পাবনা সদরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ টেবুনিয়া ওয়াছিম পাঠশালার (হাইস্কুল) বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে পুরস্কার দেয়ায় এবং ইউপি চেয়ারম্যানকে পুরস্কার না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ চেয়ারম্যানের অনুসারীরা অনুষ্ঠান চলাকালে মাইক ভাংচুর, তার ছিড়ে ফেলা ও প্রধান শিক্ষক, কয়েকজন শিক্ষার্থী এবং নাইটগার্ডকে বেধরক পিটিয়ে আহত করেছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে কয়েক দফায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আ স ম আবদুর রহিম পাকন, জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি খন্দকার আহমেদ শরীফ ডাবলু ও মালিগাছা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ মুন্তাজ আলীকে প্রধান ও বিশেষ অতিথি করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা এবং বক্তব্য দেওয়ার পর প্রধান অতিথি পাকন এবং বিশেষ অতিথি ডাবলু অন্য অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য চলে যান। যাওয়ার আগে ইউপি চেয়ারম্যান প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার বিতরণ করবেন এমনটি তারা বলে যান। এ সময় প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে অতিথিদের উপহার দেয়া হয়। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান থাকবেন জন্যই তাকে ওই সময়ে কোন পুরস্কার দেয়া হয়নি। এতে ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষুব্ধ হয়ে অনুষ্ঠান থেকে চলে যান। পরে তার অনুসারীরা লোহার পাইপসহ সশস্ত্র অবস্থায় এসে অনুষ্ঠান চলাকালে মাইক ভাংচুর ও তার ছিড়ে ফেলে। এ সময় ঢেকাতে গেলে তাদের এলোপাথারী মারপিটে স্কুলের নাইটগার্ড আবদুল আজিজসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থী গুরুতর জখম হয়।
বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের সভাপতি ও অভিভাবক সদস্য খন্দকার আতাউর রহমান বলেন, অনুষ্ঠান শেষে প্রধান শিক্ষক স্কুল থেকে বাসায় যাওয়ার সময়ে ইসলাম সাহেবের আড়তের সামনে পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা চেয়ারম্যানের পেটুয়া বাহিনী এসে প্রধান শিক্ষকের উপর হামলা করে বেধরক মারপিট করে। তার চিৎকালে আশপাশের লোকজন ছুঁটে আসলে পেটুয়া বাহিনী চলে যায়। পরে প্রধান শিক্ষককে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে ওই পেটুয়া বাহিনী খেলা চলাকালে বিশৃংখলা করলে তাদের শাসিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মালিগাছা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ মুন্তাজ আলী বলেন, এ অভিযোগ গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ ধরণের কোন ঘটনার সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বলেন, শুনেছি কিছু ছেলেপেলে খেলা দেখতে গেছিল। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আহমেদ শরীফ ডাবলুর ভাই খন্দকার আতাউর রহমান ও তার ভাই ভাতিজাদের সাথে কথাকাটাকাটি ও ঝামেলা হয়েছে। তারা কয়েকজনকে ধরে মারধরও করেছে। হয়তো এ বিরোধকে কেন্দ্রে করেই এই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। এখানে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাকে জড়ানো হচ্ছে। প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি কে পুরস্কার দিলেও তাকে তাৎক্ষণিক ভাবে দেয়া হয়নি এবং অতিথি তালিকায় নাম আগপাছ করানোর কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদ্যুত্তর দিতে পারেননি।
তবে একাধিক সূত্র বলছে, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিতে ঢোকা, আধিপত্য বিস্তার, শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দু’গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অনাকাংখিত ঘটনার সূত্র এই বিরোধগুলোকে ঘিরেই বলে দাবী স্থানীয় সূত্রের।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছে। জেনেছি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানে পুরস্কার নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে কোন পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।