উন্নয়ন-সৌন্দর্য্যে প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে রাজশাহী মহানগরী। প্রশস্ত সড়ক, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, নির্মল বায়ু, সবুজ আর ফুলে ফুলে সাজানো সড়ক বিভাজক, কারুকাজ, উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা, দৃষ্টিনন্দন রাতের আলোকায়ন-এই নগরীকে করে তুলেছে আকর্ষণীয়। ইতোমধ্যে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য শহর হিসেবে দেশসেরা শহরে পরিণত হয়েছে রাজশাহী মহানগরী। এই নগরীকে সাজানোর সুনিপন কারিগর, আধুনিক রাজশাহীর রূপকার, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। নগরপিতার নিরলস পরিশ্রম, দূরদর্শী ও সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণেই রাজশাহীর আজকের এই খ্যাতি ও অর্জন বলে মন্তব্য করছেন নগরবাসীসহ এখানে ঘুরতে আসা ভ্রমণকারীরা। হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (রহ.) পূন্যভূমি ও জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের স্মৃতি বিজরিত পদ্মা বিধোত ৯৬.৭২ বর্গ-কিলোমিটার আয়তনের রাজশাহীতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস।
আর ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হন শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের সুযোগ্য সন্তান এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ‘চল বদলে দেই অনন্য’ শ্লোগানকে সামনে রেখে ওই নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮সালের ৫ সেপ্টেম্বর মেয়রকে শপথ বাক্য পাঠ করান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শপথের একমাস পর ৫ অক্টোবর ২০১৮ শতকোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। যে দায়িত্বভারের সময় হিসেবে গত বুধবার (৫ অক্টোবর) রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ৪ বছর অতিক্রম করে ৫ম বছরে পদার্পণ করেছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে মহানগরীর উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু বলেন, দায়িত্ব নিয়েই নগরপিতা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও রাজশাহীকে একটি পরিচ্ছন্ন, উন্নত ও বাসযোগ্য মডেল নগরীতে হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেন। শুরুতেই সিটি করপোরেশনে শৃঙ্খলা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন মাসের শুরুতে প্রদান করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নগরপিতা। এরপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন নগরীর পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সবুজায়নের দিকে। তাঁর গৃহিত পদক্ষেপে ধীরে ধীরে রাজশাহী পরিণত হয়ে উঠে সবুজ আর ফুলের নগরীতে। ২০১৬ সালে বাতাসে ক্ষতিকর ধূলিকণা কমানোয় বিশ্বের সেরা শহরে নির্বাচিত হয় রাজশাহী। পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য রাজশাহী সিটি করপোরেশন দ্বিতীয়বারের মতো অর্জন করেছে জাতীয় পরিবেশ পদক-২০২১। দেশের সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে ‘এনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি সিটি অব দ্য ইয়ার সম্মাননা’-২০২০ অর্জনের খ্যাতিও রয়েছে এই নগরীর।
মেয়র লিটনের নিরলস প্রচেষ্টায় রাজশাহীর যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে এসেছে আমূল পরিবর্তন। প্রধান প্রধান সড়কগুলোকে চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। নগরীর বুধপাড়া এলাকায় রেলক্রসিং এ নির্মিত হয়েছে রাজশাহীর প্রথম ফ্লাইওভার। সেখানে অবশিষ্ট দুই লেনের আরেকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। নগরবাসীর চলাচল নির্বিঘœ করতে আরো ৫টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ৫টি প্রস্তাবিত ফ্লাইওভারের নকশা চূড়ান্ত হয়েছে। দেশের সিটি করপোরেশনগুলোর মধ্যে রাজশাহীতে সর্বপ্রথম টানেল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
নগরীর আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় থেকে বিহাস পর্যন্ত প্রায় ১২ কি.মি. ফোরলেন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত বাইসাইকেল লেনসহ আধুনিক চারলেন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে বহুল প্রতিক্ষিত আলুপট্টি হতে তালাইমারী পর্যন্ত ৪ লেন সড়ক। নগর ভবন থেকে রাণীবাজার, মণিচত্ত্বর থেকে সদর হসপিটাল মোড় পর্যন্তসহ অনেক রাস্তা নাগরিকদের সুবির্ধার্থে প্রশস্ত করা হয়েছে। প্রতিটি সড়কের পাশে প্রশস্ত ড্রেন, ফুটপাত এবং সড়কের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপশহর থেকে নগরভবন ও রাণীবাজার থেকে সাগারপাড়া সড়ক প্রশস্তকরণ, রেলস্টশন থেকে ভদ্রা হয়ে তালাইমারিসহ মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ৩০টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন সড়কের কার্পেটিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
রাসিকের জনসংযোগ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাসিক মেয়র লিটনের ঐকান্তিক প্রচেষষ্টায় ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। আর এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজশাহী পরিণত হচ্ছে মডেল মহানগরীতে। রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ক্ষতিগ্রস্থ ও নতুন রাস্তা এবং নর্দমা নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সিএন্ডবি মোড়ে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মিত হয়েছে। মহানগরীর যানজট নিরসনে ভদ্রা, শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান চত্ত্বর, বর্ণালী, নতুন বিলসিমলা, বহরমপুর, রাজশাহী কোর্ট এবং নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিং-এ বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী ফ্লাইওভার নির্মাণের নক্সা প্রণয়নের কাজ শেষে টেন্ডার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৫০ কি.মি. করপোটিং সড়ক, ২৬৫ কি.মি. সিমেন্ট কনক্রিট সড়ক, ৩৫৬ কি.মি নর্দমা, ১০৪ কি.মি ফুটপাত নির্মাণ কাজ বাস্তবায়িত হবে। এর মধ্যে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে নতুন কার্পেটিং রাস্তা ৯৯কি.মি., কার্পেটিং রাস্তা পূনঃ নির্মান ১০৭ কি.মি. কার্পেটিং রাস্তা প্রশস্তকরণ ৪৫ কি.মি, নতুন সিমেন্ট কনক্রিট ১৮৫ কি.মি. সিমেন্ট কনক্রিট পূন:নির্মাণ ৮০ কি.মি এবং প্রাইমারী ড্রেন ৪.৫ কি.মি. সেকেন্ডারী ড্রেন ৬০ কি.মি. টারসিয়ারী ড্রেন ২৯২ কি.মি. নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে।
এছাড়া প্রকল্পের আওতায় গোরস্থানসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন, ৪টি কাঁচা বাজার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, নিরাপদ চলাচলে ফুটপাথ নির্মাণ, প্রাকৃতিক জলাশয় সমূহের উন্নয়ন, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, গণশোচাগার নির্মাণ, ফুটওভার ব্রীজ ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া ৪টি ওয়ার্ড কার্যালয়-কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে ৬নং ওয়ার্ড কার্যালয় কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। মিঞাপাড়া পাবলিক লাইব্রেরী ও ধর্ম্মসভার অবশিষ্ট কাজের টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ব্যয়ে তালাইমারী মোড় হতে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ ৬ লেন সড়ক নির্মাণ চলমান রয়েছে। ৪.১০ কিলোমিটার সড়কের মাঝে থাকবে ২মিটারের সড়ক ডিভাইডার। ডিভাইডারের দুইপাশে ১০.৫ মিটারের সড়ক থাকবে। সড়কের উভয়পাশে ৩ মিটার অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলের লেন ও উভয় পাশের ৩ মিটার ফুটপাত ও ড্রেন। সড়কটির সৌন্দর্য্য বর্ধণে ডিভাইডার ও সড়কের উভয় পাশে বৃক্ষরোপণ করা হবে। সড়কটির কাজ শেষ হলে এটি হবে বিশ্ব মানের একটি সড়ক।
আর ৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর বন্ধগেট হতে সিটি হাট পর্যন্ত বর্তমান দুইলেন সড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ চলমান রয়েছে। ৩.৫৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রাস্তাটি ৮০ ফুট প্রশস্ত করা হবে। উভয়পাশে ২২ ফুট করে ৪৪ ফুট রাস্তা, রাস্তার উভয় পাশের্^ ৬ ফুট করে মোট ১২ ফুট ড্রেন ও ফুটপাত, ফুটপাত ও ড্রেনের উভয়পাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট স্লো মুভিং ভিহেকেল রাস্তা, রাস্তার ৪ ফুটের ডিভাইডার নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও চলছে ভদ্রা মোড় রেলক্রসিং হতে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ চারলেন সড়কের নির্মাণকাজ। ৪ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সড়কটি প্রশস্ত হবে ৮০ ফুট। ফোরলেনের সড়ক ছাড়াও দুই লেনের অযান্ত্রিক যানবাহন লেন, সড়ক বিভাজক ও দুইপাশে ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ করা হবে। সড়কগুলোর আইল্যান্ডে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে সবুজায়ন করা হবে। সড়কটি নির্মাণে অত্র এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
রাজশাহী মহানগরীর ১৯নং ওয়ার্ড ছোটবনগ্রামে চার কোটি ৪২ লাখ টাকায় শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে। শেখ রাসেল শিশুপার্কে উন্নতমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ আধুনিক প্রবেশ গেট, ওয়াটার বডি, দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ, মুক্তমঞ্চ, সবুজায়ন, কৃত্রিম টিলা, চলাচলের জন্য রাস্তা, পাবলিক টয়লেট সহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইডের ব্যবস্থা করা হবে।
রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু আরো বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের উত্তরপূর্ব কোণে বৃহত্তর ১৯নং ওয়ার্ডবাসীর এবং ২৬নং ওয়ার্ডের চন্দ্রিমা আবাসিক, মহানন্দা আবাসিক, পদ্মা আবাসিক এলাকার ও ১৭নং ওয়ার্ডের দক্ষিণপূর্ব এলাকাসহ মুশরইল এলাকার জনসাধারণের দাফনের জন্য পারিবারিক কবরস্থান ছাড়া কোন কবরস্থান না থাকায় অনেক দূর পথ অতিক্রম করে দাফন কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এতে জনসাধারণের বিশেষ অসুবিধা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন লাশ দাফনে খুবই দূর্ভোগে পড়তে হয়। এমতাবস্থায় জনস্বার্থে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়ণে জমি অধিগ্রহণ করে কবরস্থান ও ঈদগাহ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঈদগাহ মাঠটি খেলার মাঠ হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১৯টি জলাশয়ের মধ্যে ৮টি জলাশয়ে মাটি খনন ও সাইট ফিলিং কাজ এগিয়ে চলেছে। নগরীর গোলজারবাগ ঢালান পশ্চিমপ্রান্ত, লক্ষ্মীপুর বক্ষব্যাধী হাসপাতালের সম্মুখের পুকুর, লক্ষèীপুর নির্মাণাধীন শিশু হাসপাতালের সম্মুখে, সপুরা গোরস্থান-১ পুকুর, দড়িখরবোনা গোরস্থান, পবা নতুনপাড়া ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পূর্বপাশের্^, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ সংলগ্ন পুকুরের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ২৩নং ওয়ার্ডের কালীপুকুর উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঈদগাহ, গোরস্থান, শশ্মানঘাট উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কাজ এগিয়ে চলেছে। মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর ৪৪টি গোরস্থান, ঈদগাহ উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। নগরীর ২ ও ১৬নং ওয়ার্ডে ৬টি গোরস্থান ৫, ১১, ১৩, ১৪, ১৫নং ওয়ার্ডের ৬টি গোরস্থানের অভ্যন্তরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ১৭নং ওয়ার্ডের ১২টি গোরস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ২৩,৫, ১৬নং ওয়ার্ডের মোট ৮টি গোরস্থানের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, বিভিন্ন ওয়ার্ডের গোরস্থানের অভ্যন্তরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, রাজশাহী কেন্দ্রীয় ঈদগাহে মাটি ভরাট, বিভিন্ন গোরস্থানে ১৫টি জানাজা সেড ও ২৮টি ওযুখানা নির্মাণ কাজ চলছে।
এখানেই শেষ নয়, থেমে থাকা বহুতল বাণিজ্যিক ভবনগুলোর কাজ দ্রুত গতিতে শেষ করতেও তিনি গ্রহণ করেন যথাযথ উদ্যোগ। সিটি করপোরেশনের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালীকরণ, শিল্পায়ন ও বাণিজ্যের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি, মহানগরীর আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) এর আওতায় অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে উদ্যোগী সংস্থার অর্থায়নে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কার্যক্রম অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সোনাদিঘী ১৬ তলা ‘সিটি সেন্টার’ এর কাজ শেষ পর্যায়ে। আটতলা ‘স্বপ্নচূড়া প্লাজা’ অবকাঠামো সম্পন্ন হয়েছে ও আটতলা ‘দারুচিনি প্লাজা’ নির্মাণ কাজ চলছে। মুড়িপট্টিতে ১০তলা বৈশাখী মার্কেটের অবকাঠামো সম্পন্ন হয়েছে। ৫তলা বিলসিমলা সুপার মার্কেটের অবকাঠামো সম্পন্ন হয়েছে। রেশমপল্লী মার্কেটের কাজ সম্পন্ন শেষে দোকান বরাদ্দ করা হয়েছে।
পরিচ্ছন্ন মহানগরী যখন উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে, তখনই সারাবিশে^র মতো প্রিয় নগরীতেও আসে প্রাণঘাতি করোনার আঘাত। তবে করোনায় দমে যাওয়া নয়, সংক্রমণ প্রতিরোধে নগরপিতা ২০২০ সালের মার্চের প্রথম থেকেই গ্রহণ করেন নানামূখি উদ্যোগ। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গরীব ও অসহায় মানুষকে দফায় দফায় চাল, ডাল, আলু, সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। করোনায় আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি পৌছে দেওয়া হয় খাদ্য সামগ্রী। সংকটকালীন সময়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান করা হয়।
সড়ক, অবকাঠামো ও পরিবেশ উন্নয়নের পাশপাশি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ২০০৯ সালে রাত্রীকালীন বর্জ্য আবর্জনা অপসারন কার্যক্রম চালু করেছিলেন সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। যার ফলশ্রুতিতে একটি পরিচ্ছন্ন মহানগরীর উপহার পেয়েছেন নগরবাসী। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আরো আধুনিকায়নে নির্মাণ করা হয়েছে ১০টি অত্যাধুনিক এসটিএস। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সিটি করপোরেশন ও প্রিজম বাংলাদেশ স্থাপন যৌথভাবে কাজ করছে। নগরীর সিটি হাট এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট। মেডিকেল ও ক্লিনিক থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে প্ল্যান্টে নিয়ে গিয়ে সেখানে পরিশোধন ও অপসারণ করা হচ্ছে। ভারত সরকারের অর্থায়নে নগরীর পদ্মা পারিজাত লেক ও বিসিক সপুরা সিল্ক সংলগ্ন পুকুর এবং ৬টি মন্দির সংস্কার ও উন্নয়ন করা হয়েছে।
বেকারতরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান ও রাজশাহীর অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সিটি মেয়র লিটনের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এরইমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীতে তিনটি শিল্পাঞ্চল অনুমোদন দিয়েছেন। বিসিক শিল্প নগরী-২ এর ভূমি উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন ও চামড়া শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠারও অগ্রগতি হয়েছে।
পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র সিআরপির আদলে রাজশাহীতে একটি কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এই নগরপিতা। এটির নাম হবে সিআরপি রাজশাহী শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান ও জাহানারা জামান সেন্টার। এখানে প্রতি বছর ৫ হাজার মানুষ স্ট্রোকের চিকিৎসা ও অন্যান্য শারীরিক প্রতিবন্ধকতার চিকিৎসা পাবেন। এ ছাড়া স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি, কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তৈরি, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা নিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এ লক্ষ্যে কাটাখালি পৌরসভার কাপাসিয়ায় মাননীয় মেয়র মহোদয় পারিবারিক ১৫ বিঘা জমি সিআরপিকে দান করেছেন। গত ৬ ফেব্রুয়ারি সিআরপি প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর এর সঙ্গে চুক্তি ও জমিদান কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়। ৩১ মে সিআরপি কর্মকর্তাদের নিকট দানকৃত ১৫ বিঘা জমির কাগজপত্র হস্তান্তর করেন মেয়র লিটন।
এছাড়াও মেয়র লিটনের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় রাজশাহীতে হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্খিত বিকেএসপি। বিকেএসপির জন্য পবা উপজেলার খিরসন মৌজার অভয়ের মোড় এলাকায় প্রায় ১৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ২০২৩ সালের জুন মাসের মধ্যে বিকেএসপি প্রতিষ্ঠার কাজ সম্পন্ন হবে।
বিনিয়োগে আগ্রহী করতে রাজশাহীতে আগত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাষ্ট্রদূতদের নিকট এই শহরটিতে বিনিয়োগ গুরুত্ব তুলে ধরেছেন নগরপিতা। সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী ও সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি চুয়ার্ড রাজশাহীর মেয়রের সাথে বৈঠক করেন। ভারতীয় হাইকমিশনারের সাথে বৈঠককালে মেয়র লিটন ভারতের মুর্শিবাদের ধূলিয়ান থেকে রাজশাহী হয়ে পাবনার ঈশ^রদী হতে আরিচা পর্যন্ত নৌরুট চালু, রাজশাহীর সাথে কলকাতার বাস ও ট্রেন চালুর বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেন। এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মালদার সিঙ্গাবাদ রেলস্টেশন থেকে চাঁপাইনাবগঞ্জের আমনুরা হয়ে রাজশাহী হতে খুলনা হয়ে মংলা পোর্ট পর্যন্ত রেল যোগাযোগ চালু করা সম্ভব। এই নৌ, বাস ও ট্রেন যোগাযোগগুলো চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, উভয় দেশ লাভবান হবে।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল রাজশাহী-ঢাকা রুটে বিরতীহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে পূরণ হয় নগরপিতার অন্যতম একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। আর রাজশাহী এখন আলো-ঝলমলে শহর। প্রধান প্রধান সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আলোকায়ন করা হয়েছে। বিলসিমলা রেলক্রসিং হতে কাশিয়াডাঙ্গা, বিমান চত্বর হতে বিহাস ও আলুপট্টি হতে তালাইমারি সড়কে স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সড়কবাতি। এ ছাড়া নগরীর ১৫টি মোড়ে বসানো সুুউচ্চ বিদ্যুৎ লাইট পোল, যা নগরীকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ যথাযথভাবে উদযাপন করেছে সিটি করপোরেশন। নগর ভবনে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে, প্রকাশ করা হয়েছে ‘উত্তরবঙ্গে বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থ। নগরীর সিএন্ডবি মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল।
ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে ফিরেছে চাঞ্চল্য। ইতোমধ্যে সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধু স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টসহ নানা ধরনের খেলাধূলা। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় গত ২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ৫ম সাংস্কৃতিক মিলনমেলা। এতে দুই দেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব ও নাটোৎসবের মতো বিভিন্ন বর্ণিল আয়োজনে মুখরিত সাংষ্কৃতিক অঙ্গন।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও এই সিটি অর্জন কম নয়। ইপিআই কার্যক্রমে টানা ১০ জাতীয়ভাবে দেশসেরা হয়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। শতভাগ ইলেকট্রনিক ইপিআই কার্যক্রমেও সেরা হয়েছে রাসিক। মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা এবং করোনা সংক্রমণ মোকাবেলা, করোনা ভ্যাকসিন প্রদান সহ সকল ক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রেখে চলেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন।
শিক্ষানগরী রাজশাহীতে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশলী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ সহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশেষায়িত ও নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন এই নগরপিতা। নগরীতে আরো দুইটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। পুর্নাঙ্গ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সম্প্রতি একনেক সভায় ১৮৬৭ কোটি টাকার রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে।
শহীদ এ.এইচ. এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা রাজশাহী মহানগরীর একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। এটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন আরও আকর্ষনীয় করে গড়ে তুলতে উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চিড়িয়াখানার অভ্যন্তরে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী ‘নভোথিয়েটার’ নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। চিড়িয়াখানার অফিসের সামনের পুকুর সংস্কার ও কাদামাটি উত্তোলনের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের প্রদর্শণীর জন্য রঙ্গিন মাছ ছাড়া হয়েছে। চিড়িয়াখানার ২য় তলা ও ৩য় তলায় গেষ্ট হাউজ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
রাজশাহীর প্রধানতম পর্যটন এলাকা পদ্মাপাড়। বিনোদনের অন্যতম এ এলাকাটি আরও আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করতে পদ্মাপাড়কে ঘিরে নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহ মখদুম (রহ.) মাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি ও পদ্মা গার্ডেন সংলগ্ন এলাকায় আরেকটি দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজের সৌন্দর্যবর্ধনে করা হয়েছে নান্দনিক গ্রাফিতি। পাদ্মপাড়ের লালনশাহ পার্কের উন্নয়ন কাজও এগিয়ে চলছে। বিনোদনপ্রেমীর আকর্ষণ করতে পদ্মাপাড়ে ২টি বিচ বাইক ও ১০টি বিচ চেয়ার চালু করা হয়েছে।
নাগরিক সেবা জনগণের দৌরগোড়ায় পৌছে দিতে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। নগর ভবনে স্থাপন করা হয়েছে কন্ট্রোল এ- কমান্ড সেন্টার থেকে নগরীকে মনিটরিং করা হয়। নাগরিক সেবা জনগণের দাঁড়গোড়ায় পৌছে দিতে নগরীকে চারটি জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। সেই সাথে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আয়তন প্রায় ৩গুণ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান র্লিটনের নেতৃত্বে তিন হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন, আরো নতুন প্রকল্প গ্রহণসহ নানাবিধ উন্নয়নের মাধ্যমে আগামীতে রাজশাহী আরো আধুনিক, নিরাপদ, বাসযোগ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সেরা শহরে পরিণত হবে বলেও মন্তব্য করেন রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু।