গ্যাসের সংকট কাটাতে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ বাড়াতে দীর্ঘ আট মাস পর ফের স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করেছে সরকার। স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো এলএনজি কেনা হয়েছে। দুই কার্গো এলএনজি কেনায় পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে এক হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে এক কার্গো এলএনজি আসে, সেটি গত বৃহস্পতিবার জাহাজ থেকে আনলোড শেষ হয়। সেই এলএনজি এরইমধ্যে সরবরাহ শুরু হয়েছে পাইপলাইনে। এর ফলে এক দিনের ব্যবধানে সঞ্চালন লাইনে গ্যাসের সরবরাহ বেড়েছে ১০৫ মিলিয়ন ঘনফুট।
গত রোববার পেট্রোবাংলা মোট গ্যাস সরবরাহ করেছে দুই হাজার ৭০৩ মিলিয়ন ঘনফুট। এক দিন আগে শনিবার সরবরাহ করেছিল দুই হাজার ৫৯৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এ হিসাবে এক দিনের ব্যবধানে গ্যাসের সরবরাহ বেড়েছে ১০৫ মিলিয়ন ঘনফুট।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের স্পট মার্কেট থেকে কেনা ৬০ মেট্রিক টন এলএনজি দেশে এসেছে। আগামী ১১ মার্চ আরেকটি স্পট এলএনজি কার্গো বন্দরে ভিড়বে। আগামী জুন পর্যন্ত ১০-১২টি কার্গো আসার পরিকল্পনা রয়েছে পেট্রোবাংলার। পর পর কয়েকটি কার্গো আসার কারণে সঞ্চালন লাইনে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে। এরইমধ্যে সরবরাহ বাড়ানো শুরু হয়েছে।
দেশে এলএনজি আমদানির দায়িত্বে আছে পেট্রোবাংলার অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল)। আরপিজিসিএলের এলএনজি ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার শাহ আলম বলেন, বৃহস্পতিবার আনলোড হওয়া জাহাজটিতে ৬০ মেট্রিক টন এলএনজি ছিল, যা ৩০০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সমান। স্পট মার্কেট থেকে পরবর্তী কার্গো আসবে ১১ মার্চ। অন্য কার্গোগুলো আসার শিডিউল এখনো ঠিক হয়নি।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দেশে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ২০১৮ সালে কাতারের রাসগ্যাস থেকে এবং ২০১৯ সালে ওমানের ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার। এর বাইরে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি করা হয়। শিল্পণ্ডকারখানা বাড়তে থাকায় গ্যাসের চাহিদা মেটাতে ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে স্পট মার্কেট থেকে ৯ কার্গো এলএনজি আমদানি করেছিল সরকার।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, স্পট মার্কেট থেকে দুই কর্গো এলএনজি কেনা হয়েছে। এক কার্গো প্রতি মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ১৯.৭৪ ডলারে কেনা হয়েছে, এই এক কার্গোতে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা। আরেকটি কার্গো ১৬.৫০ ডলারে কেনা হয়েছে। এই কার্গোতে খরচ হচ্ছে ৭২০ কোটি টাকা।
বিশ্ববাজারে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকা এবং ডলারসংকটের কারণে গত বছরের জুলাই মাস থেকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ রাখে সরকার। এর প্রভাবে শিল্প, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও আবাসিকে গ্যাসসংকট দেখা দেয়। গ্যাসসংকটে অনেক শিল্পণ্ডকারখানার উৎপাদন প্রায় অর্ধেক কমে যায়। গ্যাসসংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভয়াবহ লোড শেডিংয়ে পড়ে দেশ। পরে ডিসেম্বরে শীত শুরু হওয়ায় গ্যাস ও বিদ্যুতের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়, যার ফলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে।
বর্তমানে বিশ্ববাজারের স্পট মার্কেটে প্রতি মিলিয়ন মেট্রিক ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজির দাম নেমে এসেছে প্রায় ১৫ ডলারের নিচে, যা গত দেড় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সামনে এলএনজির দাম আরো কমতে পারে বলেও পূর্বাভাস রয়েছে। এর আগে সর্বশেষ যখন গত বছরের জুনে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনেছিল বাংলাদেশ, তখন প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়েছিল ২৪ ডলার। জুন মাস থেকেই বিশ্ববাজারে দাম বাড়তে শুরু হয়, এরপর গত বছরের আগস্টে রেকর্ড ৬০ ডলারের ওপরে উঠে যায় স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম। এখন জ্বালানি পণ্যটির দাম নিম্নমুখী হওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে আবারও এলএনজি ক্রয় শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।