গত ১৭ অক্টোবর টিসিবি পরিবার কার্ডের (ফ্যামিলি কার্ড) মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে নিত্য পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। এর আওতায় কার্ডধরীরা মাসে একবার দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই লিটার মসুর ডাল, এক কেজি চিনি ও দুই কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারেন ৪৪৫ টাকা দিয়ে। খোলা বাজার থেকে এসব পণ্য কিনতে ৮৫০ টাকা লাগে। বাজারে এসব নিত্য পণ্য সহ অন্যান্য সব পণ্যের দাম বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ ঋণ করে ঘরের সম্পদ বিক্রি করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচেঁ থাকার চেষ্টা করছে। রাজধানীর ঢাকায় টিসিবি পরিবার কার্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে নিত্য পণ্য শুরু হলেও চট্টগ্রামে শুরু হয় নি। অনেকেই পণ্য কিনতে এসে খালি হাতে ফিরে গেছেন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এক গবেষনা প্রতিবেদনেও দেখা গেছে, গত ছ’মাসে মানুষের নিত্যপন্যের মূল্য বৃদ্ধির ভার বহন করতে পারছেন না। সাথে রোগ চিকিৎসা ব্যয়, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পরিবহন ব্যয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সবাই খুব চাপে রয়েছেন। গত আগস্ট মাসের তথ্য বলছে, ওই মাসে খাবার কিনতে ঋণ নিয়েছেন ৬৪ শতাংশ মানুষ।
শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশে^ই খাদ্য পণ্যের দাম ধু ধু করে বাড়ছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এবং কোভিড ১৯ মহামারির কারণে সারা বিশে^ই খাদ্যের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যপি দুর্ভিক্ষের আলামত দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মাঝেই গত ১৭ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২২ উদযাপিত হলো। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো খাদ্যের অপচয় নয়, যার যেখানে যতটুকু জমি আছে, তা চাষের আওতায় এনে খাদ্য উৎপাদন বাড়ান। সারা বিশ্বের যে দুর্যোগের আভাস আমরা পাঁচ্ছি, তা থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষিত করুন’।
বাংলাদেশে যারা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করেন, তাদের দু’মুঠো অন্ন যোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকার ৫০ লাখ মানুষের জন্য বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি। বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তার-পরও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এক কোটি মানুষকে টিসিবি পরিবার কার্ড দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তা বাড়িয়ে দু’কোটি করতে হবে। সারা বিশ্ব যখন নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, জমি কোনো অবস্থায় ফেলে না রেখে সেখানে যে কোনো খাদ্য পণ্য উৎপাদন করতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য, সুষম খাদ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা এখন সারা বিশ্বের মানুষের সময়ের দাবি।
সম্মিলিত ভাবে সারা দেশের জমি গুলো খাদ্য উৎপাদনের আওতায় আনা গেলে আমরা নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ক্ষুধার্ত বিশ্ববাসীর পাশেও দাঁড়াতে পারবো। আর তা না হলেও নিজেদের খাদ্য সংরক্ষণ করে নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা সংরক্ষণ করতে পারবো। এখন দেশে প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদ শুরু হয়েছে এবং খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। সে গুলো সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় হিমাগার তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। আপদণ্ডকালীন টিসিবি পরিবারের কার্ড সংখ্যা বাড়ানোর এবং মাসে দু’বার করে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সরবরাহ করা যেতে পারে।