দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে; সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। আক্রান্তের ঊর্ধ্বমুখী ধারা বর্তমানে এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, গত মঙ্গলবার একদিনে সবোর্চ্চ ৯০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রোগীর চাপে রাজধানীতে কোনো হাসপাতালেই বিছানা ফাঁকা নেই। জানা গেছে, হাসপাতালগুলোতে আলাদা ডেঙ্গু ইউনিট চালু করার কথা বিবেচনা করছে কর্তৃপক্ষ। আমরা মনে করি, এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এ বছর যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে পারে, তা কয়েক মাস ধরেই আলোচনায় আসছিল। বিশেষজ্ঞরা বারবার কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞদের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করেছে তা কতটা পর্যাপ্ত ছিল, এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের জনবল স্বল্পতার বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসে। অপর্যাপ্ত সক্ষমতায় কর্তৃপক্ষ সারা দেশে মশক নিধনে যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাতে মানুষ কতটা সুফল পাবে, এটাও এক প্রশ্ন। ডেঙ্গু থেকে বাঁচার জন্য এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করা জরুরি। দেশের মানুষ সচেতন না হলে কেবল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে গৃহীত পদক্ষেপে এডিস মশা নির্মূল হবে না। কাজেই মশক নিধনে দেশবাসীকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজধানীর আয়তন দুই গুণেরও বেশি বেড়েছে। নতুন অন্তর্ভুক্ত এলাকায় এখনো ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সব সেবা কার্যক্রম চালু হয়নি। নতুন অন্তর্ভুক্ত এলাকায় সিটি করপোরেশনের সব ধরনের সেবা কার্যক্রম চালু না হলে উল্লিখিত সমস্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। বস্তুত ডেঙ্গুসংক্রান্ত আমাদের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কারণে রাজধানীর মশক নিধন কার্যক্রমে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসছে না। এ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। মশক নিধনে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাজে ফাঁকি দেওয়ার বিষয়টিও আলোচিত। এসব বিষয়ে যথাযথ মনিটরিং চালু না হলে মশক নিধনে কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জনে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। যেসব ওষুধ ছিটানো হয়, তাতে কী সুফল পাওয়া যায়, তা যাচাই করা দরকার। এডিস মশার হটস্পট নির্ধারণ করে এর উৎসস্থল নষ্ট করা গেলে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কমবে। যেহেতু একটি হটস্পট ধ্বংস করার পর নতুন নতুন হটস্পটের খবর পাওয়া যায়, সেহেতু সব স্থানে কার্যক্রম পরিচালনা করা না হলে কাক্সিক্ষত সুফল মিলবে না। এ বিষয়ে কাক্সিক্ষত সুফল পেতে হলে নিতে হবে সমন্বিত বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রচুর তরল খাবার ও জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ খেতে হয়। কোনোভাবেই অ্যান্টিবায়োটিক বা এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। ডেঙ্গু পজিটিভ হয়েও প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত না হলে পরে জটিলতা দেখা দিতে পারে। জটিলতা এড়াতে জ্বর হলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করা উচিত। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সব ডেঙ্গু রোগীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। বাড়িঘরের আশপাশে জমানো পানিতে যেন এডিস মশা বংশবিস্তার করতে না পারে সেজন্য জনসাধারণকে সচেতন থাকতে হবে। আমরা আশা করি, সবার সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।