পূর্ব সুন্দরবনে হরিণ শিকারীদের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে শরণখোলা রেঞ্জের বনরক্ষীরা পৃথক ৬টি অভিযান চালিয়ে শিকারীদের কবল থেকে প্রয় ৪৬ কেজি হরিণের মাংস, চারটি চামড়া, হরিণধরা ফাঁদ ও বন্দুকের গুলি উদ্ধার করেছে। এ সময় ১০ চোরা শিকারীকে আটক করেছে বনরক্ষীরা। বন বিভাগ ও সিপিজি সদস্যদের তদারকি বৃদ্ধি করা হয়েছে। চোরা শিকারীদের প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে সুন্দরবনের পর্যটকদের আকৃষ্টকারী অপরূপ দৃষ্টিনন্দন মায়াবী চিত্রল হরিনের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সুন্দরবনে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকারের জন্য বরগুনার পাথরঘাটার চরদুয়ানী, জ্ঞানপাড়া, শরণখোলার সোনাতলা, পানিরঘাটসহ পার্শবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী শিকারীচক্র। ঐ চক্রের শিকারীরা জেলে বেশে মাছের পাশ নিয়ে সুন্দরবনে গিয়ে বনের গহীনে নাইলনের দড়ি দিয়ে তৈরী ফাঁদ পেতে হরিণ ধরে জবাই করে মাংশ বস্তায় ভরে বরফচাপা দিয়ে রাতের আঁধারে বন থেকে ফিরে আসে। পরে গোপনে বিভিন্ন স্থানে ৭/৮শ টাকা কেজি দরে বিক্রী করে। ক্রেতারা শিকারীদের আগে থেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে বুকিং দিয়ে রাখে। হরিণের এ মাংশ পাঁচার চক্রটি রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত সরবরাহ করে থাকে বলে সূত্রটি জানায়।
শিকারীরা শরণখোলা রেঞ্জের দুবলারচর, কচিখালী, চান্দেশ্বর, কটকা, সুপতি, টিয়ারচর, কোকিলমনি, আন্ধারমানিক সহ দূর্গম বনাঞ্চলে হরিণ ধরার ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে থাকে বলে সূত্র জানায়। শিকারীদের নাম পরিচয় এলাকায় অনেকটা ওপেন সিক্রেট। শরণখোলার পানিরঘাট সোনাতলা এলাকার শিকারী তানজের বয়াতী, শহিদুল, নান্না, জাকির মল্লিক, হাবিব হাওলাদারের নাম শোনা যায়।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারী দুবলার আলোরকোলের জামতলা থেকে ৮ কেজি হরিণের মাংস ও ফাঁদসহ ৫ হরিণ শিকারীকে আটক করে বনরক্ষীরা। আটককৃতরা হচ্ছে, রাজিব, প্রদীপ, ইউনুস, নওশের ও ইদ্রিস আলী। এদের বাড়ী রামপালের শ্রীফলতলা গ্রামে বলে জানিয়েছেন আলোরকোল ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার সাদিক মাহমুদ। ২৫ জানুয়ারী সুন্দরবনের নীলকমল ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা একটি ট্রলার ২০ কেজি হরিণের মাংস ও ২০ রাউন্ড গুলিসহ হিরো আকন নামে এক শিকারীকে আটক করে। আটক শিকারীর বাড়ী বরগুনার পাথরঘাটার তালতলী এলাকায়। ২৪ জানুয়ারী পাথরঘাটার হরিণঘাটা থেকে কোষ্টগার্ড ২টি হরিণের চামড়া উদ্ধার করে। ২৩ জানুয়ারী শরণখোলা ষ্টেশনের বনরক্ষীরা শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের তানজের বয়াতীর বাড়ী থেকে দুইটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ২২ জানুয়ারী সন্ধ্যায় সুন্দরবনের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের বনরক্ষীরা ডিমেরচর থেকে ১৫/২০ কেজি হরিণের মাংস ট্রলারসহ দুই শিকারীকে আটক করে। আটক শিকারীরা হচ্ছে পাথরঘাটার পদ্মা গ্রামের ইদ্রিস ও নিজাম। এর আগে ১৮ জানুয়ারী দুবলারচরের নারিকেলবাড়ীয়া থেকে বনরক্ষীরা ৫ কেজি হরিণের মাংসহ দুইজনকে আটক করে আদালতে চালান দিয়েছে।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ অফিসার মোঃ শামসুল আরেফিন বলেন শীতের সময় হরিণ শিকারীদের তৎপরতা বেড়ে যায়। সে কারণে এমনিতেই বন বিভাগের টহল জোরদার করা হয়। বর্তমানে বন বিভাগের পাশাপাশি বন সুরক্ষায় নিয়োজিত কমিউনিটি পেট্রোল গ্রুপ (সিপিজি) এর তদারকি বৃদ্ধি করা হয়েছে। চোরা শিকারিরা বনে ঢুকলেই এখন ধরা পরে। তালিকাভূক্ত চোরা শিকারিদের ধরার জন্য পুলিশ ও বন বিভাগের চেষ্টা চলছে।