যখন ৪র্থ শ্রেনীতে পড়ি স্কুলে গিয়ে বাদাম বিক্রি করতাম। এভাবে পার করেছি মাধ্যমিকও। দীনমজুর বাবা কখনও ঠিকমত স্কুলের বই কিনে দিতে পারেননি। সে সময়ে টাকার প্রয়োজন হলেই পরের ক্ষেতে কামলার কাজ করতাম। এস এসসি পাশের পর নিজের লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়াতাম। এভাবে যশোর এম এম কলেজ থেকে অনার্স মাষ্টার্স শেষ করে ডিভি লটারী পেয়ে এখন আমেরিকা প্রবাসী। কথা গুলো ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মান্দারবাড়িয়া গ্রামের শিক্ষিত যুবক বোরহান উদ্দীনের। তিনি ওই গ্রামের সুলতান লস্করের পুত্র। প্রবাসে থেকেও তিনি নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন সিএসবি এগ্রো লিমিটেডের সমন্বিত গরুর খামারও দধি মিষ্টান্ন ভান্ডার। যেখানে কাজ করছেন তার নিজ গ্রামের ২২ জন বেকার যুবক। এ প্রতিষ্ঠান ক্রমোন্নতির মাধ্যমে অন্তত নিজ গ্রামের বেকারত্ব ঘোচাতে চান তিনি।
কালীগঞ্জের রাখালগাছি ইউনিয়নের মান্দারবাড়িয়া গ্রামের বোরহান উদ্দীনের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, সিএসবি এগ্রো লিমিটেডের বিশাল ৩ টি টিনের সেট। যে সেটের একটিতে গড়ে তোলা হয়েছে গরুর দুগ্ধ খামার, আর দুটিতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে করানো হচ্ছে গরুর মোটা তাজাকরণ। এদিকে নিজের ফার্মের খাঁটি দুধ দিয়েই গ্রামের বাজারে গড়ে তোলা হয়েছে সিএসবি দধি ও মিষ্টান্ন ভান্ডার। যেখানে কর্মরত রয়েছেন নিজ গ্রামের সবচেয়ে বেশি অসহায় ২৫ বেকার যুবক। খাঁটি দুধের দধি মিষ্টান্ন আশপাশের কয়েক জেলার মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে। এ মিষ্টান্ন দুর-দুরান্তের পাইকারেরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। উদ্যোক্তা বোরহান উদ্দীন জানান, তিনি নিজে শৈশবে খুব কষ্ট করেছেন। মোট ৭ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। বাবার অভাবের সংসারে প্রতিনিয়ত ক্ষুধার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। স্কুল জীবন থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কুলে বিক্রি ও পরের ক্ষেতে কামলার কাজ করেছেন। এভাবেই ২০০৪ সালে এম,এম কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স মাষ্টার্স শেষ করে ডিভিতে আমেরিকার প্রবাসি হয়েছেন। কয়েকদফা ছুটিতে দেশে এসে গ্রামের বেকার যুবকদের দুরাবস্থার কথা শুনে বেকারত্ব নিরাসনের চিন্তা মাথায় আসে তার। এরপর তিনি গড়ে তোলেন এ গরুর খামার ও মিষ্টান্ন ভান্ডার। তিনি বলেন, তার এ খামারের উদ্দেশ্য নিজের উন্নতির পাশাপাশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। শিক্ষিত এ যুবক বলেন, উৎপাদনশীল কোন কাজই ছোট নয়। যারা প্রবাসে আছেন তারা দেশে উদ্যোক্তা হয়ে উৎপাদনমুখী কিছু করতে উদ্যোগ নিলে একদিকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মজবুত হবে অপর দিকে দেশকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে ভূমিকা রাখা। তিনি বলেন, তার গ্রামের যারা বেশি অসহায় বেকার তাদের সকলেরই নিজের ফার্মে কাজের ব্যবস্থা করেছেন।
তিনি দৃড়তার সঙ্গে বলেন, কোন কিছু করতে গেলে বেশি টাকার প্রয়োজন হয় না। শুধু চেষ্টা আর ইচ্ছে শক্তিটাই বড় ব্যাপার। তিনি বলেন, তার এ ফার্মে কোনটাই অপ্রোজনীয় নয়। একটি সেটে গরু মোটা তাজাকরন করছেন। গত ঈদুল আযহায় তিনি মোট ২২ টি গরু ৩৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। অন্য সেটটিতে দুগ্ধ খামার গড়ে তুলেছেন। বাকি সেটটিতে ফার্মের ছোট গরুগুলো পালন করা হচ্ছে। তার ফার্মে এখনও ছোট বড় মিলে মোট ৭৫ টি গরু আছে। ফার্মের গোবর এলাকার কৃষকেরা কিনে জমিতে দিয়ে জৈব সারের চাহিদা পূরন করছে। ভবিষ্যতে এ ফার্ম আরও বড় করে কৃষিভিত্তিক ফার্মে পরিণত করবেন বলে তার আশা।
রাখালগাছি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ইজ্জত আলী বলেন, বোরহানুদ্দিন বাবলু অত্যন্ত একটি ভালো ছেলে এবং সে একজন তরুন উদ্যোক্তা। আমেরিকা প্রবাসি হয়েও তার বাড়িতে গড়ে তুলেছে সিএসবি এগ্রো লিমিটেড নামে বিশাল এক গরুর খামার। সেখানে এলাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষের ভেজালমুক্ত দধি ও মিষ্টি জাতীয় খাবারের ব্যবস্থা করছেন। আমি আশা করবো বোহানুদ্দিন বাবলু হবেন দেশের বেকার যুবদের অনুকরনীয়।
রাখালগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম মন্টু বলেন, আমেরিকা প্রবাসি বোরহানুদ্দিন বাবলু ডেইরি ফার্ম করেছেন। আবার নিজ ফার্মের খাঁটি দুধের ছানা দিয়ে তৈরী করছেন ভেজালমুক্ত দই, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন। তার এ যৌথ খামারে অনেক্রেই কর্মসংস্থান হয়েছে। তাদের সবারই বাড়ি তার নিজ গ্রামে। এরা একসময় বেকার ছিল। ফলে বোরহান উদ্দীন একজন প্রবাসী হয়েও গ্রামের বেকারত্ব একাই রুখে দিচ্ছেন। এজন্য তিনি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।