শব্দ দূষণ এক ধরনের মারাত্মক পরিবেশ দূষণ। আমাদের সঠিক ধারণার অভাবে এই দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। মানুষ ও প্রাণিজগতের দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের উপর শব্দের বিরূপ প্রভাব শব্দদূষণ হিসেবে পরিচিত। মানুষ সাধারণত ২০-২০,০০০ হার্টজ সীমার মধ্যে শব্দ শুনতে পায়। এই সীমার বাইরে অতিরিক্ত জোরে শব্দ হলেই তা শব্দ দূষণ হিসেবে পরিগণিত হয়। শব্দ মূলত ডেসিবেলে (ডিবি) মাপা হয়। মানুষের কান যেকোনো শব্দের ব্যাপারে যথেষ্ট সংবেদী। তাই তীব্র শব্দ কানের পর্দাতে বেশ জোরে ধাক্কা দেয়, যা কানের পর্দাকে নষ্টও করে দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এর ক্ষতিকর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। শিশু বয়সে শব্দের অধিক তারতম্যের জন্য বৃদ্ধ বয়সে তাদের কানের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। দলগতভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে শব্দ দূষণের কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, যে সমস্ত অঞ্চলে দূষণের মাত্রা বেশি, সেখানে বিভিন্ন অসুবিধা বা ক্ষতিকর প্রভাব মানুষের মধ্যে পড়েছে যেমন, দূষণ প্রভাবিত এলাকার মানুষের মেজাজ খিটখিটে হচ্ছে, আচরণে অস্বাভাবিকতা ও মানসিক উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে, মানুষকে ক্লান্ত, অবসাদগ্রস্ত ও কাজে অমনোযোগী করে তুলছে, বয়স্ক মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাঁচ্ছে এবং এমনকি বধির হওয়ার মতো খবরও পাওয়া যাচ্ছে। শব্দ দূষণ শ্রবণশক্তি হ্রাসের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য এবং আচরণ উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যা সৃষ্টি করে। অপ্রয়োজনীয় এবং অতিরিক্ত শব্দ একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক কার্যকলাপকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান প্রায় সময়ই প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে থাকে। এর অন্যতম প্রধান কারণ শব্দ দূষণ। এই দূষণ এখন শুধু ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, তা পৌঁছে গেছে অন্যান্য শহরাঞ্চলেও। কলকারখানা, পরিবহন, নির্মাণকাজ, নির্বাচনী প্রচারণাসহ বিভিন্ন কাজে লাউডস্পিকার ব্যবহার, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত-ভাবে শব্দ সৃষ্টি করে কাউকে বিরক্ত করাকে শব্দ দূষণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে, যা রাজধানী ঢাকায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। পাশাপাশি এখন দেশের বিভিন্ন শহরাঞ্চলেও দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৬% মৃত্যু হয় পরিবেশ দূষণ-জনিত অসুস্থতার কারণে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী গড় মৃত্যুর হার মাত্র ১৬ শতাংশ। মূলত শব্দ দূষণ সমস্যাগুলো মানবসৃষ্ট। একটু সচেতন হলেই এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এজন্য আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও মানুষের প্রতি সহনশীল হতে হবে। অযথা হর্ন বাজানোর দরকার নেই, হাইড্রোলিক হর্ন এড়িয়ে চলতে হবে এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে উচ্চৈঃস্বরে গান বা যন্ত্র বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। নির্মাণ কাজে শব্দের সীমা বজায় রাখাটাও জরুরি। এসব সচেতনতাই পারে শব্দ দূষণের মাত্রাকে কমিয়ে আনতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে।