রূপসায় আদালত থেকে ডিগ্রি ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত পৈত্রিক জমি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্তৃক উচ্ছেদের আওতায় ফেলে দোকান ও বাড়ি-ঘর ভাঙ্গার প্রস্তুতির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১ টায় খুলনা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে জমির মালিক রঞ্জন কুমার দাস এর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার দোকান ঘরের ভাড়াটিয়া রূপসা চিংড়ি বণিক সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান শেখ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে আমার বাবা রাজাকারের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হন। আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির মধ্যে রূপসা উপজেলার বাগমারা মৌজার জেএল নং ২৫, সিএস খতিয়ান নং ৪৫ ও ৫৯, এসএ খতিয়ান নং ১০৩ ও ১৭৯ এর ১২৬ নং দাগে ২৫ শতক ও ১৩২ নং দাগে ১.২৬ একর জমি রয়েছে। ওই জমি বাংলাদেশ রেলওয়ে বা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর হুকুম দখল না করলেও ১৯৯৫ সালে খুলনা জেলা প্রশাসকের এলএ শাখা ওই জমি হুকুম দখল বলে দাবি করে তাদের দখলে নেয়ার চেষ্টা করলে আমি ০৮/০৪/১৯৯৫ তারিখ সহকারী জজ আদালত রূপসা, খুলনায় চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার জন্য মামলা দায়ের করি। যার মামলা নং ২০/১৯৯৫। অবশেষে ১৯৯৬ সালের ২৫ জুলাই আমি আদালত থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত হই। সেইসাথে আদালত ওই জমির উপর চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ওই বছরই সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর আমাদের ওই জমি তাদের দাবি করে সেখানে স্থাপনা তৈরী শুরু করে। এ ব্যাপারে ২০০৮ সালে সহকারী জজ-৫ নং আদালত, খুলনায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৬৪ জনকে বিবাদী করে ভাইলেশনের মামলা দায়ের করি। যার মামলা নং মিস-৫৮৭/০৮। মামলা চলাকালীন পূর্বের মামলার রায়সহ সকল প্রকার কাগজ-পত্র পর্যালোচনা করে ২০০৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আমাদের পক্ষে রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ের পর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পক্ষে আদালতে আপীল করা হলে তা খারিজ হয়ে আমাদের পক্ষের চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। জামির সকল কাগজ-পত্র আমাদের নামে রয়েছে। প্রতিবছর বাণিজ্যিক হারে ওই জমির কর-খাজনা প্রদান করে আসছি। ওই জমিতে ৩৪টি চিংড়ি মাছের ডিপো এবং বেশ কিছু ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য তিন কোটি টাকা। সম্প্রতি ওই জমি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর তাদের হুকুম দখলের সম্পত্তি বলে দাবি করে দোকান ঘরে লাল ক্রস চিহ্ন দিয়ে উচ্ছেদ করার ঘোষণা দেয়।
এ বিষয়ে প্রতিকারের জন্য আমি আমার মামলার রায়ের কাগজ-পত্র বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করলে গত ৮ সেপ্টেম্বর সওজ, খুলনা জোন এর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং এষ্টেট কর্মকর্তা অনিন্দিতা রায় (উপসচিব) বয়রা অফিসে আমাদের ডাকেন। তিনি আদালতের সকল কাগজ-পত্র দেখে অনেকটা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলেন, এসব কাগজ তৈরী করা যায়।
আমার জমির উপর নির্মিত এসব ঘর ভেঙ্গে দিলে একদিকে আদালত অবমাননা করা হবে, অন্যদিকে আমি মারাত্বকভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হবো। পাশাপাশি হিমায়িত চিংড়ি শিল্প প্রতিষ্ঠানে চিংড়ি সরবরাহে ব্যবসায়ীরা প্রতিবন্ধকতার শিকার হবে। কেননা দেশের অর্থনীতিতে চিংড়ি শিল্পের বড় ধরনের অবদান রয়েছে। খুলনাঞ্চলে যেসব চিংড়ি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার বেশির ভাগই পূর্ব রূপসা এলাকায় অবস্থিত। এই এলাকা থেকে বিদেশে চিংড়ি রপ্তানীর মাধ্যমে সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশীক মুদ্র অর্জন করে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার জমির উপর থাকা স্থাপনা রক্ষায় খুলনা জেলা প্রশাসক ও সওজ এর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জমির মালিক রঞ্জন কুমার রায়, ব্যবসায়ী রিপন, কামরুল ইসলাম মোল্লা, টুটুল, দাউদ, তাশরাফ মুন্সি ও জাহিদ হোসেন।