রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত রাজধানীর মানুষ ভুগছে নিরাপদ পানি সমস্যায়। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে ভুগছে হাজারো মানুষ। ঢাকা ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির মান নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে। তার উপর ওয়াসার লাইনে সরবরাহকৃত অপর্যাপ্ত পানি, বেশ কিছু জায়গায় পানির স্তর নেমে যাওয়া এবং পানির অপচয় এই সঙ্কটের প্রধান কারণ। রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় এখন যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, তা ভয়াবহ দুর্গন্ধযুক্ত। ফুটিয়েও গন্ধ দূর করা যাচ্ছে না। পানির এমন পরিস্থিতিতে অনেকে ডায়রিয়াসহ নানাবিধ পেটের পীড়ায় ভুগছেন। ওয়াসার কাছে একাধিকবার যোগাযোগ করেও প্রতিকার পাঁচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। রাজধানীতে দৈনিক সর্বোচ্চ ২৫০ কোটি লিটার চাহিদা রয়েছে তার বিপরীতে ২৭৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের দাবি করছে ঢাকা ওয়াসা। সায়দাবাদ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট-১ ও ২ থেকে স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক পানি উৎপাদন হতো ৪৮ কোটি লিটার। বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৪২ কোটি লিটার। চাঁদনীঘাট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে স্বাভাবিক সময়ে ২ কোটি লিটার পানির উৎপাদন হতো, এখন ১ কোটি লিটার উৎপাদন হচ্ছে। ভাকুর্তা প্রকল্প থেকে স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক ১৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হতো। এখন দৈনিক ৪ কোটি লিটার কম উৎপাদন হচ্ছে। ফলে কমছেনা খাবার পানির সংকট। রাজধানীতে ১০টি ও নারায়ণগঞ্জে একটিসহ মোট ১১টি জোনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করে ঢাকা ওয়াসা। গরমের সময়ে রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা বাড়লেও ঢাকা ওয়াসার উৎপাদন কমেছে। পানির গাড়ির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ চাহিদামাফিক সেটাও সরবরাহ করতে পারছে না। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ১, ৩, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর জোনে পানির সংকট বেশি। এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওয়াসার এক শ্রেণির অসাধু কর্মচারী পানিবাণিজ্য শুরু করেছেন। এক গাড়ি পানির দাম ৫০০ টাকা হলেও দেড় হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে কোনো কোনো এলাকায়। এই পানি সংকটের কারণ খুঁজলে দেখা যায় রাজধানীর অনেক এলাকার পানির লাইন ভালো না। কখনো কখনো পানির লাইন ও স্যুয়ারেজ একাকার হয়ে যায়। স্যুয়ারেজের ময়লা পানির লাইনে ঢুকে ফলে পানি দুর্গন্ধময় হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের জনবিস্ফোরণ এ সমস্যার অন্যতম কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অধিক সংখ্যায় মানুষ রাজধানীমুখী হওয়ার কারণে নিরাপদ পানির সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই সমস্যা নিরসনে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমেই ওয়াসার লাইনে কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। সরবরাহকৃত পানির বিশুদ্ধতা সংরক্ষণে মনোযোগ দিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিরাপদ পানির জন্য বাজেট বাড়াতে হবে। বাজেটের বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। দূষিত পানি শোধন করে ব্যবহারের পথ খুঁজতে হবে। অপচয় রোধ কীভাবে করা যায় ও গভীর নলকূপের পানির পুনঃব্যবহার কীভাবে করা যায়, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। পানির অপর নাম জীবন তাই যে কোনো মূল্যে বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।