মাটি কাটা, বালু তোলা, চাঁদাবাজি, দুর্নীত হটাতে গড়িমসি, লোক দেখানো নাটকীয়তা! সবই চললো কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ইউএনও আবদুল জব্বারের প্রশাসনিক সময়ে। দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর, ঘোড়ামারা, ঝাউদিয়া, কিশোরী নগর, শিতলাইপাড়া, হাকিমপুর, জগন্নাথপুর, ফিলিপনগর, গলাকাটি সহ আরও বেশ কিছু এলাকায় চলছে ভূপৃষ্ঠ কেটে খাল খনন। এসব মাটি ব্যবহৃত হচ্ছে ইট ভাটাসহ নানা বাণিজ্যিক প্রয়োজনে। কখনও দিনভর আবার কখনও বৈদ্যুতিক আলোয় সারারাত চলছে মাটি কাটা। বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে মাটি উত্তোলন ও বিক্রয় অপরাধ হিসাবে ঘোষণা রয়েছে। তবে, ভেকু মেশিনে কাটা মাটি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ নানা ধরনের গাড়িতে সরবরাহ হওয়ায় সড়কে ছড়িয়ে পড়ে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে, সারারাত মাটি কাটা ও মাটির গাড়ি আসা যাওয়ায় ভোগান্তি হচ্ছে, এসব জানিয়ে উপজেলার শিতলাইপাড়া ও আশপাশের এলাকাবাসী খোদ উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তার কাছে গিয়েও কোন সুরাহা পাননি বলে জানিয়েছেন। এমন ভোগান্তি উপজেলাটির প্রায় সব এলাকাতেই। নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, সকালে অফিস আদালত শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ সকাল ১০ টার পর মাটি কাটার অভিযোগ আসলে সেটি সমাধান হতে পারে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাটি কাটার বিষয়টি দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল জব্বার আমলে নেন না। এই সুযোগে হরদম চলছে মাটিকাটা আর জনগণের দুর্ভোগ। সরেজমিনে এলাকা ঘুরে জানা গেছে এইসব মাটি কাটা প্রসঙ্গে দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসন অবগত থাকলেও ব্যবস্থা নেন না। অভিযোগ রয়েছে ব্যবস্থা গ্রহনেও পক্ষপাতিত্বের। দৌলতপুরে পদ্মায় বালু উত্তোলনও আটকাতে পারেনি ইউএনও আবদুল জব্বার। জনশ্রুতি রয়েছে ইউএনও আবদুল জব্বারের গড়ে তোলা সিন্ডিকেট নানা অযুহাতে চাঁদা তুলে থাকেন বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের কাছে। বিভিন্ন সুবিধা দেয়া সহ উন্নয়ন ও আনুষ্ঠানিকতার নামে এইসব টাকা তোলেন ইউএনও এবং তার অফিসের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী দৌলতপুরে একই অফিসে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর কর্মরত মোঃ ওসমান আলী ও শিশির কুমার চাঁদা বাজির মুল হোতা, তারা কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদও গড়েছেন। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন চাঁদা দাতা ভূক্তভোগীর বক্তব্য পাওয়া গেছে। সিন্ডিকেট চালাতেই বিভিন্ন অনিয়মকে সুযোগ দিয়ে আসছেন দৌলতপুরের ইউএনও আবদুল জব্বার। গেলো বছরের নভেম্বরে বদলি আদেশ হয়ে গেলেও এখনও দৌলতপুরেই রয়েছেন ইউএনও আবদুল জব্বার। এই সময়েই দুটি আলাদা অনুষ্ঠান আয়োজনের বদৌলতে উপজেলা ব্যাপী টাকা উত্তোলন করেছেন তিনি ও তার সিন্ডিকেট। উপজেলা পরিষদ চত্বরে উন্নয়নের নামে ইতোমধ্যে অবৈধ ইট ভাঁটা গুলো থেকে দশ লাখ টাকা মূল্য মানের ইট নিয়েছেন ইউএনও। কোন কোন জায়গা থেকে নিয়েছেন নগদ টাকাও। পার পাননি বৈধ ব্যবসায়ীরাও। যদিও ওই উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে টিআর প্রকল্পের ৬ লাখ সরকারি টাকা নেয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও টাকা নেয়ার প্রয়োজন হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দৌলতপুরের ব্যাপক আলোচিত ঘটনা সমাজ সেবার ভাতা ভোগিদের ভাতা নিয়ে দুর্নীতি, গেলো বছরেই ওই দুর্নীতির তদন্ত শেষ হলেও তার অগ্রগতিতে গড়িমসি ইউএনও আবদুল জব্বারের। নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে সমাজ সেবার দুর্নীতি তদন্ত প্রতিবেদনে সমাজ সেবা কর্মকর্তা আতাউর রহমান দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তবে তার বেশকিছু সহযোগী রয়েছে বলেও আঁচ পাওয়া গেছে। সমাজ সেবা কর্মকর্তা একটি বিশেষ সুত্রে নিজেও স্বীকার করেছেন জালিয়াতি ও অনিয়ম দুর্নীতির কথা। দৌলতপুর উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে এই প্রতিবেদনে সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে নিশ্চিত চাকরী হারাতে হবে বলে তীব্র গুঞ্জন উঠেছে। এমতাবস্থায় দুর্নীতির ওই তদন্ত প্রতিবেদন উচ্চপদস্থদের পাঠাতে ও পরবর্তি ব্যবস্থা নিতে ইউএনও'র স্থবিরতা প্রসঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে। আরেকদিকে, দৌলতপুর থেকে বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যাওয়ার পর সীমন্তবর্তী বৃহৎ আয়তনের উপজেলাটিতে মাদক নির্মূলে সচেতনতা সৃষ্টি করার মতো কিছু আনুষ্ঠানিকতা শুরু করলেও তাঁর মাদকমুক্ত ঘোষণা করার বিষয়টি এবং হঠাৎ এই তৎপরতা কেবলমাত্র নিজের প্রচার-প্রসার বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই বলে মনে করছেন সুশীলসমাজ। এসব কেবলই নিজের (ইউএনও'র) ক্যারিয়ার ভারি করার নাটকীয়তা এবং জনগণ ও ডিপার্টমেন্টের ফোকাস ধরে রাখার চেষ্টা বলেও মন্তব্য করেন তারা। জানা গেছে আওতায় থাকা সরকারি দপ্তরগুলোকে প্রশাসনিক আমল জুড়েই নানা অনিয়মে সুবিধা দিয়ে আসছেন দৌলতপুরের ইউএনও আবদুল জব্বার। এইসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনও আবদুল জব্বার সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন।