হয়নি পর্যাপ্ত বৃষ্টি। পানির সংকট। এই পানি সংকটের কারণে শাপলা শালুক আর পানি ফলের দেশ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরানের ভাটি অঞ্চলের জলায় পরিপূর্ন বিলগুলি এখন অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে। ফলে এখন আর উদ্ববৃত্তভাবে উৎপাদন হচ্ছে না বহুজাতিক জলজ উদ্ভিদ ও মাছ।
বিল গুলিতে পানি কমে যাওয়ায় বিলের মাঠ গুলি শুকিয়ে দেখা দিয়েছে শুকনো কাদাঁ মাটির বিশাল মাঠ। ফলে এসব বিলের মাঠ এখন রুপান্তুরিত হয়েছে কৃষকের আবাদি জমিতে। তাছাড়া আগাছা নাশক, কীট নাশক, রাসায়নিক সার ও ফসলের মাঠে বিষ প্রয়োগের কারণে তা ছড়িয়ে গিয়ে প্রকৃতিতে বিরুপ প্রভাব পড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে জলজ উদ্ভিদ ও মাছ।
উপজেলা মৎস্য দপ্তর, কৃষি অধিদপ্তর ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মরিচপুরান ইউনিয়নে উল্লেখ্যযোগ্য জলায় পরিপূর্ন বিলগুলির মধ্যে উল্লা বিল আয়তনে প্রায় প্রায় ৮০ একর, গাইমারী বিল প্রায় ৫০ একর, কয়া বিল প্রায় ২০ একর, গেরাপচা বিল প্রায় ৫০ একর, বড়ডুবি বিল ৪০ একর জুড়ে বির্স্তৃত। এসব বিলে বর্ষার সময় পরিপূর্ন পানিতে সয়লাভ হয়ে মাছ আর জলজ উদ্ভদে ভরপুর থাকতো। এসব বিলের পানিতে বর্ষার সময়টাতে দেখা যেত ছাড়ানো শাপলা ফুলের বিশাল রাশি রাশি শীশ। দূর হতে দেখার মতো প্রাকৃতিক দৃশ্য। এসব শাপলা শালুক এলাকার কৃষক কৃষনীরা তুলে নিজেরা খেত এবং তা বাজারে বিক্রিও করতো। এছাড়াও পানি ফলের তো জুড়িই নেই। দারুন সুস্বাধু এই ফলটি পানিতেই জন্মে এবং এটিও বাজারে ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন হয়ে উঠেছিল। বর্তমানে এই পানির কারণে এসব ফল এখন অপর্যাপ্ততায় পরিনত হয়েছে। এলাকাবাসী হাশেম আলী (৫০), লাল মামুদ (৫৫), বৃদ্ধা মালেকা বানু (৬০) বলেন, আমাদের দেশের এই বিলে পানি কইম্যা যাইতাছে। আগের মত পানি নাই। আগে তো পানিতে ভরা থাকতো নৌকা দিয়া চলতাম। আর বিল তো মাছ আর শাপলা শালুকে ভরা থাকতো। এহন পানি কমায় মানুষ বিলে আবাদে করতাছে।
উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা মোঃ ফারুক আহসান বলেন, পানি ফল, শাপলা ফুল এগুলি প্রাকৃতিক। কীট নাশক, আগাছা নাশক, রাসায়নিক সার এগুলি স্প্রে করায় প্রাকৃতিক পরিবেশের উপড় প্রভাব পড়ে। এছাড়াও বিল মাটিতে এগুলির শুকনো বীজ ছিল এটিও কিছুটা নষ্ট হয়েছে। যে কারণে এগুলিতে সমস্যা হয়েছে। তবে পানি সল্পতা এর অন্যতম কারন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আলমগীর কবির বলেন, যদিও শাপলা ফুল ফুল জাতীয়। এসব ফুল ও পানি ফল আমাদের হিসাবে ওই ভাবে আসেনি। তবে যেহেতু মানুষের মাঝে এগুলির চাহিদা রয়েছে আমরা এই বিষয়টির আরো কিভাবে মানুষের মাঝে সহজ লভ্যভাবে বা বানিজ্যিকভাবে কৃষককে লাভবান পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে ব্যাপারে আমরা সেখানে কাজ করবো।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ এমদাদুল হক বলেন, আমরা এসব বিলে পানি থাকার সময় বিল নাসর্রী গুলিতে মাছ ছাড়া হয়েছিল সেগুলি বন্যার সময় ভেসে গেছে। এখন তো এসব বিলে পানির সল্পতা। বিলে পানি খুবই কম, মাছ নেই, শাপলা শালুক পানি ফলও আগের মত নেই। এখন এসব বিলের আশপাশে কৃষকের ফসল আবাদি জমিতে রুপান্তরিত হতে যাচ্ছে। তবে বিলে পানি বেশি হলে আবার আবার বিল ভরে উঠবে। এদিকে বিল গুলি যদি খনন করা হয় তবে এই বিল আবার তার পূর্বের রুপ ফিরে পাবে।