সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, দেশের সর্বত্র ডলার ও জ্বালানির তীব্র সংকটে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পুস্তক প্রকাশনা, মুদ্রণ, পত্রিকাশিল্প, ছাপাখানা, প্যাকেজিং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও কর্মীদের কর্মসংস্থান পড়ছে মারাত্মক ঝুঁকিতে। তবে দেশীয় কাগজ কলগুলোর উৎপাদনে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কাগজের দাম লাগামছাড়া হওয়ায় একদিকে কাগজের পাইকাররা দোষ চাপাঁচ্ছে মিল মালিকদের ওপর, অপরদিকে মিল মালিকেরা বলছেন বিশ্ব বাজারে কাগজ তৈরির মন্ড বা ভার্জিন পালের দর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়াসহ দেশে জ্বালানি সংকট ও কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চমূল্য বৃদ্ধির কথা। যার কারণে বাজারে কমেছে কাগজের সরবরাহ এবং বেড়েছে কাগজের মূল্যবৃদ্ধি। কাগজের মূল্য বৃদ্ধির ফলে ছাপাখানা, প্রকাশনী, বিপণীকেন্দ্র আর ফটোকপির দোকানগুলোতে চলছে হাহাকার।
কাগজের কারখানা মালিকদের থেকে যানা যায়, ইতোমধ্যে অনেক কাগজ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। শুধু তাই নয়, চলমান নানামুখী সংকটের মধ্যে উপদ্রবের নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী শিক্ষা উপকরণ। শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। করোনার অভিঘাতে ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের বাজারে যেখানে সংসার চালাতে টালমাটাল অবস্থা সেখানে সন্তানদের লেখাপড়া তো কাঁটা হয়ে বিঁধছে। দাম বেড়েছে সব ধরনের সৃজনশীল কিংবা সহায়ক বইয়ের। অন্য শিক্ষা উপকরণেও স্বস্তি নেই। আগে বিভিন্ন ভালোমানের একটি পেন্সিলের মূল্য ছিল ১৫ টাকা, যা এখন ২০ টাকা করা হয়েছে এবং রাবারের দাম হয়েছে দ্বিগুণ। বই, খাতা, কাগজ, কলম প্রায় সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের বাড়তি দামের এ বোঝা বইতে হচ্ছে অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও সকল শ্রেণীর মানুষদের। নতুন বছরের জন্য যা খুব সুখকর নয়।
এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি মধ্যবিত্তদের জন্য মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। কিন্তু শিক্ষা উপকরণের দাম বাড়ার বিষয়ে সেভাবে আলোচনায় আসে না। কেউ দেখেও যেন দেখছে না। সরকারেরও কোনো মাথাব্যথা নেই। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, সেই শিক্ষা অর্জন যদি ব্যয়বহুল হয় তাহলে নিম্নবিত্ত মানুষরা পড়াশোনা চালাতে নিরুৎসাহিত হবে এবং পড়াশোনা বন্ধ করার মতো সিদ্ধান্তও নিতে পারে অনেকে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই এসব শিক্ষা-সহায়ক পণ্যের ভ্যাট বা ট্যাক্স কমিয়েও যদি দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। এছাড়াও কাগজের অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট নিরসনে কাগজের অকেজো কারখানাগুলো চালু করা, কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ করা, কাগজের অপচয় রোধ করা, সিন্ডিকেটের কারসাজি বন্ধ করা, স্বল্প শুল্কে কাগজের কাঁচামাল আমদানি করাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে কার্যকরী পদক্ষেপের আহ্বান করছি।