বিনামূল্যে নিরাপদ ও পর্যাপ্ত সুপেয় পানি প্রাপ্তি আমার অধিকার শীর্ষক উপকূলীয় সকল মানুষের সুপেয় পানি অধিকার নিশ্চিত কর গণসচেতনতামূলক সমাবেশ বরগুনা সিদ্দিক মঞ্চে শনিবার ১৩ মার্চ সকাল ১০টায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাগোনারীর ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত হয়।
জাগোনারীর নির্বাহী প্রধান হোসনে আরা হাসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট সঞ্জীব দাস। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বরগুনা জেলা এনজিও ফোরামের সভাপতি, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মোঃ আবদুল মোতালেব মৃধা, বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিবিডিপির নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন মিরাজ, বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মোঃ হাসানুর রহমান ঝন্টু প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট দীর্ঘদিনের। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পানি সংকটের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। সুপেয় পানির সমস্যা পুরো উপকূল জুড়ে বিস্তৃত। এই সমস্যা গুরুতর এবং বছর জুড়ে চলমান। বিশেষ করে সমুদ্র তীরবর্তী প্রাকৃতিক সম্পদ এবং সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত এবং অপরিকল্পিত ব্যবহার ইত্যাদি কারণে এই মুহূর্তে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিপদাপন্নতা খুবই ভয়াবহ। প্রয়োজনের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত, নদীর নাব্যতা হ্রাস, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, মাটি-পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নানামুখী প্রভাব এবং মনুষ্যসৃষ্ট কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির তীব্র থেকে তীব্রতর সংকট দেখা দিয়েছে। বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের উপকূলবর্তী ১৯টি জেলায় প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ মানুষের বসবাস। আধারযোগ্য পানি সংগ্রহ করতে পারেন না এদের প্রায় তিন কোটি মানুষ এবং দেড় কোটি মানুষ ভূগর্ভস্থ লবণাক্ত পানি পানে বাধ্য হচ্ছেন। খাবার পানি যোগানে এ অঞ্চলের মানুষের একেক ঋতুতে একেক উৎসের উপর নির্ভর করতে হয়। শুকনো মৌসুমে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে একটু খাবার পানির জন্য চলে হাহাকার। শুধুমাত্র একটু খাবারের পানি সংগ্রহে দিনের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় নষ্ট হচ্ছে৷।
একদিকে যেমন রোজকার পানির প্রয়োজন মেটানোর লড়াই, অন্যদিকে রয়েছে লবণাক্ত পানি পানের উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্যঝুকি। খাবার পানি, রান্নাবান্নাসহ দৈনন্দিন কাজে লবণাক্ত পানি ব্যবহারের ফলে অনেকেই উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। যার ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভূ-উপরিস্থ দূষিত প্রাণী গ্রহণের ফলে এ অঞ্চলের ডায়রিয়া, পেট ব্যথা, জ¦রসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ লেগেই থাকে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, সুপেয় পানি মানুষের জীবনযাপনের এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। যার সাথে সকল মৌলিক অধিকারসমূহ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশুদ্ধ পানি সকল ধরনের মানবাধিকারের ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত। ২০১০ সালে সুপেয় পানি পাওয়ার অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট ৬ এর প্রস্তাবিত বৈশ্বিক সূচক ৬.২ এ ২০৩০ সালের মধ্যে নিরাপদ ও স্বল্পমূল্যের খাবার সকলের সর্বজনীন ও সমতাভিত্তিক প্রবেশাধিকারের লক্ষ্য অর্জন এ কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু পানি অধিকারে সার্বজনীন ন্যায্য ও টেকসই প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদী তেমন কোনো পরিকল্পনা চোখে পড়ে না।
বাংলাদেশের উপকূলীয় সাতটি জেলায় অঞ্চল ভিত্তিক সুপেয় পানির সংকট এবং দাবিগুলো তুলে ধরতে জেলা পর্যায়ে প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে প্রচারণা ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।