গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের দূর্গমচর কুশাহাটায় মোস্তফা মুন্সী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই দূর্গম চরে সুবিধা বঞ্চিত হাজারো মানুষের বসবাস থাকলেও তারা রয়েছে অনেকটা অবহেলায়, সেখানে নাই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,নেই কোন চিকিৎসা ব্যাবস্থা। দীর্ঘদিন পর হলেও বিষয়টি চোখে পড়ে গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সীর। তাই এ দূর্গম ওই চরে নিজ নামে একটি প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে স্কুলঘর নির্মাণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
জানা যায়, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপের নাম কুশাহাটা চর। একদিকে দৌলতদিয়াঘাট অন্যদিকে শিবালয়,অপর দিকে পাবনা এর মাঝে পদ্মার বুকে জেগে ওঠা এক চরের নাম কুইশাহাটার চর।এই চরে হাজারো মানুষের বসবাস থাকলেও শিক্ষা স্বাস্থ্য সেবাসহ বিভিন্ন মৌলিক নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত রয়েছে এই চর বাসি। এখানকার কয়েকশ শিশুরা শিক্ষার সুযোগ থেকেও ছিলো বঞ্চিত। এখানকার শিশুদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে পায়ক্ট বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে ২০১৭ সালে একজন শিক্ষক দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল একটি প্রি প্রাইমারী স্কুল। যে স্কুলে শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও ছিল না কোন স্কুলঘর ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। তাই এখানকার শিশুদের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে নিজ নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করেন গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিল্পপতি আলহাজ¦ মোস্তফা মুন্সি। এ লক্ষ্যে এ একর জায়গা কিনে মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করে স্কুলঘর নির্মাণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান চৌধুরী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস পারভীন, গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার মজুমদার প্রমূখ।
স্থানীয় আবদুস সালাম মন্ডল জানান, একসময় এই কুশাহাটায় হাসপাতাল, পশু হাসপাতাল, স্কুলসহ রাস্তাঘাট সবই ছিল। ১৯৯৭-৮৮ সালের নদী ভাঙনে সে সবকিছুই পদ্মায় বিলীন হয়ে যায়। ২০১৪-১৫ সালে আবার চর জেগে ওঠে। আমরা অনেকেই আবার এখানে বসবাস শুরু করি। কিন্তু দীর্ঘ ৮/৯ বছর হয়ে গেলেও এখানে এখন পর্যন্ত কোন নাগরিক সুবিধা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা পায়াক্ট বাংলদেশ শিশুদের জন্য কোন মতে একটি প্রি প্রাইমারী স্কুল করলেও তা ছিলা নানা সমস্যায় জর্জরিত সেস্কুলের কোন ঘর ছিলোনা,খোলা আকাশের নিচে শিশুরা পড়াশুনা করতো,ঝড় বৃষ্টি হলে বন্ধ হয়ে যেতো বাচ্ছাদের পাঠদান। এখন উপজেলা চেয়ারম্যান মহোদয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার পাশাপাশি ডিসি মহোদয় স্বাস্থ্য সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা প্রদান করায় তারা অনেক খুশি। তবে এখানকার বাসিন্দারা প্রচুর পরিমানে গবাদি পুশু পালন করে থাকে। এ সকল গবাদি পশুর সু চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা নেই। তাই এ সকল গবাদি পুশুর সুচিকিৎসার দাবি জানান।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ মোস্তফা মুন্সি বলেন, সরকারী ভাবে বিভিন্ন নিয়ম-কানুন সম্পন্ন করে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা অনেকটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই আমি ব্যাক্তিগত ভাবে গোয়ালন্দের দূর্গম চর কুশাহাটায় একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে বেতন দিয়ে ৩/৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করব।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান স্কুল নির্মাণের কাজকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, স্কুলের একটি কক্ষেই কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরুর ব্যবস্থা করা হবে। তবে পশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তাই যাতে প্রতি সপ্তাহে একজন পশু চিকিৎসক চরবাসীর গবাদি পশুর চিকিৎসা প্রদান করে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে কথা বলা হবে।