডোরের বিষয়ে কোনো সমঝোতা হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তিনি জানান, লিসিচ্যাংস্কে রাশিয়ার গোলাবর্ষণে ছয় বছর বয়সী এক শিশু নিহত হয়েছে। তবে এসব ভাষ্য রয়টার্স স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি বলে জানিয়েছে। সিয়েভিয়ারোদোনেৎস্কের পতন হলে দনবাসের পুরো লুহানস্ক অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে আর তাতে পুতিনের কথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’ তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যের পথে বড় একটি অগ্রগতি অর্জন করবে রাশিয়া।