বৈশ্বিক সমস্যার পাশাপাশি ডলার সংকটসহ নানা জটিলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। তৈরি পোশাক খাতে বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার অন্তত ২০ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামা কমার পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্য বিদেশে পাঠাতে শিপমেন্টও কমেছে ২২ শতাংশ। ৩০ শতাংশ অগ্রগতি হিসেবে আগস্ট মাসে বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ৭৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় বিভিন্ন দেশে। কিন্তু পরের মাসে রপ্তানি নেমে আসে ৩ হাজার ১৬১ মিলিয়ন ডলারে। অক্টোবর মাসে ৩ শতাংশ অগ্রগতিতে ৩ হাজার ৬৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হলেও বাতিল কিংবা ডেলিভারি স্থগিত রাখা হয়েছে আরও অন্তত ১ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্ততকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, গ্রীষ্ম-বসন্তে যে অর্ডারগুলো আসার কথা ছিল সে অর্ডারগুলো অনেক কম এসেছে। প্রায় ২০-২৫ শতাংশ কম অর্ডার বাংলাদেশে এসেছে। বিজিএমইএর আরেক সহসভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, রিকভারি হওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল সেটাও এখনো আমরা সামনের দিকে দেখতে পারছি না। জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি আমাদের কোনো অর্ডার বুকিং হয়নি। এ সেক্টরকে ধরে রাখার জন্যে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া কোনো উপায় নেই। ডলার সংকট কাটাতে সরকার আমদানিতে নিরুৎসাহিত করায় তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামাতেও। অক্টোবর মাসে ৯৭ হাজার ৫৩৮ কন্টেইনার আমদানি পণ্য এবং ৫৯ হাজার ৩৩১ কন্টেইনার রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডলিং করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। অথচ সেপ্টেম্বরে আমদানি কন্টেইনার ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার এবং রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার ছিল ৬৩ হাজার ৮০০ টিইইউএস। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এ বছর অমদানি রপ্তানি উভয়ই কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে বিলাসী পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে এটা হতে পারে। বন্দরের মতো আমদানি-রপ্তানি বিপর্যয়ের চিত্র বন্দরকেন্দ্রিক বেসরকারি অফডকগুলোতেও। গত দুই মাসে এখানে আমদানি পণ্যে ৩৩ শতাংশ এবং রপ্তানিতে ১৮ শতাংশ কমেছে। বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন শিকদার বিপ্লব বলেন, বফতানি খাতে যে কমতিটা দেখতে পারছি এটা কবে নাগাদ আগের অবস্থায় ফিরে যাবে, সেটা নিয়ে আমরাও সন্দিহান। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে সমস্যায় পড়ছেন। আবার বাংলাদেশি পণ্য কিনতে বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ না থাকায় রপ্তানি আয়েও সংকট তৈরি হচ্ছে।