গত জুন মাসের বন্যায় দেশের ন’টি জেলার ৭২ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিতে ডুবে ও সাপের ছোবলে মোট ৫৫ জন মারা গেছে। তবে অধিকাংশ মানুষ পানিতে ডুবে মারা গেছে। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে অবিরাম ভাবে কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এ ছাড়া ভারতের মেঘালয়, আসাম ও ত্রিপুরায় কয়েকদিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা বৃষ্টিতে ১৩ মে থেকে পূর্বাঞ্চলের সিলেটের সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে এবং সিলেট সুনামগঞ্জ ও আশে পাশের জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের সৃষ্টি বন্যা সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন স্থায়ী হলেও এবার বন্যা দু’সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছিল। এতে বন্যা-ক্রান্ত মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে। গবাদি পশু ও জমির ফসল নষ্ট হয়েছে ব্যাপক ভাবে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর মানুষ নানা অসুখে আক্রান্ত হয়েছে।
বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ফসলাদির আনুমানিক আর্থিক মূল্য ১ হাজার ২৫৮ কোটি ৫৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ফসলাদির আনুমানিক আর্থিক মূল্য ৫৫ হাজার ৯৫৭ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘর বাড়ির আর্থিক মূল্য ৩৬৪ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির আর্থিক মূল্য ১২ হাজার ৩৫৫ কোটি ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ব্রিজ ও কালভার্ট, পাকা সড়ক, ইট নির্মিত সড়ক, কাঁচা সড়ক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা, কমিনিউনিটি স্কুল, মসজিদ মাদ্রাসা, মন্দির ও বাধের সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষয়ক্ষতি মিসিয়ে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৮৬ হাজার ৮১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। এ হিসাব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের।
অন্যদিকে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় জাতিসংঘ বাংলাদেশ কার্যালয় বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নির্ধারণে ও প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদন বলছে, বন্যায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য জেলা গুলো হচ্ছে, সিলেট মৌলবি বাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, ময়মনসিংহ ও শেরপুর জেলা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে সরকার মানবিক সাহায্য হিসেবে পহেলা এপ্রিল থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ৭ হাজার ২০ মেট্রিক টন চাল, ৯ কোটি ৪৪ লাখ নগদ টাকা, ১ লাখ ৪০ হাজার ১৩২ প্যাকেট শুকনা ও অন্যান্য খাবার, শিশু খাদ্য কেনার জন্য ৪০ লাখ টাকা, গোখাদ্য কিনতে ৪০ লাখ টাকা, গৃহ মজুরি-বাবদ ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা, ৮ হাজার ৭০০ বান্ডিল ঢেউটিন বরাদ্দ করেছে।
জাতিসংঘ বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রতিবেদন বলছে, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের আক্রান্ত জেলা গুলোয় ১৫ লাখ মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন ৫৪৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাশিয়া - ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশে^র অন্যান্য দেশের মতোই মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। ফলে বাজারে বাড়ছে নিত্য পণ্যের দাম। যা সীমিত আয়ের মানুষকে কষ্টে ফেলছে। সেখানে বন্যা আক্রান্ত মানুষের অবস্থান যে নাভীশ্বাস তা না বললেও সহজে অনুমেয়। তাই সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের এখন মানবিক কারণে তদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। এখন প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান করে বানভাসি মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সময়ের দাবি। আর তা যা যত দ্রুত সম্ভব ততোই মঙ্গল।