মিড ওয়াইফ হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও পদোন্নতি পেয়ে মোর্শেদা খানম বর্তমানে সিনিয়র স্ট্যাফ নার্স। দায়িত্ব পালন করেন শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এএনসি/পিএনসি (এন্টি নেটাল কেয়ার ও পোষ্ট নেটাল কেয়ার) ইউনিটে। গর্ভবর্তী নারীদের ওজন গ্রহন, প্রেসার পরিমাপ এবং চেকআপসহ সংগৃহীত তথ্যাবলী রোগীর কার্ড ও রেজিষ্ট্রারে লিপিবদ্ধ করা তার কাজ।
তবে অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসা নিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা গর্ভবর্তী নারীদের জন্য চিকিৎসকের ভুমিকায় অবতীর্ন হয়েছেন নার্স মোরশেদা খানম। বিশেষজ্ঞসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চার (৪) জন গাইনী ও নারী চিকিৎসক থাকার পরও এন্টি নেটাল কেয়ার ও পোষ্ট নেটাল কেয়ার ইউনিটে তার কার্যক্রম চিকিৎসক সমপর্যায়ের। শিক্ষানবীশ ও স্বেচ্ছাসেবকসহ মিড ওয়াইফ দিয়ে নিজের কাজটুকু (দায়িত্ব) সারিয়ে নিলেও সিনিয়র এ সেবিকা রীতিমত এখন চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন সেখানে। চেকআপের পর গর্ভবতী নারীদের আলট্রাসনোগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষার পরামর্শ দানের পাশাপাশি প্রতিবেদন পর্যবেক্ষনও করছেন তিনি। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই সন্তান সম্ভবা এসব নারীদের জন্য চিকিৎসাপত্র ইস্যুসহ সেখানে এন্টিবায়োটিক পর্যন্ত লিখছেন এ নার্স।
গাইনী বিভাগের চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত সকলে বিধি বহির্ভুত এ ঘটনা অবগত হলেও অজ্ঞাত কারণে তারা চুপ করে আছেন। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে কেউ এমন বিষয়ে মুখ খুলছে না বলে নাম প্রকাশে কয়েকজনের দাবি। অভিযোগ গর্ভবর্তী নারীদের প্রয়োজনীয়/অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে কমিশন বানিজ্য চালু রাখতে মোর্শেদা চিকিৎসকের ভুমিকা পালন করছেন। আর এসবের মাধ্যমে অসংখ্য রোগীর অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধিসহ ব্যবস্থাপত্রে এন্টিবায়াটিক লিখে তাদের স্বাস্থ্য ঝুকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ।
অনুসন্ধানে দেখা যায় গত ৩ অক্টোবর এএনসি/পিএনসি ইউনিটে চিকিৎসা সেবা নিতে যায় হোসনেআরা খাতুন। এ সময় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না হয়েও নার্স মোর্শেদা প্রথম সন্তানের মা হতে যাওয়া রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেন। এ সময় রোগীর ওজন ও প্রেসার কম থাকার কারণে সেখানে তিনি লিপোফিট (আইভি) ৫০০ মিলি ইনজ্কেশন লিখে দেন।
উপজেলার রমজাননগর গ্রামের আজিবর রহমান জানান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পর স্ত্রী’র কিছু জরুরী পরীক্ষা পরামর্শ দিয়ে মোর্শেদা তাদেরকে ডক্টরস ডোর নামীয় ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে রিপোর্ট পর্যবেক্ষনের পর তিনি চিকিৎসাপত্র দিয়ে একমাস পরে স্ত্রীকে নিয়ে আবারও দেখা করার পরামর্শ দেন।
ভুরুলিয়া গ্রামের রাফিজা বেগম জানান নিজের জাঁ (ভাসুরের স্ত্রী)কে পর্যবেক্ষনের পর আলট্রাসনোগ্রামসহ কয়েকটি পরীক্ষা করোনার পর ব্যবস্থাপত্র দেন মোর্শেদা খানম। পরবর্তীতে নিজেদের পরিচিত অপর এক চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দেখে সেখান থেকে এন্টিবায়োটিক ওষুধ এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
অনুসন্ধানকালে জানা যায় এসব কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। বরং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এএনসি/পিএনসি ইউনিটে এসব এখন নিয়মিত চিত্র। চিকিৎসক না হয়েও একজন নার্স ব্যবস্থাপত্র প্রদান থেকে শুরু করে সেখানে এন্টিবায়োটিক যুক্ত করার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা দিচ্ছে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে। আর বিষয়টি উর্ধ্বতনদের জ্ঞাতসারে হলেও অজ্ঞাত কারণে তারাও বিষয়টি দেখেও না দেখার চেষ্টা করছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মোর্শেদা খানম জানান তার প্রশিক্ষন থাকায় তিনি চিকিৎসক না হয়েও ব্যবস্থাপত্র লেখার ক্ষমতা রাখেন। এমনকি পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রদানসহ তা পর্যবেক্ষন আর এন্টিবায়োটিক লেখার ক্ষেত্রে তার জন্য কোন বাধা না থাকার দাবি করেন ঐ নার্স।