স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের অহংকার ও গর্ব বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজের শক্তিমত্তা নতুনভাবে চিনতে পেরেছে বলে মনে করেন তিনি। পদ্মা সেতু নির্মাণে পাশে থাকায় বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীর সাহসেই পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার দেশের চলমান সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু আগামী ২৫ জুনই উদ্বোধন হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছিল বলেই সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়ি আছে।
এ সময় পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও জাইকার প্রতিক্রিয়া কী? তাদের দুঃখ প্রকাশ করা উচিত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বরং বিশ্বব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, এটা (ঋণ বন্ধ) ঘটেছিল বলেই আমরা এটা (পদ্মা সেতু) করতে পেরেছি। আমাদের একটা ধারণা ছিল, আমরা নিজেদের টাকায়, নিজেরা কিছু করতে পারি না। একটা পরমুখাপেক্ষিতা, দৈন্যতা ছিল। (বিশ্বব্যাংক ফিরিয়ে দেওয়ার কারণে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু বানিয়ে) আমাদের সেই ধারণা বদলে গেছে।
তিনি বলেন, ২০১১ সালে এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণচুক্তি সই করা হয়। এরপর শুরু হয় ষড়যন্ত্র। একটা কথা আছে, নিজের ভার ভালো না, গোয়ালার ঘির দোষ দিয়ে লাভ কী? পদ্মা সেতুর ঋণটা আসলে কেন বন্ধ হয়েছিল? আমাদের ঘরের (দেশের) কিছু লোকের জন্যই কিন্তু।
বিএনপি-জামায়াত জোট ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমি ১৯৯৭ সালে জাপান সফর করি। পদ্মা ও রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করি। তারা (জাপান) রাজি হয়। ২০০১ সালে পদ্মা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সমীক্ষার তথ্য আমাদের দেয়। সমীক্ষায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের স্থান নির্বাচন করা হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে আমি মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে আমরা সরকারে আসতে পারিনি। ক্ষমতায় এসে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং জাপান সরকারকে পুনরায় মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য সমীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয়বার সমীক্ষার পর জাপান মাওয়া প্রান্তকেই নির্দিষ্ট করে সেতু নির্মাণের রিপোর্ট পেশ করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকারের দায়িত্বে এসে পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মা সেতু অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর কাজের মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে না। এই সেতু বিশ্বের সেরা উপকরণে অত্যন্ত মানসম্পন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে।
বিএনপি নেতাদেরও গর্বের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন বলে জানান শেখ হাসিনা।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম থান ও ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদের নামে আমন্ত্রণ কার্ড দেওয়া হয়েছে বলে শেখ হাসিনা জানান।