খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ডুমুরিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে দক্ষিণ দিকের বাজারের অভ্যন্তরীন সড়ক। এই সড়কের দু'পাশে নির্মাণ করা হয় ফুটপাত-কাম ড্রেণ। ওই ড্রেনের পাশ্ববর্তি ভবন মালিকদের অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের কাছে দোকান ঘরের সাথে ফুটপথও ভাড়া দিয়ে ব্যবসা পেতে নিয়েছেন।
যে কারণে ফুটপাত দিয়ে নারী- শিশুরা চলাচল করতে পারেন না। তাছাড়া বাজারের মধ্যে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে পণ্যবাহি পিকআপ,নছিমন,মহেন্দ্র চলাচল করায় জনভোগান্তিতে রূপ নিলেও দখলদার উচ্ছেদে বাজার কমিটি বা প্রশাসনের কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলা সদর বাজারের ব্যস্ততম ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী। এতে পথচারীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। অপর দিকে সরু পথ দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে না পারলে কোথাও অগ্নিসংযোগ ঘটলে বাজার ভস্মীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি বাজারের মধ্যে অনেকের আবাসিক ভবন রয়েছে যেখানে মানুষের বসবাস। কোন রোগী অসুস্থ হলে এ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে পারে না। বাজারের এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে ডুমুরিয়া থানা, ভূমি অফিস, রয়েছে কয়েকটি রাষ্ট্রায়াত্ব ও বেসরকারি ব্যাংক, বীমা অফিস, সদর ইউনিয়ন পরিষদ, ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডুমুরিয়া মাদ্রাসা, উলা বাজার, বানিয়াখালী বাজার শরাফপুর বাজারসহ দক্ষিণ অঞ্চলের গ্রামগুলোতে যাতায়াতের একমাত্র পথ। অথচ বাজারের প্রবেশ মুখে জনৈক ব্যক্তিদের বহুতল ভবনের নীচতলায় মার্কেট হিসেবে ভাড়া দিলেও সেই সাথে ফুটপাতও ভাড়া দেয়া হয়েছে। আতিয়ার রহমানের ভবনের নীচ তলার ফুটপাতে হোটেল ব্যবসায়ী গ্যাসের স্টোভ স্থাপন করে রান্না করাসহ ভাজি-ভূজির কাজ করে। গরম তেল পথচারীদের গায়ে ছুটে আসে। এরই পাশে জনৈক মাহবুর নামের এক ব্যক্তির ফলের দোকান। পথচারীদের সাথে মাহাবুরের আচরণ অনেকটা সন্ত্রাসী প্রকৃতির। শুধু ফল ব্যবসায়ী মাহাবুরই নয় অধিকাংশ ফল ব্যবসায়ী ফলের বর্জ্য সড়কের উপর ফেলে যা বৃষ্টি হলে সড়কের উপর বৃষ্টির পানি জমে। এ ছাড়া হালদার মার্কেটের সামনের ফুটপাতে কয়েক জন ফল ব্যবসায়ী পসরা সাজিয়ে বসেন। যত্রতত্র ফলের কার্টনের খড়, কুটো কাগজ ফেলে পরিবেশ নষ্ট করে ফেলে। এ ছাড়া রাস্তার দু'পাশের অধিকাংশ মুদী দোকানী ফুটপথের উপর তেলের ড্রাম রেখে দখল করে আছে।
দিনের পর দিন এ অবস্থা চললেও বাজার কমিটি ও উপজেলা প্রশাসন ফুটপাত দখলমুক্ত করার কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
মাহমুদুল ইসলাম নামে এক পথচারী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানালেন, বাজারের মধ্যে প্রবেশের মুখে দুপাশেই রয়েছে ফল ব্যবসায়ীরা। তারা ফুটপাত এমনকি রাস্তার উপরেই ফলের ঝুড়ি ডালা রেখে ফল বিক্রি করেন।
আক্তার হোসেন নামে এক চাকুরীজীবী বলেন, বাজারের মধ্য দিয়ে অফিসে যেতে হয়। ভ্যানে চড়ে যেতে অনেক সময় লাগে। এর থেকে কম সময়ে হেটে অফিসে যাওয়া যায়। বাজারের ভিতরের অবস্থাও একই রকম। দোকানের পসরা সাজিয়ে রেখে মাত্র ৩ থেকে ৪ ফুট গলিতে পরিণত করেছে।
এক একটি গলি ১০ থেকে ১৬ ফিট পর্যন্ত চওড়া। কিন্তু দখলদারেরা গলি দখল করে দোকানের পসরা সাজিয়ে রেখে মাত্র ৩ থেকে ৪ ফুট গলিতে পরিণত করেছে। এতে করে বাজারে মালামাল নিয়ে ভ্যান ঢুকতে পারে না। কোথাও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিস গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারবে না। বাজার কমিটির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিৎ। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতের কোন উপায় নেই। ভ্রাম্যমাণ ও অস্থায়ী হকারদের কারবারে (ব্যবসায়ে) ফুটপাত ধরে হাটার মতো নেই। বরং বেগ পেতে হয় সাধারন মানুষের চলাফেরায়।
ফুটপাথ ও ড্রেণ দখল করে দোকান ও ব্যবসা করেন এমন কিছু ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত উচ্চমহলকে ম্যানেজ করে ব্যবসা পরিচালনা করি।
এ ব্যাপারে বাজার কমিটির আহ্বায়ক শ্যামল কুমার দাশ বলেন, আমরা বার বার ফুটপাত ছেড়ে ব্যবসা করার কথা বললে অস্থায়ী এসব ব্যবসায়ীরা কর্ণপাত করে না। বাজারের প্রবেশমুখে দু'দিকে ফল ব্যবসায়ীরা এমনভাবে দখল করে ব্যবসা করছে যাতে ২০ ফুটের সড়ক ৮/১০ ফুটে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা পরিচালনা বন্ধ করে পথচারীদের চলাচল নির্বিঘœ করতে একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ যেয়ে কথা বলেছি। কিন্তু দখলদার উচ্ছেদ করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা হয়েছে। অবৈধভাবে রাস্তা/ফুটপথ দখলকারী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।