ডলার সংকট ও ডলারের বাড়তি দাম নিয়ে দেশে বেশ কিছুদিন ধরেই অস্থিরতা চলছে। এর অজুহাতে প্রায় সবধরণের পণ্যের দামই বৃদ্ধি পেয়েছে। যারসঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে হৃদরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত সরঞ্জামের মূল্য। জানা যায়, পাঁচ মাস ধরে এলসি (ঋণপত্র খোলা) জটিলতায় হৃদরোগসহ অন্যসব চিকিৎসায় ব্যবহৃত আমদানিনির্ভর সার্জিক্যাল ডিভাইস সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়লে ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও এলসি খোলার ক্ষেত্রে সহায়তা পেতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ইতোমধ্যে চিকিৎসা যন্ত্রপাতির দাম শতকরা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির অনুমোদন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এলসি খোলার কাজ সম্পন্ন করেছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে-অতীতে হৃদরোগের চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সঙ্গে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর আলোচনা করলেও এবার তাদের কিছুই জানানো হলো না কেন? দুঃখজনক হলো, স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে গিয়ে দেশে অন্তত ৬৭ ভাগ মানুষ পকেট থেকে অর্থব্যয়ে বাধ্য হচ্ছে। এতে প্রতিবছর কমপক্ষে ৫ শতাংশ মানুষ সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়ছে, যা সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার পরিপন্থি। বস্তুত জীবনরক্ষাকারী রিং, পেসমেকারসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধিতে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির হৃদরোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। উপরন্তু তাদের মৃত্যুঝুঁকিও বেড়ে গেছে, যা মোটেই কাম্য নয়। অবশ্য ডলার ও কাঁচামালের দাম হ্রাস পেলে আমদানিনির্ভর এসব চিকিৎসা সরঞ্জামের মূল্য সমন্বয় করার আশ্বাস দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। আমরা আশা করব, প্রতিশ্রুতি রক্ষার ক্ষেত্রে অধিদপ্তর শতভাগ নিষ্ঠা ও সততার স্বাক্ষর রাখবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর পেছনে রয়েছে ১০টি সুনির্দিষ্ট কারণ, যার মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে হৃদরোগ ও স্ট্রোক। এ রোগে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে ১৫ দশমিক ২ মিলিয়ন মানুষ। আশঙ্কাজনক হলো, আমাদের দেশেও মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ হৃদরোগ ও স্ট্রোক। আজকাল মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসায় ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড প্রভৃতির প্রভাবে দেশে হৃদরোগ ও স্ট্রোকে মৃত্যুর হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে। দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার প্রায় ২৭ শতাংশ। জানা যায়, প্রতি হাজারে ১০ জন শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় সেবার গুণগত মান বৃদ্ধি করে হৃদরোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম ও ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি এগুলোর দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হবে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে গিয়ে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। এর মধ্যে চিকিৎসায় বাড়তি ব্যয় মরার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। তাই মানুষ বাঁচাতে হলে চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম কমানোর বিকল্প নেই।