বাঙ্গালির অস্তিত্বের মিলনস্থল গ্রন্থমেলা। প্রতি বছরই ‘অমর একুশে বইমেলা’ মুখরিত হয় হাজারো বই প্রেমী মানুষ ও শিশুদের পদচারণায়। ঠিক একই ভাবে এবারো সকাল থেকেই ছিল অভিভাবকসহ শিশুদের কলকাকলিতে মুখর মেলা প্রাঙ্গণ। শিশুদের প্রধান আকর্ষণ শিশুপ্রহর এবার মেলার এ অংশের নামকরণ হয়েছে শেখ রাসেলের নামে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণ (শিশু চত্বর) নান্দনিক রূপে সাজানো হয়েছে। স্টলগুলোতে রয়েছে শিশুদের বই। তবে অমর একুশে বইমেলায় দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে বাংলা একাডেমি ছুটির দিনগুলোতে শিশুদের নিয়ে বিশেষ আয়োজিত শুক্রবারের মেলার একটা অংশকে ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা দেওয়ায় অনেক অভিভাবক শিশুদের নিয়ে ভিড় করছেন। যদিও প্রতিবারই মেলায় শিশুদের জন্য থাকে বিশেষ আকর্ষণ ‘শিশু চত্বর’। এবারের মেলার মূল আকর্ষণ ছিল শিশুতোষ ধারাবাহিক ‘১২৩ সিসিমপুর’ চরিত্রগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় আসতে থাকে অভিভাবক ও নানা বয়সের শিশু-কিশোররা। এক স্টল থেকে অন্য স্টলে ঘুরে ঘুরে দেখছে নিজেদের পছন্দের বই। বাবা-মাও রাখছেন সন্তানের আবদার। কেউবা মেতে উঠেছে রঙপেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে। শিশু চত্বর উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও কলামিস্ট ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ সময় তিনি শিশুদের সঙ্গে আগত অভিভাবকদের বলেন, ভাত খাওয়ার সময় মোবাইল না দিয়ে মোবাইল থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে রাখার আহ্বান জানান। এছাড়াও শিশুদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার তাগিদ দেন তিনি। মেলায় আসা শিশু-কিশোরদের বইয়ের পছন্দের তালিকায় রয়েছে কমিকস, রূপকথা, গল্প, সায়েন্স ফিকশন, গণিত নিয়ে মজার খেলা ও ছড়ার বইগুলো। লেখকরা বলছেন, শিশুদের বই পড়তে দিতে হবে। সেটা যেকোনো ধরনের বই হতে পারে। তাহলে তাদের মেধার বিকাশ হবে। তারা বড় হয়ে নিজের দেশ, বড় বড় মানুষদের সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠবে। শিশুতোষ প্রকাশনা সংস্থা বাবুই-এর প্রকাশক কাদের বাবু বলেন, শিশু চত্বর এখনও সম্পূর্ণ করা হয়নি। কিছু কাজ বাকি আছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবার এখন পর্যন্ত ছোটদের জন্য দু'দিন শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে, এবারের বইমেলার শিশু কর্নার অন্য বছরের তুলনায় অধিক শিশু-বান্ধব হয়েছে জানিয়ে শিশু কিশোরদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন লেখক ও সাহিত্যিকরা। আর আশা করেন এবার একটি সুন্দর মেলা হবে। আর প্রকাশকেরা আশা করছেন, ছুটির দিনের মেলা জমে উঠবে বেশ। এ বিষয়ে অনুপম প্রকাশনীর প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ বলেন, দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় বইমেলার নানা পরিবর্তন দেখেছি। এর ধারাবাহিকতা এবারও আছে। মেলার আয়োজন এবার ব্যতিক্রম। দিন জুড়েই দেখা যায় পাঠক, লেখক ও প্রকাশকের আনন্দ সমাবেশ। দর্শনার্থী আর ক্রেতাদের ভিড়ে বিক্রি বাড়ায় উচ্ছ্বাস ছিল বিক্রেতাদের। নতুন বই কেনার উচ্ছ্বাসের সঙ্গে পছন্দের বই না পাওয়ার দুঃখ ছিল বই প্রেমীদের। তাই আনন্দে মুখর বিক্রেতারাও। তবে মেলা কর্তৃপক্ষদের থেকে আশা করছি যেসকল কাজ এখন বাকি আছে সে সকল কাজগুলো যথাদ্রুত সময়ে সম্পূর্ণ করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশের নজরদারি বাড়াতে হবে এবং সেই সাথে সকলকেও সতর্ক হতে হবে। অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণ মুখরিত হোক বাঙালির প্রাণের উচ্ছ্বাসে।