ইতালির বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি জানিয়েছেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার এক সপ্তাহ পর ৩৪ জন সুস্থ মায়ের দুধের নমুনা পরীক্ষা করে তন্মধ্যে তিন-চতুর্থাংশের দুধে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। আগের গবেষণায় মানব কোষ, গবেষণাগারের প্রাণী এবং সামুদ্রিক প্রাণীতে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা হলো পাঁচ মিলিমিটারের কম দৈর্ঘ্যরে যেকোনো ধরনের প্লাস্টিকের টুকরো-বলে গার্ডিয়ানের খবরে প্রকাশ। এর আগে বাংলাদেশের দু’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সামুদ্রিক মাছ, লবণ ও চিনির মধ্যে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার উপস্থিতি পেয়েছেন। এছাড়া, বোতলজাত পানি থেকেও প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। এসব প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা খাদ্য চক্রের সাথে মিশে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। তাতে মানুষের নানাবিধ জটিল ব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্লাস্টিকের কণা মানবদেহে ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। এর ফলে যকৃৎ, ফুসফুসসহ অন্যান্য অঙ্গে সমস্যা হতে পারে। পাকস্থলীও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। উপরন্তু মানুষের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। ফরে নারী ও পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সর্বোপরি প্লাস্টিকে যেসব রাসায়নিক মেশানো হয়, সেগুলোও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। অপরদিকে, প্লাস্টিক মাটির সাথে মিশে যাওয়ার কারণে মাটির উর্বরা শক্তি কমে যাচ্ছে। তাতে ফসলের উৎপাদন হ্রাস পাঁচ্ছে। উপরন্তু প্লাস্টিকের কারণে জল, স্থল, পাহাড়, পর্বত, এমনকি মহাকাশেরও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তবুও প্লাস্টিকের পণ্য সস্তা ও ব্যবহার সহজসাধ্য হওয়ায় এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। সে কারণে এই পণ্য তৈরির কারখানাও দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তাতে অনেক লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
কিন্তু প্লাস্টিকের ব্যবহার যতই বাড়ছে, বিশেষ করে নন রি সাইক্লিং প্লাস্টিক, ততই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে মানুষ, প্রাণী ও প্রকৃতির। তাই প্লাস্টিকের ব্যবহার স্বল্প মেয়াদের জন্য লাভজনক হলেও দীর্ঘমেয়াদের জন্য চরম ক্ষতিকারক। তাই এই ক্ষতির হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। সে জন্য ননরিসাইক্লিং প্লাস্টিকের উৎপাদন, বাজারজাত ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। এ দায়িত্ব সরকারের। এছাড়া, এ ব্যাপারে সচেতন মানুষ, পরিবেশবিদ ও পরিবেশবাদীদের সোচ্চার হতে হবে। মিডিয়ারও এ ব্যাপারে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করা দরকার। ইতোমধ্যেই অনেক কয়েকটি দেশে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে দু’একটি দেশে এটা করলে হবে না। একযোগে বিশ্বব্যাপীই একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করে তা কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে। তবেই প্লাস্টিকের দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদেরও সচেতন হওয়া আবশ্যক। কারণ, একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাষ্টিক শুধু শরীর ও পরিবেশের জন্যই ক্ষতিকারক নয়, আর্থিভাবেও ক্ষতিকর। কারণ, প্লাষ্টিকের চায়ের কাপ। দোকানীরা প্রতিটি কাপের দাম নেয় এক টাকা। তেমনি বিভিন্ন পণ্যের মূল্য অনেক বেশি হয় প্লাষ্টিক বক্সের কারণে! অন্যদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে প্লাষ্টিক ধ্বংস করার বেশ কিছু পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। সেসব দেশ-বিদেশের সর্বত্রই ব্যবহার করতে হবে। তাহলেই প্লাষ্টিকের দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।