রাজধানীর গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য রোধে সম্প্রতি কিছুসংখ্যক পরিবহণের বাস-মিনিবাসে চালু করা হয়েছে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা। পর্যায়ক্রমে সব পরিবহণের বাসেই এ ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। শুরুতে এ ব্যবস্থায় স্বস্তিবোধ করেছিলেন যাত্রীরা। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, পরিবহণ খাতের অন্য অনেক ব্যবস্থার মতো এ উদ্যোগও মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। উদ্যোগটি চালু হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো কোনো রুটে ই-টিকিটিংয়েও বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। উদাহরণস্বরূপ, যে দূরত্বে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা, সেই একই দূরত্বে এখন আদায় করা হচ্ছে ২০ টাকা, অর্থাৎ এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৫ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। আবার যেসব রুটে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে, সেসব রুটে বাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাত্রীরা মনে করছেন, বাসের এ সংকট সৃষ্টির উদ্দেশ্য ভাড়া বাড়ানো। এসব দেখে আমাদের আশঙ্কা, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের লোভ ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে নগর পরিবহণে ই-টিকিটিং সিস্টেমও কার্যত ব্যর্থ হতে চলেছে। সরকারের উচিত অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া। বস্তুত গণপরিবহণে এখনো ভাড়া নৈরাজ্য চলছে। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেক বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে বেশি ভাড়া। এ নিয়ে পরিবহনকর্মী ও যাত্রীদের মধ্যে বচসা লেগেই থাকে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেও কোনো কাজ হয় না। পরিবহণকর্মীদের কথামতো অতিরিক্ত ভাড়া না দিলে যাত্রীদের হেনস্তা করা হয়। সর্বশেষ ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডার জেরে এক যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। এ থেকে বোঝা যায় পরিবহন শ্রমিকদের ধৃষ্টতা কতখানি। এছাড়া প্রতিটি বাস-মিনিবাসে ভাড়ার চার্ট টানানোর কথা থাকলেও অনেক বাসেই তা দেখা যায় না। আবার যেসব বাসে তা দেখা যায়, সেখানেও রয়েছে ফাঁকি। তাছাড়া সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও অনেক বাসে আদায় করা হচ্ছে ১২-১৩ টাকা। সড়কে প্রকাশ্যে এমন ‘ভাড়া সন্ত্রাস’ চললেও এর বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেছেন, এসব নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং শৃঙ্খলা ফেরানো হবে। কিন্তু তারপরেও স্বস্তির চিহ্নমাত্রও দেখা যায়নি। প্রশ্ন হলো, গণপরিবহনে এ ভাড়া নৈরাজ্যের অবসান হবে কবে? গণপরিবহণে এমন নৈরাজ্য কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ নৈরাজ্যের অবসানে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।