এই বয়সে ছেলের হাতের মাইর আর সহ্য হয় না বাবা! এবার স্বামীর বসত ভিটে থেকেও মা-বোনকে বের করে দিয়েছে আমার একমাত্র ছেলে সাইফুল। এই যুবতী মেয়ে সেলিনা (৩০)কে নিয়ে আমি কোথায় যায় বলো বাবা। শুক্রবার সকালে এ প্রতিবেদকের কোটচাঁদপুর হাসপাতাল রোডের অফিসে এসে সত্তরোর্ধ বয়সী বিধবা বৃদ্ধা নূরুন নাহার এ ভাবেই তাদের উপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের কথা বলতে যেয়ে মা-মেয়ে দু’জনেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর প্রজেক্ট পাড়ার মৃত আমির হামজার বৃদ্ধা স্ত্রী নুরুন নাহার অভিযোগ করেন, আমার একমাত্র ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪০) ও তার স্ত্রী রাফেজা আক্তার (৩৩)-এর হাতে দীর্ঘ দিন ধরে আমি ও আমার অনার্স পাশ করা মেয়ে সেলিনা আক্তার মানষিক ও শারিরীক ভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছি। স্বামীর বসত ভিটায় এতদিন পড়ে ছিলাম আমার একমাত্র আদরের ছেলে সাইফুল কাছে থাকবে বলে। সেই ছেলে ও তার বউ আমার ও আমার মেয়েকে মারধোর করে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে। এখন আমরা কোথায় যাব বাবা, বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন!
মেয়ে সেলিনা আক্তার বলেন- আমার বাবা মারা গেছেন প্রায় ৭ বছর আগে। আমরা দুই বোন এক ভাই। বড় বোন তার শ্বশুর বাড়ীতে থাকে। আমার দেড় বছর আগে বিয়ে হলেও স্বামী প্রবাসে থাকায় আমাকে শ্বশুর বাড়িতে তুলে নেয়া হয়নি যে কারণে আমি মায়ের কাছেই থাকি। আমার এবং মায়ের খরচ যোগান দেন আমার প্রবাসী স্বামী। আমি বহু কষ্ট করে হাতে সিলাইয়ের কাজ করে টাকা যোগাড় করে বিয়ের আগেই অনার্স পাশ করেছি। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভাই সাইফুল ইসলাম ও ভাবী রাফেজা সামান্য বিষয় নিয়ে আমার ও বৃদ্ধা মায়ের উপর মানষিক ও শারিরীক নির্যাতন করে আসছে। গত মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বাড়ীর জমি বিক্রি করার জন্য মায়ের উপর চাপ দেন ভাই সাইফুল। মা জমি বিক্রি করতে না চাইলে মা’কে মারধোর করেন। এ সময় আমি তার প্রতিবাদ করলে ভাই ও ভাবী মিলে আমাকে বেধড়ক মারপিট করে বৃদ্ধ মা ও আমাকে জোর পূর্বক বাড়ী থেকে বের করে দেয়। উপায় না পেয়ে কোটচাঁদপুর থানায় আমরা হাজির হয়ে আমি বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দাখিল করি। জানিনা কোন কারণে থানা পুলিশ এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। আজ ৪/৫ দিন অন্যের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছি ভাইয়ের মারধোরের ভয়ে বাড়ীতে যেতে পারছিনা। কি করবো কোন কুল কিনারা পাচ্ছিনা। তাই বাধ্য আপনার কাছে এসেছি। আপনাদের (সাংবাদিকদের) মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আমাদের (মা-মেয়ের) একটায় দাবী অন্তত মানবিক দিক বিবেচনা করে যাতে এ সমস্যার দ্রুত ব্যবস্থা নেন।
বিষয়টি নিয়ে কোটচাঁদপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মঈন উদ্দীন “ এফএনএসকে” বলেন- মা ও মেয়ে এসে একটি অভিযোগ করে গেছেন। বিষয়টি তদন্তের ভার একজন এসআইকে দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে কি ধরণের ব্যবস্থা নেয়া যায় দেখবো।
বিষয়টি আরো জানার জন্য অভিযুক্ত সাইফুলের কর্মস্থলে যেয়ে তাকে না পেয়ে মোবাইলে ফোন দিলে সাংবাদিকের নম্বর বুঝতে পেরে সাইফুল মোবাইল রিসিভ না করে বার বার কেটে দেন।