শিশুর মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং যৌবনে উত্তীর্ণ হলে সে সম্ভাবনা বিকাশের মাধ্যমে তা সমাজ গড়তে সাহায্য করে। কিন্তু শিশু শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক থাকে না। জাতীয় শিশু সনদের সংজ্ঞা অনুযায়ী ১৮ বছরের কমবয়সী সবাই শিশু। দেশের জনসংখ্যার শতকরা ৪৫ ভাগই শিশু। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বিশ্বে ১৬ কোটির মতো শিশুশ্রমিক রয়েছে। সারা বিশ্বের শিশুশ্রমিকদের মধ্যে শতকরা প্রায় ৫ জনই এশিয়ার। বাংলাদেশে শিশুশ্রমিকরা প্রায় ৩৪৭ ধরনের অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত। হোটেল থেকে শুরু করে লেগুনা হেলপার, ইট কিংবা কনস্ট্রাকশনের কাজে,হেন কাজ নেই যা শিশুদের দ্বারা করানো হয়না। শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো নতুন নয়। যে হাতে পড়ার বই থাকার কথা, জীবনের তাগিদে সেই হাতেই কাজের সরঞ্জাম তুলে নেয় কোমলমতি শিশুরা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও এখনো বিশ্বে বন্ধ হয়নি শিশুশ্রম। শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হবেনা, শিশুশ্রম সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করতে প্রয়োজন সুষ্ঠু নীতিমালা ও বাস্তবায়ন। দেশে দিনেদিনে বাড়ছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা যদিও দেশে রয়েছে শিশুশ্রম আইন,তারপরও কমছে না শিশুশ্রম। বাংলাদেশে বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্পকারখানাতেই শিশু শ্রমিক খুঁজে পাওয়া যায়। দেশে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির ফলে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কলকারখানায় কাজ করা শিশুরা রাসায়নিক পদার্থ ও দূষিত পরিবেশের সংস্পর্শে আসে। ফলে কম বয়সেই চোখের অসুখ, ফুসফুসের নানা সমস্যা, এমনকি ক্যানসারের মতো মরণরোগেরও শিকার হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও ইউনিসেফ পরিচালিত এক জরিপ থেকে দেখা যায় বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে প্রায় ৩০১ ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুরা বিরামহীনভাবে শ্রম দিচ্ছে দিনের পর দিন। শিশুশ্রম মূলত দারিদ্র্যেরই ফল। সংসারের অভাব-অনটনের কারণেই শিশুরা অল্পবয়সেই শ্রমিক হতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এ শিশুদের নূন্যতম বয়স ১৪ আর কিশোরদের বয়স ১৪-১৮ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ১৪ বছরের কম বয়সীদের কাজে নিয়োগ করা যাবে না। শিশুর অভিভাবক কাজ করানোর জন্য কারো সঙ্গে কোনো প্রকার চুক্তি করতে পারবেন না। এই আইন শুধু কাগজে কলমে দেখা যায় বাস্তবে এই আইনের প্রয়োগ খুবই কম দেখা যায়। এ সমস্যা দূরীকরণে সরকারি উদ্যোগ জরুরি। দারিদ্র্যতার পাশাপাশি অশিক্ষা, অনিশ্চয়তা আর অসচেতনতাও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। তাই সবার আগে প্রয়োজন সঠিক শিক্ষার প্রসার, সচেতনতা বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ। এছাড়াও প্রয়োজন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনা ও সামাজিক সচেতনতা। প্রতিটি পরিবারে যদি এই সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় তাহলে দেশে শিশুশ্রমিক সমস্যা দূরীকরণে বেগ পেতে হবে না। দেশের সরকারকে শিশুশ্রম আইনে সংশোধন এনে আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। শিশুশ্রমে উৎসাহ প্রদানকারীদের আইনের আওতায় এনে শিশুশ্রমকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। বাংলাদেশকে আগামী তিন বছরের মধ্যে শিশুশ্রম মুক্ত করতে ১৬টি মন্ত্রণালয় ও অনেক বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে। ফলে আশা করা যায় শিঘ্রিই বাংলাদেশ শিশুশ্রম মুক্ত দেশে হিসেবে পরিণত হবে।