মানুষের রূপচর্চা ও দৈনন্দিন ব্যবহৃত প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি হয় ভাতের মাড়, আটা, ময়দা দিয়ে। তাতে যোগ করা হয় রং ও কেমিক্যাল। দেয়া হয় বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি। পরে এসব প্রসাধনী কৌশলে সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন দোকানে ও বিউটি পার্লারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করেছে বহুবার। কিন্তু প্রতিবারই আইনের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেয়েছে। জামিনে বের হয়ে ফের একই কাজ করেছে। এসব অবৈধ ও ভেজাল প্রসাধনী কিনে ক্রেতারা হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। চর্মরোগেও আক্রান্ত হচ্ছে বলে খবরে প্রকাশ। অপরদিকে, একই অভিযোগ করেছেন বক্তারা গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আয়োজিত সভায়। তাতে সংস্থাটির ডিজি বলেছেন, ‘বর্তমানে যে আইন রয়েছে সেটি ২০০৯ সালের। আমরা নতুন আইনের খসড়া সরকারকে পাঠিয়েছি। কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সেটা ঠিক হলে নতুন আইন আসবে। কিন্তু শুধুমাত্র প্রসাধনী সামগ্রীই নয়, দেশের বেশিরভাগ পণ্যই নকল, ভেজাল, রাসায়নিক মেশানো ও মেয়াদোত্তীর্ণ। তথা মানহীন। এমনকি খাদ্য পণ্য এবং জীবন রক্ষাকারী ওষুধেরও বিরাট অংশ। উপরন্তু এসব পণ্যের অনেকগুলো রপ্তানিও হচ্ছে। তন্মধ্যে ধরাও পড়ে ফেরতও এসেছে অনেক। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। রপ্তানিও ঝুকির মধ্যে পড়ছে। এছাড়া, দেশের অসংখ্য মানুষ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভঙ্গুর ও খুবই ব্যয় বহুল। তাই চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে অনেক মানুষ অতি দরিদ্র হচ্ছে। সর্বোপরি বিপুল সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা সেবার বাইরেই থাকছে। এভাবে দেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অথচ নকল, ভেজাল ও রাসানিক মেশানো পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পন্য বিক্রির বিরুদ্ধে দেশে অনেক আইন আছে। উপরন্তু তা বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারী দপ্তর ও লোকবল রয়েছে। তথাপিও এ অবৈধ কর্ম অবাধে চলছে বহুকাল থেকেই! এতে দেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে-রোগ প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ করা অগ্রাধিকারযোগ্য। সর্বোপরি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, ব্যয়, মানুষের আর্থিক সক্ষমতা এবং দেশের উন্নতির কথা বিবেচনা করে রোগ প্রতিরোধের দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সে জন্য নকল, ভেজাল, রাসায়নিক মেশানো ও মেয়াদোত্তীর্ণ তথা মানহীন পণ্যের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে অবিলম্বে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও এ বছরের ‘বিশ্ব মান দিবস’ উপলক্ষে বলেছেন, সরকার জনগণের জন্য মানসম্মত খাদ্য ও পণ্য সরবরাহে বদ্ধপরিকর। কিন্তু বাস্তবতা অনুযায়ী এ কাজ সহজে হবে না। কঠোর পন্থা অবলম্বন করতে হবে। তথা মানহীন পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়কারী এবং এসব দেখভাল করার লোকদের মধ্যে যারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। উপরন্তু ধৃত অপরাধীরা যাতে সহজেই জামিনে মুক্তি না পায় এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের কঠোর শাস্তির জন্য বিদ্যমান আইন সংশোধন করে নতুন আইন প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ব্যবহারকারীদেরও উচিত পণ্য কেনা ও ব্যবহার করার আগে তা মানসন্মত কি-না তা ভাল করে যাচাই করে দেখা। এসব হলেই অচিরেই দেশবাসীর মানহীন পণ্য থেকে রক্ষা পাবে এবং অশেষ কল্যাণ হবে।