মেয়াদোত্তীর্ন বরিশাল দক্ষিন জেলা যুবদলের কমিটি গঠণ নিয়ে তোড়জোর শুরু হয়েছে। কমিটিতে ঠাই পেতে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে লবিং ও তদ্বির। তবে ত্যাগী, স্বক্রীয় ও যোগ্য নেতৃত্বের অধিকারিরাই এ কমিটিতে ঠাই পাবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দরা।
নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে নেতৃত্বে সাবেক ছাত্রনেতারাও আসতে পারেন অথবা যুবদলের সাবেক কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দদের হাতেও চলে যেতে পারে নতুন নেতৃত্ব। সেক্ষেত্রে ছিটকে পরতে পারে সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। ফলে যুবদলের নতুন কমিটি নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যতা দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী মাসের প্রথমার্ধে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন এ আহ্বায়ক কমিটি হতে পারে। তার আগে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত কয়েকমাস যাবৎ নেতাকর্মীদের স্বক্রিয়তা ও যোগ্যতা বিবেচনায় শুমারিও করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। পদ প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছে আহ্বায়ক পদে সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচএম তছলিম উদ্দিন, সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বাবলু, যুগ্ন আহ্বায়ক বা সদস্য সচিব পদে শোনা যাচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ন কমিটির সহসভাপতি ফজলুল বারি চয়ন, সহসভাপতি রুহুল আমীন কায়েস, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাওলা রাব্বি শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন ও সম্পাদক মোঃ হাবিবুল্লাহ। তারা সকলেই ইতোমধ্যে কেন্দ্রে লবিং তদ্বিরও শুরু করেছে পদ-পদবীর জন্য।
দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে অক্টোবার মাসে মেয়াদোর্ত্তীন দক্ষিন যুবদলের কমিটি গঠন করা হয় সুপার ফাইভ কমিটি। পরে দুইবছর পরে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ গঠন হয় ২০১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্নাঙ্গ কমিটি। তিনবছর মেয়াদী ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালে। ২০২১ সালের ৯ জানুয়ারি ওই কমিটির সভাপতি পারভেজ আকন বিপ্লব মৃত্যুবরন করেন। এরপর থেকেই মেয়াদোর্ত্তীন কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সুপার ফাইভে আসার পদ প্রত্যাশীদের তালিকায় থাকা এইচএম তছলিম উদ্দিন বলেন, তিনি দলের জন্য কি করেছেন তা দলের নেতাকর্মীরা সবাই জানে। সভাপতি মারা গেলেও দলে তার প্রভাব তিনি পরতে দেননি। প্রতিটি কর্মসূচিতে সকলের সহযোগীতায় হাজার হাজার লোকের সমাগম করতে পেরেছেন। তৃনমূল থেকে রাজনীতি করে তিনি দলের জন্য জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। হামলা মামলার স্বীকার হয়েছেন।
আরেক সভাপতি প্রত্যাশী সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, নিয়মানুযায়ী সাবেক সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা পুনরায় গঠিত হওয়া কমিটিতে পদ পান না। তাই তিনি প্রটকল অনুযায়ী সভাপতি পদ প্রত্যাশী। দলের দুঃসময়ে তিনি দলের সাথে বেঈমানি করেননি দাবী করে তিনি বলেন, দল করতে গিয়ে হামলা, মামলা ও কারাভোগ করেছি।
যুগ্ম আহ্বায়ক পদ প্রত্যাশীরা জানান, ১৪/১৫সালে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তারা অংশগ্রহণ করেছেন। পুলিশের নির্যাতন সহ্য করেছেন। বাসা বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি। তবুও দল ছেড়ে যাননি। প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছি। সবারই প্রত্যাশা দল তাদের মূল্যায়ন করবেন।
এদিকে অযোগ্য নেতৃত্ব নিয়ে বিপাকে রয়েছে বরিশাল জেলা যুবদল। সাবেক সভাপতি ও সাধারন সম্পাদককে যারা তেল দিয়ে তোশামত করে পদ-পদবি নিয়েছেন তাদের বেশীরভাগই এখন নিস্ক্রিয়। সুবিধাভোগী অযোগ্য এসব নেতারা পদ-পদবী গ্রহন করে দলীয় কর্মসূচিতে তেমন একটা অংশগ্রহণ করেনি। এমনকি দুই একজন যারা মাঝে মধ্যে অংশগ্রহণ করেছে তাদের সাথে নেই কোন কর্মী। ১০জন কর্মী নিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করবে এমন নেতার সংখ্যা জেলা যুবদলে খুবই কম। বেশ কয়েকজন নেতার কাছে দলীয় কর্মসূচি হয়ে পরেছে শুধু ফেসবুকমুখী। আর এদের নিয়ে বিপাকে রয়েছে দলে দায়িত্বে থাকা নেতৃবৃন্দরাও। দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, অযোগ্য এবং নিস্ক্রিয় নেতাদের এমন তালিকায় রয়েছে সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, সহ সাধারন সম্পাদকরাও। সহ-সভাপতির মধ্যে রয়েছে জাহিদ হোসেন, সাইফুল ইসলাম আব্বাস, কামাল হোসেন রুবেল, একেএম ফজলুল বাড়ি চয়ন, মিজানুর রহমান, জাকির হোসেন ফকির, শাহারিয়ার অসীম, মহসিন মিয়া লিটন, হরি উদ্দিন মোঃ ফিরোজ, মোঃ রুবাইয়াত আহমেদ, অ্যাডভোকেট মোর্শেদ মামুন, নুরুল আমীন মোল্লা, মাসুদ হোসেন মোল্লা, যুগ্ম সাধারন সম্পাদকদের মধ্যে রয়েছেন, মনিরুল ইসলাম, উলফত রানা রুবেল, রফিকুল ইসলাম রাহাত, মজিবুর রহমান মাসুদ, কাইয়ুম উদ্দিন ডালিম, খবির সিকদার, সাহাবুদ্দিন আকন সাবু, হারুন অর রশিদ, মোজাম্মেল হোসেন লাদেন, শোয়েব আলম খান শাহীন। সহ সাধারন সম্পাদকদের তালিকায় রয়েছেন আমিরুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান মনির, মাকসুদুর রহমান সজল, সোহেল খান, সাইদুল ইসলাম ও সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া লিপু।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদের মধ্যে কেউ মূল দল বা অন্য অঙ্গ সংগঠনে চলে গেছে, কেউ বিদেশ গিয়েছে কেউ মাদক নিয়ে আটক হয়েছে কেউ ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। কেউ কেউ চাকরিতে ঢুকেছে আবার কেউ কেউ পুলিশের ভয়ে রাজনীতি থেকে দুরে সরে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক মোনায়েম মুন্নার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার জানান, আপনারা নিস্ক্রিয় নেতৃবৃন্দদের তালিকা প্রকাশ করেন। আমরাও ভালকরেই জানি কারা স্বক্রিয় আর কারা নিস্ক্রিয়। অনেকেই শেষ সময়ে স্বক্রিয় হয়ে উঠেছেন। নেতৃত্ব তাদেরকেই দেয়া হবে যারা যোগ্য। এক পদে একাধিক প্রার্থী থাকতেই পারে। দল যোগ্যতার মাপ কাঠিতেই নেতৃত্ব দেবে। তিনি আরও বলেন, সরকার বিরোধী আন্দোলনে যারা ভূমিকা রেখেছে তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে। ত্যাগ এবং হামলা মামলার বিষয়গুলোও মূল্যায়ন করা হবে কমিটিতে ঠাই পেতে হলে। সেলক্ষ্যে শীঘ্রই কমিটি গঠনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।