মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র এক নেত্রীর কটূক্তিকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে হিন্দু-মুসলিম সহিংসতায় উসকানি দেওয়ার সন্দেহে উত্তর প্রদেশে কয়েকজনের বাড়িঘর স্থানীয় প্রশাসন ভেঙে দিয়েছে। চলছে জোর ধরপাকড়ও। উত্তর প্রদেশের স্থানীয় কর্মকর্তারা গত রোববার এ খবর জানিয়েছেন। কাশ্মীরে এক তরুণকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সেই তরুণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। ভিডিওতে নবীকে নিয়ে কটূক্তি করার কারণে বহিষ্কার হওয়া ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেত্রী নূপুর শর্মাকে শিরñেদের হুমকি দেওয়া হয়। ওই ভিডিও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ে। পরে অবশ্য ইউটিউব কর্তৃপক্ষ ভিডিওটি সরিয়ে নেয়। নূপুর বিজেপির মুখপাত্র ছিলেন। নবী (সাঃ) নিয়ে তার করা মন্তব্যের জেরেই ভারতজুড়ে ও ভারতের বাইরে প্রধানত মুসলিম দেশগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের বেশি কয়েকটি দেশ ওই বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে বলেছে, অনেকে ভারতীয় দূতকে তলব করেছে। কোথাও কোথাও ভারতীয় পণ্য বর্জনের আওয়াজও উঠেছে। ভারত সরকার এই বিতর্ককে ঠা-া করতে চেষ্টা করছে; নবী মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে মন্তব্যকে ‘বিচ্ছিন্ন কয়েকজনের দৃষ্টিভঙ্গি’ অ্যাখ্যা দিয়েছে তারা। ক্ষোভ প্রশমিত করতে বিজেপিও এরইমধ্যে নূপুরের সদস্যপদ স্থগিত এবং তার পক্ষে সাফাই গাওয়া নভিন কুমার জিন্দালকে বহিষ্কার করেছে। দিল্লিতে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ায় কানপুরে বিজেপির এক যুবনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এতেও উত্তেজনার পারদ নামছে না। ভারতের বিভিন্ন জায়গায় গত কয়েকদিন ধরে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাত হয়েছে। উত্তর প্রদেশ পুলিশ গত রোববার পর্যন্ত তিনশ’র বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসনকে যে কোনও ধরনের অবৈধ বিক্ষোভের চেষ্টা গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া, গত সপ্তাহে হওয়া দাঙ্গায় যারা উসকানি দিয়েছে তাদের বাড়িঘরও তিনি গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গত রোববার পুলিশের উপস্থিতিতে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার হোতা অভিযোগে এক ব্যক্তির বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তির মেয়ে একজন ‘মুসলিম রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট’। রাজ্যের আরও দুই বাসিন্দার বাড়িও প্রশাসন থেকে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারা পাথর ছুঁড়ে ছিলেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর ভারতের অন্তত ৯টি রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় বিশাল বিশাল বিক্ষোভ হয়। ঝাড়খ-ের রাঁচিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ জন নিহত ও ৪ পুলিশ সদস্যসহ ডজনখানেক আহত হন। পশ্চিম বঙ্গ এবং উত্তর প্রদেশের একাধিক শহরেও সংঘর্ষ হয় এবং ওই দিন উত্তর প্রদেশে দুইশর বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারতের বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারাও জারি হয়। আদিত্যনাথ সরকার বিক্ষোভ দমনে অসাংবিধানিক পথ অবলম্বন করছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যের বিরোধীদলের নেতারা। নবীকে কটূক্তি নিয়ে এত সব কা-ে এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।