আশাশুনি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুধহাটা বাহাদুরপুর ভুবন মোহন কলেজিয়েট স্কুলের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করা হয়েছে। বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকালে স্কুলের অধ্যক্ষ মোঃ দাউদ হোসেনের বাস ভবনে এ প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।
অসুস্থ অধ্যক্ষ দাউদ হোসেন ও তার পক্ষে তার কন্যা নাদিরা সুলতানা তিথি সাংবাদিকদের উদ্যেশ্যে কথা বলেন। তারা জানান, গত ১৫ অক্টোবর অভিভাবক সদস্য পদে সুষ্ঠু নির্বাচনের পর ১৭ অক্টোবর স্কুলের বর্তমান সভাপতি ইউএনও সাহেবের সাথে সভাপতি নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে তার কার্যালয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু জেলা পরিষদের নির্বাচনের কারণে বসা হয়নি। পরদিন তার কাছে গেলে তিনি সভাপতি নির্বাচনের ব্যাপারে মিটিং করার তার কোন এখতিয়ার নেই জানালে আমরা ১১.৩০ টার দিকে স্কুলে গিয়ে বসি এবং এমপি রুহুল হক সাহেবের সাথে মোবাইলে কথা বলি। তিনি ইউএনও সাহেবের কাছে যেতে বলেন। তার (ইউএনও) কাছে গেলে তার জরুরী কাজ আছে বলে বসেননি। ফেরার পথে উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করি। তিনিও ইউএনও সাহেবের নিয়ে কাজ করতে পরামর্শ্ব দেন এবং ইউএনও সাহেবকে মোবাইলে বিষয়টি দেখতে বলেন। কিন্তু তিনি রাজী না হওয়ায় এমপি সাহেবকে ফোন দিয়ে পরিস্থিতি জানাই। তিনি বলেন, আমি যে ডিও লেটার দিয়েছি তার সাথে আপনারা বসে যে নামের প্রস্তাব আসে সেগুলো আমার কাছে পাঠান। এরপর নবনির্বাচিত সদস্যরাসহ আমরা স্কুলে বসে কথা বলার একপর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান অফিসের আবু নাসিম উপস্থিত হয়ে এমপি সাহেবের ডিও লেটার দেয়। যাতে সভাপতি হিসাবে এবিএম মোস্তাকিমের নাম আছে। আলোচনাকালে অভিভাবক সদস্যরা ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক ডাবলু, বীরমুক্তিযোদ্ধা আঃ গফুর ও মোসলেমা খাতুন মিলির নাম প্রস্তাব করেন। দ্বাতা সদস্য এছমাইল হোসেন এবিএম মোস্তাকিমের নাম প্রস্তাব করেন। এপ্রস্তাব আসলে অন্যরা প্রস্তাব করেন প্রস্তাবকারী এছমাইল এর নামে মামলা আছে লিখতে হবে, সেটিও লেখা হয়। সংরক্ষিত মহিলা অভিভাবক সদস্য প্রথমে এমপির ডিও লেটারে মত প্রকাশ করে আবার উপর্যুক্ত ৪ জনের নাম প্রস্তাব করেন। শিক্ষক প্রতিনিধিরা কোন মতামত দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ সময় এমপি মহোদয়ের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি প্রস্তাব লিখে তাঁর হটসঅ্যাপসে পাঠাতে বললে পাঠানো হয়। তিনি কি সিদ্ধান্ত দেন জানতে বেলা ১ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত ফোন করলেও পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে শিক্ষা বোর্ডে ফোন করে পরিস্থিতি জানালে তিনি ২ দিন সময় দিয়ে বৃহস্পতিবারের মধ্যে সভাপতির প্রস্তাব পাঠাতে সময় বাড়িয়ে দেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয় এমপি সাহেবের সাথে কথা বলে তাদেরকে জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অধ্যক্ষ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পরিবারের সদস্যরা তাকে সাতক্ষীরা নিয়ে যান।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে এদিনই সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে অধ্যক্ষকে জড়িয়ে অযাচিত কথাবার্তা এবং অধ্যক্ষকে বর্ধিত নিয়োগদান নিয়ে অনাকাঙ্খিত কথা বলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হয়। কমিটি তাকে ২ বছরের জন্য শর্ত সাপেক্ষ বর্ধিত নিয়োগ দিয়েছে। শর্ত হলো এ সময়ের মধ্যে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ পাওয়া মাত্রই আমার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। কমিটির সভাপতি বর্ধিত চাকুরীর জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে আবেদন করলে তিনি সুপারিশ করেন, এরপর মহা পরিচালক সুপারিশসহ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছেন। অনুমোদন করলে বহাল থাকবো, না করলে ছেড়ে যেতে হবে। যতক্ষণ কোন উত্তর না পাওয়া যাবে ততক্ষন দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে এটাই নিয়ম। অধ্যক্ষের বক্তব্যে তিনি বিধি মোতাবেক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ ভাবে সকল কার্যক্রম করার চেষ্টা ও কার্যক্রম অব্যহত রেখেছেন বলে বেরিয়ে আসে।
অধ্যক্ষের কন্যা নাদিরা সুলতানা তিথি আরও বলেন, আমার পিতা কি অপরাধ করেছে যে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও অশালীন কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এমনকি হুমকী ধামকী ও চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। এতে তিনি শারীরিক ও মানসিক ভাবে খুবই অস্বস্তিতে আছেন। গতকাল থেকে তিনি খুবই অসুস্থ, উঠে বসতে কষ্ট হচ্ছে। তাকে ডাক্তার হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিলেও স্কুলের কারণে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। এভাবে অশালীন কথাবার্তা, হুমকী ও চাপ প্রয়োগ করার কারণে তার কোন ক্ষতি হলে দায় নেবে কে? প্রশ্ন তুলে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।