‘নিরাপদ খাদ্য, সমৃদ্ধ জাঁতি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চাবিকাঠি’ প্রতিবাদ্য নিয়ে দু’ফেব্রুয়ারি জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস পালিত হলো। কিন্তু খাদ্য যথাযথ নিরাপদ করার জন্য বিশেষ কর্তৃপক্ষ থাকলেও খাদ্য নিরাপদ করার তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। বিশেষ করে রাস্তার খাবারের মান ও শুদ্ধতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। স্বল্পমূল্য ও মুখরোচক বলে স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবারের জনপ্রিয়তা রয়েছে। রাজধানী ঢাকায় অর্ধকোটি মানুষ প্রতিদিন এখন এ খাবার খাচ্ছেন। অথচ প্রায় ৯০ শতাংশ রাস্তার খাবারে ক্ষতিকর জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে। রাস্তার এসব খাবার বিপজ্জনক মাত্রায় টোটাল কলিফর্ম ও ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এ ব্যাকটেরিয়া মূলত প্রাণীদের মল-মূত্রে থাকে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের গবেষণায় রাস্তায় খাবারের নমুনায় প্রতি গ্রামে ১ হাজার ১০০ টির বেশি টোটাল কলিফর্ম ও ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। অথচ প্রতিগ্রাম খাবারে ৩০ টির ওপর এ ব্যাকটেরিয়া থাকা বিপজ্জনক। মানুষের শরীরে তা প্রবেশ করলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হবে। ডায়রিয়া কলেরা থেকে শুরু করে নানা ধরনের রোগ বালাই সৃষ্টি হতে পারে। ঢাকায় রাস্তায় ভাত, পোলাও থেকে শুরু করে স্ন্যাকস, চাইনিজ সবকিছুই পাওয়া যায়। মানের দিক দিয়ে নিরাপদ না হলেও স্বল্প আয়ের মানুষজন এসব খাচ্ছেন দেদারসে। অবশ্য সখ করেও অনেকে এসব খাবার খেয়ে থাকেন।
বিশ্বের অনেক দেশেই রাস্তার খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হয় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে। বিশ্বের অনেক দেশে পর্যটনের বিকাশে সেখানকার রাস্তার খাবারের ভূমিকা রয়েছে। সাশ্রয়ী হওয়ায় বিশ্বজুড়ে পর্যটকেরা রকমারি খাবারের স্বাদ নিতে রাস্তার খাবার বেছে নেন। জাপানের টোকিও, মরক্কোর মারাকেশ, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি, মিশরের কায়রো, ইন্দোনেশিয়ার বালি, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, ভিয়েন নামের হো চি সিন সিটি থেকে শুরু করে ভারতের মুম্বাই ও কলকাতার রাস্তার খাবার এসব দেশে তো বটেই অন্য দেশ থেকে সেখানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদেরও অন্যতম আকর্ষণ। আর তা স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে রান্না ও পরিবেশন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো।
২০১৫ সালে ‘নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩’ বাস্তবায়নে ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সরকার। ‘জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য’ রূপকল্প সামনে রেখে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এ বিভাগের দায়িত্ব হচ্ছে, খাদ্যের বিশুদ্ধতা ও বিচারিত কার্যক্রম পরিচালনা করা। কিন্তু রাস্তার খাবারের মান নিয়ে এ কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যক্রম এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ‘ইমপ্রুভিং ফুড সেফটি ইন বাংলাদেশ ’ প্রকল্পের আওতায় ২০১৫ সালে আইসিডিডিআরবি’র সাথে একটি জরিপ পরিকল্পনা করে। তাতে দেখা যায়, ঢাকায় ১০ হাজারেরও বেশি রাস্তার খাবার বিক্রেতা আছেন। এসব বিক্রেতার নিবন্ধন করা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসম্মত ভ্যানগাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয় নি। তবে ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে পরীক্ষামূলক ভাবে ‘স্ট্রিট ফুড ভ্যান নামে একটি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ঢাকার দু’সিটি করপোরেশন এলাকায় কাঁচ দিয়ে ঘেরা ৪০০ ভ্যান বিতরণ করা হয়। বিতরণ করা প্রতিটি ভ্যানে রান্নার জন্য চুলা, হ্যান্ড গ্লাভস, সাবান, জীবাণুমুক্ত পানির জন্য বিশেষ প্রযুক্তির ফিল্টারসহ আধুনিক খাবার তৈরির যাবতীয় ব্যবস্থা ছিল। ভ্যানের গায়ে লিখা ছিল ‘সৌজন্যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খাদ্য মন্ত্রণালয়’। কিন্তু এ প্রকল্প তেমন কাজে আসে নি। অনেক ভ্যান মালিকই চারপাশের কাঁচ খুলে ফেলেছেন। এখন ভ্যান গুলো কোথায় কি অবস্থায় আছে তা কেউ জানেন না।
খাদ্য নিরাপত্তার মতো র্স্পশকাতর একটি বিষয় কি ভাবে ব্যথ হয়ে গেলো তা নিয়ে গবেষণা না করে, রাস্তার খাবার কতটা নিরাপদ তা মনিটরিং না করে শুধু শুধু দিবস পালন করলে কি কাক্সিক্ষত ফল মিলবে? নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ শুধু ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে থাকলে কি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টি করতে পারবে?