জেলার ইসলামপুর উপজেলার যমুনার দ্বীপচর সাপধরী মডেল ইউনিয়ন ঘোষনার পর উন্নয়ন মুলক কাজের ছোঁয়ায় দিন-দিন পাল্টে যাচ্ছে এলাকার চিত্র। অতিসম্প্রতি যমুনা নদীর তলদেশে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হয়েছে ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ। দ্বীপচরে বাড়ি-ঘর,হাট-বাজারে বৈদ্যতিক আলোর ঝলখানিতে এ যেন অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনতলা বিশিষ্ট সাপধরী উচ্চবিদ্যালয় দৃষ্টি নন্দন ভবনসহ বেশ কয়েকটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,মসজিদণ্ডমাদ্রাসা নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া যমুনার দ্বীপচর সাপধরী মডেল ইউনিয়ন ঘোষনার পর ৩ কিলোমিটার সম্পুর্ণ পাকা রাস্তা এবং ৮কিলো মিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে আড়াই কিলোমিটার কাঁচারাস্তাসহ ৫টি বক্সকালভাট নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। মডেল ইউনিয়নবাসির জোরদাবী, স্বাধিনতার পরবর্তি ঐ ইউনিয়নে কোন পরিষদ ভবন হয়নি। তাই তারা তাদের ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ যমুনার দ্বীপচরে প্রবল বন্যায় আশ্রয় নেয়ার জন্য একটি মুজিবকেল্ল্যা-একটি বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণের জোরদাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসি।
জানাযায়,ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নটি ১৯৮০দশকের পরবর্তি যমুনা নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যায়। এসব এলাকার নদী ভাঙ্গা অসহায় মানুষ গুলো ভিটেমাটি সর্বস্ব হারিয়ে বিভিন্ন শহরে বন্দরে,রাস্তাঘাটে আবার অনেকেই অন্যের জমিতে খুপরি বেঁধে কোনমতে বসবাস করে আসছিল।বর্তমানে সেখানে আবার নতুন করে জেগে উঠা চরে হাজারও মানুষ পুনরায় বসতিস্থাপন করে বসবাস শুরু করেছেন। কিন্তুু সেখানে বসবাস শুরু করলেও দীর্ঘ ২৫ বৎসরের মধ্যে তাদের কোন যাতায়াতের রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি। ফলে ওইসব এলাকার মুমুর্ষ রোগি, শিশু ও বয়বৃদ্ধ, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতসহ কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয় করতে রাস্তা না থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
সম্প্রতি জেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ইসলামপুর উপজেলার সাপধরী ইউনিয়নটি একটি মডেল ইউনিয়ন হিসাবে বর্তমান সরকার ঘোষনা করেছেন। এ কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্য বর্তমান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ ফরিদুল হক খান দুলাল ইউনিয়ন বাসির দুঃখ কষ্ট দুর্ভোগ লাঘবের জন্য সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ, রাস্তাঘাট,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,মসজিদণ্ডমাদ্রাসা নির্মানের উদ্যোগে গ্রহন করেন। বর্তমানে চর দিঘাইর থেকে ইন্দুল্লামরী হয়ে ভাংবাড়ী কোদাল ধোয়া গ্রামের বকুলের খানের বাড়ী পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার নতুন রাস্তা মাটি কেটে ৫টি বক্সকালভার্ট নির্মানের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ মোট ২ কোটি ৫৬লাখ ৯৫৬টাকা ব্যয় ধরে একটি দরপত্র আহব্বান করে। ্ঐ দরপত্রের কাজটি বাস্তবায়ন করছে মের্সাস দূর্গা এন্টারপ্রাইজ দেওয়ানগঞ্জ।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখাগেছে কাজটি বাস্তবায়নে জন্য দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। যমুনার দূর্গম চরাঞ্চলে বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজসহ রাস্তা নির্মাণে মহতি উদ্যোগকে স্বাগতম জানিয়েছেন ইউনিয়নবাসি।
এ বিষয়ে সাপধরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহালম মন্ডল,ইউপি সদস্য মেহের আলী,ফেকু প্রামানিক, ভাংবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা বকুল মিয়া,সোনা আকন্দ,ইল্লামারীর বাসিন্দা আবদুল জলিল মাস্টার,কোদালধোয়া গ্রামের সৈয়দ মন্ডল,কাশারী ডোবার আজিজুর রহমান চৌধুরী বলেন,বিগত ২৫ বছর ধরে জেগে উঠা নতুন চরে বসতি স্থাপিত হলেও রাস্তার অভাবে কাঁদা মারিয়ে কিংবা ক্ষেতের তপ্তবালির উপর দু’পায়ে হেটে চলাচল ছাড়া কোন পথ ছিল না। তারা আরো বলেন, রাস্তার অভাবে গর্ভবতি নারী,মুমুর্ষ রোগির সুচিকিৎসার জন্য যাওয়ার পথে অনেকেই মৃত্যুর কূলে ঢুলে পড়ছে। এ ছাড়া শিশু ও বয়বৃদ্ধ সহ শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করা এমনকি তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তাই জমির মালিকগণ রাস্তা নির্মাণ জন্য সেচ্ছায় জমি ছেড়ে দিয়েছেন। তারা আরো উল্লেখ করেন বর্তমানে চর দিঘাইর থেকে ইন্দুল্লামরী হয়ে ভাংবাড়ী কোদাল ধোয়া পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তাটি সুন্দর ভাবে মাটি কাটা দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। রাস্তাটি বক্সকালভাটসহ নির্মাণ কাজ সন্তুষ্টজনক। এ রাস্তাটি নির্মাণ হলে এলাকার হাজারও মানুষ চরমদূর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে,এমনকি তাদের উৎপাদিত কৃর্ষি পণ্য ফসলের ন্যায্য মুল্য পাবে উল্লেখ করেন। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ইউপির সদস্যসহ এলাকাবাসীর জোর দাবী, স্বাধিনতার পরবর্তি ঐ ইউনিয়নে কোন পরিষদ ভবন হয়নি। তাই তারা তাদের ইউনিয়নে একটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনসহ যমুনার দ্বীপচরে প্রবল বন্যায় আশ্রয় নেয়ার জন্য একটি মুজিবকেল্ল্যা -বৃহৎ আকারে একটি বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র নির্মাণের জোরদাবী জানিয়েছেন।
অপরদিকে দুর্গা এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী,জেলা এফবিসিআইসির পরিচালক,বাবু শ্যামল চন্দ্র জানান,রাস্তা নির্মাণে যাবতীয় মালামাল যমুনা নদী পারাপার খুবই কষ্ট সাধ্য ও ব্যয় বহুল ব্যাপার। তবুও নির্মণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিতে অব্যাহত প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেন, রাস্তা নির্মাণ কাজ সন্তুষ্টজনক,সুন্দর অগ্রগতি হয়েছে। আশাকরি স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে।